তিন গোয়েন্দার সঙ্গীসাথি আর শত্রুমিত্র

তিন গোয়েন্দায় দুঃসাহসী কিশোর, মুসা আর রবিন ছাড়াও নানা চরিত্র সিরিজটির মাধুর্য বাড়িয়ে আসছে সেই জন্মলগ্ন থেকেই। এসব চরিত্রও কোনো অংশেই তিন গোয়েন্দার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

প্রেতসাধনা বইয়ের মাধ্যমে তিন গোয়েন্দায় আসা জিনার কথা তো আগেই বলেছি। আলফ্রেড হিচকক থেকেই ডেভিড ক্রিস্টোফার এসেছে এটাও তোমরা জেনে গেছ। ছোটখাটো শারীরিক গড়ন, কিন্তু বিরাট তাগড়া গোঁফের অধিকারী কিশোরের চাচা রাশেদ পাশাও পরিচিত একটা চরিত্র। এ চরিত্রটি এসেছে থ্রি ইনভেস্টিগেটরসের টিটাস জোনস থেকে। রাশেদ পাশারও রহস্য রোমাঞ্চের প্রতি ভীষণ ঝোঁক। তিনি একটি প্রাইভেট গোয়েন্দা সংস্থাও খুলেছিলেন, যার মাধ্যমে নিজেই বিভিন্ন কেসের সমাধান করতেন। মেরিয়ান পাশা বা মেরি চাচি চরিত্রটি এসেছে ম্যাথিল্ডা জোনস থেকে। সম্পর্কে চাচি হলেও কিশোর পাশাকে খুবই ভালোবাসেন নিঃসন্তান মেরি চাচি। তাই অপরিচিতদের কাছে কিশোরকে তিনি নিজের ছেলে বলে পরিচয় দেন।

খোঁড়া গোয়েন্দা বইতে ভিক্টর সাইমন চরিত্রটি আত্মপ্রকাশ করেছিল। তিনি পেশাদার প্রাইভেট গোয়েন্দা। তিনিও মাঝেমধ্যে তিন গোয়েন্দাকে কেস জোগাড় করে দেন। হেক্টর সেবাস্তিয়ান চরিত্র থেকে অনেকটা অদলবদল করে ভিক্টর সাইমনকে তৈরি করেছিলেন রকিব হাসান। গোয়েন্দা সাইমনের বাসায় কিম নামে এক ভিয়েতনামি রাঁধুনি থাকেন। তিনি মাঝেমধ্যেই উদ্ভট উদ্ভট সব রেসিপির খাবার রান্না করে মুসাকে দিয়ে চাখিয়ে দেখেন।

তিন গোয়েন্দার সবচেয়ে বড় শত্রুর নাম কী বল তো? ঠিক বলেছো! টেরিয়র ডয়েল ওরফে শুঁটকি টেরি। ধনী বাবার বখে যাওয়া ছেলে শুঁটকি টেরি পদে পদে তিন গোয়েন্দার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে সে নিজেই বারবার নাস্তানাবুদ হয়। তাতে হাসার পাশাপাশি বেচারা শুঁটকির জন্য করুণা না হয়ে যায়ই না। শুঁটকির চরিত্রটি এসেছে থ্রি ইনভেস্টিগেটরসের স্কিনি নরিস চরিত্রটি থেকে।

রকি বিচের পুলিশ চিফ ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচার তিন গোয়েন্দায় আরেকটি পরিচিত চরিত্র। ‘সবুজ ভূত’ রহস্য সমাধানের জন্য তিন গোয়েন্দাকে সবুজ কার্ড আর সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন তিনি। এ কার্ডের মাধ্যমে তারা রহস্য উদ্ঘাটনে গিয়ে পুলিশের সাহায্য পায়।

মিসরের ওমর শরীফও তিন গোয়েন্দার একজন জনপ্রিয় চরিত্র। মার্কিন আমেরিকান নেভি থেকে চাকরি ছেড়ে চলে এসেছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ওমর শরীফ। তারপর সিনেমায় স্টান্টম্যানের কাজ নেন এই দুর্ধর্ষ বেদুঈন। ডেভিস ক্রিস্টোফার তাঁকে জোগাড় করে দেন তিন গোয়েন্দার জলদস্যুর দ্বীপ অভিযানের সময়। ওমর ভাইকে নিয়ে জলদস্যুর দ্বীপ, গোপন ফর্মুলা, বিষাক্ত অর্কিড, দক্ষিণের দ্বীপসহ বেশ কটি দুর্দান্ত অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি রয়েছে।

গাঁয়ের পুলিশম্যান কনস্টেবল ওয়াগনার ফগর্যাম্পারকট। টকটকে লাল ফুটবলের মতো গোল চেহারা, মোটা নাকের ডগাটা সুপারির মতো ফোলা, নীল চোখ, কোমরে প্রচুর চর্বি, আটো করে আটা বেল্টের ওপরে ঠেলে বেরিয়ে থাকে পেট, এভাবেই পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে তাকে। ঝামেলা বইয়ে হাজির হওয়া ফগর্যাম্পারকটের কথায় কথায় ‘ঝামেলা’ বলে ওঠা প্রধান মুদ্রাদোষ। তিন গোয়েন্দাকে দুই চোখে দেখতে পারে না সে। তাদের কাজে বাগড়া না দিলে তার ভালো লাগে না। তবে তাকে টেক্কা দিয়ে সব সময় কিশোররাই জিতে যায়। প্রজাপতি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত তিন গোয়েন্দার শোভন সংস্করণ ‘তিন বন্ধু’ সিরিজের গ্রিন হিলস শহরের গল্পগুলোতে এই ঝামেলাকে দেখা যায়। ফগর্যাম্পারকটের ভাতিজা ববর্যাম্পারকট ওরফে বব তিন বন্ধু সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তবে তার চাচার মতো গোয়েন্দাদের কাজে ঝামেলা পাকায় না। উল্টো সে গোয়েন্দাদের ভালো বন্ধু।

এ ছাড়া মুসার খালাতো বোন ফারিহা, পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডের কর্মী ব্যাভারিয়ান দুই ভাই বোরিস চেকোমাসকি আর রোভার চেকোমাসকি, গ্রিন হিলসের পুলিশ চিফ ক্যাপ্টেন রবার্টসন, মুরব্বি কেরি, মুসার বাবা রাফাত আমান, রবিনের বাবা মিস্টার রজার মিলফোর্ড, জিনার বাবা-মা, গোল্ডেন ডোর সিটির সেই রাগী মেয়ে ডানা, আঙ্কেল ডিক কার্টার, হীরু চাচা, রহস্যময় প্রতিভাধর বিজ্ঞানী ডক্টর মুনসহ আরও অনেক চরিত্রই নানা সময় নানাভাবে তিন গোয়েন্দার অসাধারণ সব গল্পের মাঠগুলোকে রাঙিয়েছে। শুধু কি মানুষ? জিনার কুকুর রাফিয়ান ওরফে সবার প্রিয় রাফি, কিশোরের ছোট্ট স্কটিশ কুকুর টিটু এবং বাঘা, কথা কিংবা শব্দ শুনে হুবহু নকল করতে পারা মুসার সেই ভীষণ মজাদার তোতাপাখি কিকো ছাড়া তো তিন গোয়েন্দাকে কল্পনাও করা যায় না।