নানা দেশের সামুরাই

সামুরাইয়ের নাম নেইমার। তলোয়ার হাতে দাঁড়ানো নেইমারের পোশাকটাও ব্রাজিলের পতাকার মতো। এমন সামুরাই চরিত্র দেখলে অবাক হওয়ারই কথা। অন্য রকম এই আয়োজন করেছেন ওয়ার্ল্ড ফ্ল্যাগস অর্গানাইজেশনের একদল শিল্পী। অলিম্পিকে অংশ নেওয়া দেশগুলোকে তাঁরা উপস্থাপন করেছেন মাঙ্গা ধাঁচের সামুরাই চরিত্রের মাধ্যমে। টোকিও অলিম্পিক উপলক্ষে নানা আয়োজন রয়েছে জাপানজুড়েই। বহু অপেক্ষার পর গত ২৩ জুলাই উদ্বোধন করা হলো টোকিও অলিম্পিক ২০২০-এর। বিশ্বব্যাপী মহামারি পরিস্থিতির ফলে অলিম্পিকের আসর বসতে দেরি হওয়ায় এ নিয়ে সবার মনে ছিল অন্য রকম উৎকণ্ঠা। কঠোর বিধিনিষেধের ফলে গ্যালারি ছিল জনশূন্য। অলিম্পিকের আকর্ষণীয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সবাইকে দেখতে হয়েছে টিভির পর্দায়। ঘরে বসে উপভোগে যেন কোনো কমতি না হয়, তাই জাপান দর্শকদের বিনোদনের জন্য করেছিল ভিন্ন সব আয়োজন। সবকিছুতেই তারা রেখেছে জাপানের সংস্কৃতির ছাপ। সে জন্য অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর ঐতিহ্য আর পতাকার কথা মাথায় রেখে সামুরাইগুলো এঁকেছে ওয়ার্ল্ড ফ্ল্যাগস অর্গানাইজেশন।

জাপানের ঐতিহ্যবাহী সামুরাই–যোদ্ধাদের অস্তিত্ব এখন আর নেই। তবে সামুরাই চরিত্রগুলো কমিকস, কার্টুন, চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই সবার কাছে পরিচিত। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৪টি দেশের আদলে সামুরাই চরিত্র আঁকা হয়েছে। শিল্পীরা তাঁদের আঁকা সামুরাই চরিত্রগুলোতে প্রতিটি দেশের পতাকার রং, বিশেষ নিদর্শন রাখার চেষ্টা করেছেন। যেমন সোনালিরঙা চুল, কটা নীলচোখা সামুরাই চরিত্র জাস্টিন প্রতিনিধিত্ব করে যুক্তরাষ্ট্রকে। মেক্সিকোর চরিত্রটির সঙ্গে রাখা হয়েছে সে দেশের পতাকার প্রতীক ইগল। চরিত্রগুলোর নাম দেওয়ার ক্ষেত্রেও বেছে নেওয়া হয়েছে প্রতিটি দেশের জনপ্রিয় বা পরিচিত কোনো নাম।

বাংলাদেশের সামুরাই সাকিব

যেমন বাংলাদেশের সামুরাইয়ের নাম সাকিব। সবুজ পোশাকের ওপর লাল রঙে লেখা ‘বাংলাদেশ’, হাতে খাপছাড়া তলোয়ারওয়ালা সামুরাই সাকিব জনপ্রিয় কাবাডি খেলোয়াড়। একটু এলোমেলো স্বভাবের হলেও কাবাডির সঙ্গে তলোয়ারের চাল দেওয়ায় তার থেকে পারদর্শী আর কেউ নেই। সাকিবের বেঙ্গল টাইগারের প্রতি অসীম ভালোবাসা। অবসর সময়টা সে বেঙ্গল টাইগার নিয়ে গবেষণা করে কাটায়। প্রিয় খাবার চিংড়ির তরকারি। শক্তিশালী সাকিবের দুর্বলতা একটাই—ভাজাপোড়া খাবার।

চিংড়ির তরকারি, ভাজাপোড়া খাবার, কাবাডি, বেঙ্গল টাইগার—সব মিলিয়ে সাকিব অনেকটাই বাংলাদেশকে উপস্থাপন করছে। প্রতিটি চরিত্র আঁকার আগে শিল্পীরা দেশগুলোর সংস্কৃতি, নিয়মনীতি সম্পর্কে গবেষণা করে জেনে নিয়েছেন ভালোভাবে। কিন্তু যে দেশ সম্পর্কে তাঁদের ধারণা কম, সেই দেশের সামুরাই চরিত্রটি নিয়ে টুইটার থেকে জনগণের মতামত চেয়েছে ওয়ার্ল্ড ফ্ল্যাগস অর্গানাইজেশন। টুইটারে বিভিন্ন পরামর্শে অনেকগুলো চরিত্রের ভুলগুলো শোধরাতে পেরেছেন শিল্পীরা। তাঁদের ওয়েবসাইটে প্রতিটি চরিত্রের সঙ্গে তাদের জন্মতারিখ, উচ্চতা, রক্তের গ্রুপসহ স্বভাবের ছোট বর্ণনাও দিয়েছেন। যে দেশের আদলে তৈরি চরিত্র, সে দেশের পতাকার ইতিহাসের বর্ণনাও আছে সেখানে।

প্রতিটি দেশকে সামুরাই–যোদ্ধাদের চরিত্রে উপস্থাপন করে বেশ সাড়া পেয়েছেন শিল্পীরা। বিভিন্ন দেশ থেকে শুভেচ্ছাবার্তা ও প্রশংসা কুড়াচ্ছেন তাঁরা। ভেনেজুয়েলা ও হন্ডুরাসের দূতাবাস থেকে তো যোগাযোগও করা হয়েছে শিল্পীদের সঙ্গে। ছবিগুলো প্রদর্শনের অনুমতি চেয়েছে দেশ দুটি। পুরো ব্যাপারটি টোকিও অলিম্পিকের প্রচারণার অংশ হলেও এর মাধ্যমে শিল্পীরা কিন্তু কোনো অর্থ উপার্জন করেননি৷ তাঁরা মনে করেন, এ আয়োজনের মাধ্যমে মানুষ যদি টোকিও অলিম্পিকের প্রতি আরও উৎসাহিত হয়, ঘরে বসে আনন্দ পায়, সেটাই তাঁদের সার্থকতা। সামুরাই–যোদ্ধারা যেমন বিভিন্ন দেশকে উপস্থাপন করেছে, তেমনি জাপানি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিও পৌঁছে গেছে পৃথিবীর কাছে। অলিম্পিকের এই আসরের প্রতিটি আয়োজনে জাপানের ছোঁয়া দর্শকদের বেশ আনন্দিতই করেছে।