দুঃসাহসী কলম্বাসের সমুদ্র যাত্রা

পেছনের ঘটনা: এই অভিযানের জন্য অর্থকড়ি জোগাড় করতে ক্রিস্টোফার কলম্বাসকে আট বছরের বেশি সময় ব্যয় করতে হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ১৪৯২ সালে তিনি কাজটি শেষ করতে পেরেছিলেন। সে বছরের জুনে তিনটি জাহাজ, মালামাল বোঝাই আর ক্রু ঠিক করতে তিনি স্পেনের ছোট্ট বন্দর প্যালোসে গিয়েছিলেন।
নির্ভীক অভিযাত্রী: ক্রিস্টোফার কলম্বাস (১৪৫১-১৫০৬) এসেছিলেন ইতালির জেনোয়া বন্দর থেকে। অল্প বয়সেই তিনি সাগরে ভ্রমণ শুরু করেন। ১৪৭৭ সালে চলে আসেন পর্তুগালের লিসবনে। ১৪৮৩ সালে পর্তুগালে রাজা দ্বিতীয় জনকে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে এশিয়া মহাদেশের ভারতে পৌঁছার পরিকল্পনার কথা জানান কলম্বাস। কিন্তু রাজা জন তাঁর প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে তিনি স্পেনের রাজা ও রানির দ্বারস্থ হন। তাঁরাই কলম্বাসের এই অভিযানের খরচ জুগিয়েছিলেন।

‘তাড়াতাড়ি করো! আর এই গাঁটগুলো পিন্টার পাটাতনে তোলো! ওই দেখো, নিনা আর সান্তা মারিয়া যাত্রা শুরুর জন্য পাল তুলে দিয়েছে।’ ইতালিয়ান উচ্চারণে চেঁচালেন এক সাদাচুলো লোক।

‘ওই যে অ্যাডমিরাল কলম্বাস! আমাদের সব্বাইকে একেবারে খুন করে ফেলবেন, দেখো।’ জাহাজের ডেকের এক কর্মী বললেন।

‘ঠিক বলেছ’, তাঁর জাহাজের এক সঙ্গী পাশ থেকে জবাব দিলেন। ‘পুবে যাওয়ার জন্য নাকি জাহাজে করে পশ্চিমের দিকে রওনা দেবে? সত্যিই পাগলামি। ভারত নির্ঘাত এখান থেকে কমপক্ষে ১৩০০ লিগ পশ্চিমে। কোনো জাহাজ এ পর্যন্ত সাগরের যতটা দূর গিয়েছে, তার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি পথ। এই পাগলামো সফরের জন্য টাকাপয়সা দিতে রাজি করাতে রাজা আর রানির সঙ্গে ঠিক কী চালাকি করেছেন কলম্বাস?’

‘এতে কোনো চালাকি নেই।’ যোগ করলেন আরেকজন। ‘রাজা ফার্দিনান্দ আর রানি ইসাবেলার ধারণা, সেখানে অনেক সোনা পাওয়া যাবে। তা ছাড়া কলম্বাস নতুন যে দেশ আবিষ্কার করবেন, সেটার শাসক হবেন তাঁরাই। মনে রেখো, পুরো স্পেনে আমাদের অ্যাডমিরাল হচ্ছেন সবচেয়ে ভালো নাবিক। আমাদের কোনো ক্ষতি হবে না।’

এই সমুদ্রযাত্রার জন্য টাকা জোগাড় করতে গিয়ে দীর্ঘ আট বছর ক্রিস্টোফার কলম্বাসকে প্রায়ই এসব বিতর্কের মুখে পড়তে হতো। তবে দীর্ঘদিন শুনতে শুনতে তাঁর সবই সয়ে গেছে। এখন কিছুই গায়ে মাখেন না।

১৪৯২ সালের ৩ আগস্ট স্পেন থেকে কলম্বাসের নেতৃত্বে তিনটি জাহাজ রওনা হয়েছিল। দিনটি ছিল শুক্রবার। জাহাজ তিনটির মধ্যে ছোট্ট নৌবহর সান্তা মারিয়ায় ছিলেন কলম্বাস। তাঁর ধারণা ছিল, মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই জাহাজগুলো ভারতে, মানে এশিয়ায় পৌঁছে যাবে। তবে কোনো কারণে পৌঁছাতে আরও দেরি হতে পারে, সেই আশঙ্কায় তিনি ক্যানারি আইল্যান্ডে জাহাজ থামিয়েছিলেন। সেখান থেকে এক মাস চলার উপযোগী যথেষ্ট পরিমাণ খাবার ও পানি জাহাজে তুলে নিয়েছিলেন। সে বছরের ৬ সেপ্টেম্বর, তাঁরা পশ্চিমের দিকে যেতে আটলান্টিক মহাসাগরের এমন জায়গায় পৌঁছান, যার কথা সে সময়কার প্রচলিত কোনো মানচিত্রেও উল্লেখ ছিল না।

