না, কখনো না

অলংকরণ: জুনায়েদ

ছোট ভাইকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরছিলাম। হাতে গোলাপি ‘হাওয়াই মিঠাই’। ও নিজেরটা শেষ করে আমার আমারটায় ভাগ বসানোর চেষ্টা করছে। এভাবে খুনসুটি করতে করতে এগোচ্ছিলাম। হঠাৎ খক খক কাশির শব্দ শুনলাম। এক লোক ধূমপান করছে। ভাইকে এ পাপগন্ধ শুঁকতে দিলাম না। অনেকটা ঘুরে বাসায় ফিরলাম। আসার পথে ফুলের দোকান থেকে ভাইকে রজনীগন্ধার স্টিক কিনে দিলাম। দরজা খুলতেই ও মাকে স্টিকটা উপহার দিল। মুহূর্তে ঘরে মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু ভাবছিলাম ওই লোকটার কথা।

সক্রেটিসের হত্যাকারীরা নিজেদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে না চাইলে হেমলকের বদলে তাকে ধূমপান করতে দিতে পারত। তাহলে হত্যাকারীরা বলতে পারত, সক্রেটিস আত্মহত্যা করেছেন। এক ঢিলে দুই পাখি মরত। সত্যিই ধূমপান আত্মহত্যার শামিল।

কেন ধূমপান

‘ধূমখোর’ একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘সিগারেট খান কেন?’ লোকটা হলুদ দাঁত বের করে হেসে বলেছিল, ‘টেনশান কমে। মনের ব্যথা কমে।’ ভাবছিলাম, যার গন্ধ নাকে ঢুকলে মনে হয় নাক জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যাবে, তা কীভাবে সূক্ষ্ম মনের কষ্ট কমাবে? হয়তো ধূমপানের বড় কষ্ট দিয়ে লোকেরা ছোট কষ্টগুলো চাপা দেয়।

ক্ষতি কী

ধূমপানে শরীরে ক্ষতি হয়। তামাকজাত দ্রব্যের ধোঁয়ায় থাকে বিষাক্ত নিকোটিন, যা কীটনাশক হিসেবেও ব্যবহূত হয়। নিকোটিন কষ্টদায়ক রোগের কারণ। ধূমপানের ফলে মেজাজ খিটখিটে হয়। এতে ধূমপায়ী পরিবার, সমাজ সর্বোপরি মানবতার সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যায়। সত্যিই নিজেকে কতভাবে না কষ্ট দেওয়া যায়।

ধূমপান আর আমার আমি

ছোট ভাইটা কিআর কমিকস পড়ে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। মাঝে মাঝে ওর ‘হাওয়াই মিঠাই’ খাওয়া গোলাপি ঠোঁটটা বেরিয়ে আসছে। জিবটাও গোলাপি দেখাচ্ছে। ভাইকে কাতুকুতু দিলাম, গোলাপি জিব একজন আরেকজনকে দেখিয়ে হাসাহাসি করলাম। ভাবলাম, ‘আচ্ছা, যদি কখনো সিগারেট খাই আর আমার ঠোঁট পুড়ে কালো আর দাঁত হলদে হয়ে যায়, তবে কি এভাবে প্রাণ খুলে হাসতে পারব?’ মন থেকে উত্তর এল ‘না, কখনো না’। তাই বলে দিচ্ছি, ‘আমি শুধু কোনো দিন নয়, কোনো সপ্তাহে, কোনো মাসে, কোনো বছরে, কোনো যুগে, কোনো শতাব্দীতে ধূমপান করব না আ...আ...আ. আ।’