ট্রাফিক সংকেত লাল হলুদ ও সবুজ কেন?

আচ্ছা, তোমাদের কি কখনো মনে হয়েছে, ‘বাদামি সংকেতের অর্থ থামো বা নীল অর্থ চলো’ কেন হলো না? দেখা গেছে, এর পেছনে খুব ভালো একটা কারণ আছে। চলো জেনে নেওয়া যাক সেটা...

ট্রাফিক সংকেত ছাড়াও আমাদের জীবনে যেকোনো অবস্থায়ই আসলে লাল সংকেত মানে থামো আর সবুজ মানে চলো—এই নিয়মটা চলছে। ছোটবেলা থেকে আমাদের শেখানো হয়, লাল বিপদের প্রতীক। আশপাশে লাল দেখলে বুঝতে হবে, সামনেই বিপদ রয়েছে। আবার একইভাবে সবুজকে দেখানো হয় নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে। কিন্তু ট্রাফিক সংকেত হিসেবে ঠিক এ রংগুলোই কেন ব্যবহার করি আমরা? পথচলার নিত্যসঙ্গী এই বাতিগুলো অন্য কোনো রঙে রাঙানো হলো না কেন? মেজেন্টা বা ফিরোজাই বা কী দোষ করল?

তোমাদের জানিয়ে রাখি, রাস্তায় চলতে গাড়ির জন্য ট্রাফিক সংকেত তৈরির আগে এ ধরনের সংকেত বানানো হয়েছিল ট্রেনের জন্য। প্রথমদিকে রেল কোম্পানিগুলো থামার সংকেত দিতে ব্যবহার করত লাল রং। সাদা রং ব্যবহার করত চলার জন্য। সবুজ ছিল সতর্কসংকেত। বুঝতেই পারছ, এতে ট্রেনচালকেরা বেশ সমস্যায় পড়ে যেতেন। দূর থেকে একটা উজ্জ্বল তারা দেখে মনে হতো, চালককে হয়তো এগোতে বলা হচ্ছে। এ ধরনের বিভ্রান্তির কারণে পরবর্তী সময়ে কোম্পানিগুলো সবুজকে চলার সংকেত হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে এবং তা অপরিবর্তিত রয়েছে আজ অবধি।

লাল রং অনেক আগে থেকেই বিপদের সংকেত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গাড়ি আবিষ্কারেরও ঢের আগের ঘটনা তা। এর কারণ হলো লাল রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি বলে তা অন্যান্য রঙের তুলনায় বেশি দূরত্ব থেকে দেখা যায়। হলুদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনুযায়ী সেটাকে ব্যবহার করা হয় সতর্কসংকেত হিসেবে, কারণ তা লালের তুলনায় কম কিন্তু সবুজের চেয়ে বেশি।

কিন্তু বিশ্বাস করো আর না-ই করো, একবার হলুদকে থামার সংকেত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৯০০ সালের দিককার ঘটনা। তুলনামূলকভাবে কম আলোকিত স্থানে লাল রং দেখা কঠিন বলে হলুদ তখন ছিল বিপৎসংকেত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রযুক্তিজগতে ক্রমাগত উন্নতির মাধ্যমে ভালো মানের প্রতিফলক বস্তু আবিষ্কার করা হয় এবং তা ব্যবহারের মাধ্যমে হলুদকে সরিয়ে লাল হয়ে ওঠে বিপদের প্রতীক। তবে যেহেতু দিনের যেকোনো সময়েই হলুদ রং স্পষ্ট দেখা যায়, তাই এখনো অনেক স্কুলবাসে হলুদ রং করা হয়।

তাই এখন থেকে তুমি যতবারই ট্রাফিক সিগন্যালে অপেক্ষা করবে, তখন রংগুলোর ওপর বিরক্ত হবে না। অনেকটা পথ হাঁটতে হয়েছে ওই বেচারাদের।