নতুন ফলমূল: নতুন পৃথিবীই নয়, সেখানে নতুন নতুন খাবার আবিষ্কার করেছিলেন কলম্বাস। এ অভিযানে তিনি যেসব দেশে গেছেন, সেখানে ইউরোপের চেয়ে ভিন্ন সবজি ও ফলমূল জন্মাতে দেখেছেন। নতুন পৃথিবী থেকে কলম্বাস ভুট্টা, মরিচ ও মিষ্টি আলু ইউরোপে নিয়ে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয়বারের অভিযানে তিনি ইউরোপে এনেছিলেন আনারস। এসব বিদেশি খাবার ইউরোপে বেশ দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

চোখের সামনে থেকে জলজ্যান্ত ডাঙা সরে যেতেই জাহাজের অনেক নাবিক ডুকরে কেঁদে উঠেছিলেন। তাঁদের সান্ত্বনা দিতে কলম্বাস নির্দেশ দিলেন, ৭০০ লিগের (৩৭৫ কিলোমিটার বা ২৩৩ মাইল) পর, ভারতে না পৌঁছা পর্যন্ত তাঁরা আর রাতে জাহাজ চালাবেন না। নাবিকদের শান্ত করতে এ ছাড়া তিনি আরেকটি সহজ কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। এসব কথা তিনি জাহাজের লগবুকে (জাহাজের দিনপঞ্জি) বর্ণনা করেছেন।

ক্রিস্টোফার কলম্বাস

‘এই দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় তাদের ভয় দূর করতে, আমরা প্রতিদিন যতটুকু পথ অতিক্রম করব, তার চেয়ে কম পথের হিসাব লেখার সিদ্ধান্ত নিলাম আমি। তারা যাতে না ভাবে যে স্পেন থেকে তারা এখন অনেক দূরে চলে এসেছে, সে কারণেই এ কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। অবশ্য শুধু নিজের জন্য আমি পথের দূরত্ব সঠিকভাবে গণনা করতাম।’

এসব কৌশলের ফল পাওয়া গেল একেবারে হাতে হাতে। তবে ওই সমুদ্রযাত্রার দুই সপ্তাহ পরই তাঁরা সারগ্যাসো সাগরে পৌঁছে যান। সেখানে সাগরের পানিতে ঘন হয়ে সামুদ্রিক আগাছা ভাসছিল। আগাছাগুলো এতই ঘন ছিল যে জাহাজ এগোচ্ছিল খুব আস্তে আস্তে। এমনকি এ ঘটনায় অনেক অভিজ্ঞ নাবিকও ভয় পেতে শুরু করেছিলেন।

অন্যদিকে জাহাজের কম বিশ্বাসীরা অধৈর্য হয়ে একটা বিদ্রোহ করার পরিকল্পনা আঁটছিলেন। অ্যাডমিরাল কলম্বাসকে সাগরে ছুড়ে ফেলে জাহাজ নিয়ে স্পেনে ফিরে আসার গোপন সিদ্ধান্ত নেন বিদ্রোহীরা।

‘তারা বলল, এক বিদেশির খামখেয়ালির কারণে তাদের জীবন বিপন্ন হতে বসেছে। এটা চরম পাগলামি ছাড়া আর কিছুই নয়।’ ২৪ সেপ্টেম্বর লগবুকে এ কথা লিখে রেখেছেন কলম্বাস।

তবে সৌভাগ্যক্রমে পরদিন সূর্য ডোবার পর, পিন্টার ক্যাপ্টেন মার্টিন পিনজন আনন্দে চিত্কার করে বললেন, ‘সামনে ডাঙা!’

সঙ্গে সঙ্গে জাহাজের নাবিকেরা বিদ্রোহের কথা ভুলে হুড়োহুড়ি করে জাহাজের মাস্তুলের ওপর উঠতে লাগলেন। সামনে ডাঙা দেখা যাচ্ছে বলে সেখান থেকে বলে উঠলেন তাঁরা।

এ খবর শুনে হাঁটু গেড়ে বসে ঈশ্বরকে বারবার ধন্যবাদ জানাতে লাগলেন কলম্বাস।

অবশ্য পরদিন ভোর হতে না হতেই নাবিকদের মনে আশার ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট রইল না। কারণ রাতের বেলা তাঁরা যেটা ডাঙা বলে ভেবেছেন, সেটা আসলে দিগন্তে ঝোড়ো মেঘের একটা রেখা ছাড়া আর কিছুই নয়।

নতুন পৃথিবীতে কলম্বাসের অভিযান: নতুন পৃথিবীতে চারটি অভিযানে গিয়েছিলেন কলম্বাস। এগুলোর মধ্যে প্রথমটির যাত্রাপথ দেখানো ওপরের ছবিতে। তবে তিনি মেইনল্যান্ডে বা মূল ভূখণ্ডে পা রাখেননি। তিনি যে দ্বীপে নেমেছিলেন, সেটিকে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামে ডাকতেন। কারণ তাঁর ধারণা ছিল, তিনি এশিয়ায় পৌঁছেছেন। কিন্তু তিনি আসলে জ্যামাইকা, কিউবা, হাইতি ও অন্যান্য দ্বীপ আবিষ্কার করেছিলেন। আর ১৪৯৮ সালে তাঁর তৃতীয়বারের সমুদ্র অভিযানে তিনি পৌঁছেছিলেন পানামা উপকূলে।

এ ঘটনার আরও দুই সপ্তাহ পর, তাঁরা সত্যিকারের ডাঙার কিছু কিছু চিহ্নের দেখা পেয়েছিলেন। সেদিন ধাতব কিছু দিয়ে মাথা মোড়ানো একটা ছড়ি সাগরের পানিতে ভাসতে দেখলেন তাঁরা। পাশাপাশি তাঁদের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেল একঝাঁক স্থলচর পাখি।

এ সময়ের এক রাতে কলম্বাস ভেবেছিলেন, তিনি অনেক দূর থেকে আলো দেখতে পেয়েছেন। এ ঘটনা সম্পর্কে তিনি পরে উল্লেখ করেছেন এভাবে, ‘ডাঙার দেখা পাওয়ার জন্য খুবই উদগ্রীব ছিলাম আমি। কিন্তু নিজের ইন্দ্রিয়ের ওপরও ভরসা করতে পারছিলাম না।’

তবে পরের ঘটনা বিচার করলে মনে হয়, কলম্বাস ভুল দেখেননি। কারণ ভোর দুইটায় পিন্টা নামের জাহাজ থেকে কামানের গোলা ছোড়া হলো। কারণ আগে থেকেই বলা ছিল, ডাঙা দেখা গেলে গোলা ছুড়ে সংকেত দিতে হবে।

পরদিন সূর্যের আলো ফুটতেই মাত্র ১৮ লিগ (১০ কিমি) দূরে খুবই সুন্দর একটি দ্বীপ দেখা গেল। সবুজ গাছের সারি দেখা যাচ্ছিল দূর থেকেও। আর দ্বীপটির চারদিকে প্রাকৃতিকভাবেই একটা হারবার গড়ে উঠেছে। সেটা এতই বড় যে সেই সময়ের ইউরোপের সব জাহাজ সেখানে এঁটে যাবে বলে মনে হলো নাবিকদের কাছে।

সান্তা মারিয়া থেকে একটা নৌকায় উঠলেন কলম্বাস। একদল নাবিক দাঁড় বেয়ে তাঁকে তীরের দিকে নিয়ে যেতে লাগলেন। পিন্টা আর নিনার ক্যাপ্টেনদ্বয় তাঁকে অনুসরণ করতে লাগলেন। সৈকতে নেমে তাঁরা মাটিতে একটি রাজকীয় পতাকা উত্তোলন করলেন। স্পেন থেকে নিরাপদে এখানে পৌঁছার জন্য প্রার্থনার আয়োজনও করা হলো। দ্বীপটির নাম রাখা হলো সান স্যালভাদর এবং এটার মালিকানা স্পেনের বলে দাবি করলেন তাঁরা।

এসব আয়োজন শেষ হতেই দ্বীপটির উত্সুক আদিবাসীদের গাছপালার পেছনে দেখা গেল। এই মানুষগুলো বেশ লম্বা, তাদের পা একদম সোজা বলে বর্ণনা করেছেন কলম্বাস। এদের মধ্যে কারও পেটেই চর্বি ছিল না বলেও উল্লেখ করেছেন কলম্বাস।

গোল্ড সভারিনস: সভারিনস নামের এই স্প্যানিশ সোনার কয়েনে রাজা আর রানির মুখ খোদাই করা। এঁরা সেই রাজা-রানি, যাঁরা কলম্বাসের অভিযানের জন্য অর্থ দিয়েছিলেন। তবে তাঁরা সোনা পাওয়ার যে প্রত্যাশা করেছিলেন, তা খুঁজে পেতে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন কলম্বাস।

তবে এসব আয়োজনের ফাঁকে এই অভিযানে আসার আসল কারণের কথা মনে পড়ল কলম্বাসের। নতুন দেশ জয় এবং মহামূল্য রত্ন আবিষ্কারই ছিল এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য। তাই সেখানে আর এক মুহূর্ত দেরি করলেন না কলম্বাস। স্পেনের রাজা ও রানির সঙ্গে তাঁর আগেই চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি মোতাবেক, এ অভিযানে সোনা, রুপা, মুক্তা, রত্ন এবং অন্যান্য যা পাওয়া যাবে, তার দশ ভাগের এক ভাগ পাবেন কলম্বাস।

তাই আবারও পাল তুলে চলতে শুরু করল জাহাজগুলো। সোনা আর রত্নের খোঁজে এবার জাপানের উদ্দেশে চললেন তাঁরা। কারণ, কলম্বাসের দৃঢ় বিশ্বাস, দিগন্তের ওপারেই জাপান।

কিন্তু কলম্বাস ও তাঁর সহযাত্রীরা কেউ কোনো দিনই জাপান খুঁজে পাননি। কারণ তাঁরা কখনোই এশিয়ায় পৌঁছাননি। আসলে তাঁরা সাগর পাড়ি দিয়ে বাহামায় পৌঁছেছিলেন। কিন্তু সেই সত্যি কথাটা তাঁরা জানতেন না। তাঁরা কিউবা দেখলেন, তারপর পুবের দিকে যাত্রা করে পরের দ্বীপের নাম দিলেন হিস্পানিওলা। বর্তমানে এ জায়গার নাম হাইতি ও ডমিনিকান রিপাবলিক। সেখানেই সান্তা মারিয়া বিধ্বস্ত হয়। তিনি কলোনি স্থাপনের জন্য প্রায় ৪০ জনকে সেখানে রেখে দেশের পথে রওনা হলেন।

১৬ অক্টোবর পিন্টা ও নিনা স্পেনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। এর এক মাস পর, একটা শক্তিশালী ঝড় এসে তাদের ওপর আছড়ে পড়ে। সাগরের দানবীয় ঢেউ দেখে নাবিকদের সবাই মৃত্যুর আশঙ্কা করছিলেন সে সময়।

সাগরে সলিলসমাধির আশঙ্কা করছিলেন স্বয়ং কলম্বাসও। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভয়, তিনি সাগরে ডুবে গেলে বিশ্ববাসী তাঁর আবিষ্কারের কথা কখনোই জানতে পারবে না। এই আশঙ্কায় তিনি তাঁর এই অভিযানের বর্ণনা একটা পার্চমেন্ট কাগজে ঝটপট লিখে ফেললেন। এরপর সেটি একটি ব্যারেলে ভরে সিলগালা করে সাগরে ভাসিয়ে দিলেন।

তবে পরে দেখা গেল, তাঁর এই সতর্কতার কোনো প্রয়োজন ছিল না। পিন্টা আর নিনা ভালোভাবেই দেশে ফিরতে পেরেছিল। আর দেশে ফিরে পুরোপুরি নায়ক বনে গেলেন কলম্বাস।

এর পরের ঘটনা...

এরপর কলম্বাস আরও তিনবার ওই ক্যারিবিয়ান এলাকায় অভিযানে গেছেন। তখনো তিনি নিশ্চিত ছিলেন, সেই এলাকাটা এশিয়ার পূর্ব উপকূল। তবে স্প্যানিশ রাজা ও রানি তাঁর কথায় বিশ্বাস রাখতে পারেননি। সে কারণে পশ্চিম দিক দিয়ে ইন্ডিয়া ও চীনের সমুদ্রপথ আবিষ্কারের জন্য কলম্বাস তাঁর প্রাপ্য পুরস্কারও কখনো হাতে পাননি। এরপর ১৫০০ সালের দিকে আরও অনেক দুঃসাহসী অভিযাত্রী সাগর পাড়ি দিয়ে আমেরিকার উপকূলে পৌঁছান। সে সময় এই অঞ্চল নিউ ওয়ার্ল্ড বা নতুন পৃথিবী নামেই পরিচিত ছিল সবার কাছে। কিন্তু এসবের ভিড়ে মানুষ প্রায় ভুলে যেতে লাগল নির্ভীক ও দুঃসাহসী ক্রিস্টোফার কলম্বাসের নাম।

গ্রেট অ্যাডভেঞ্চার অবলম্বনে