নিউটনের রাজত্ব একটি বিভ্রান্তি এবং নেপচুনের উদয়

জগৎজোড়া তখন নিউটনের রাজত্ব। বিজ্ঞানের রাজ্যে একচ্ছত্র শাসন তাঁরই। পৃথিবীর জোয়ার-ভাটা থেকে শুরু করে গ্রহ-নক্ষত্র-ধূমকেতু—সবই তাঁর লিখিত আইন মেনে চলে। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ রাজত্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্রিটেন থেকে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে তার তত্ত্ব আর সমীকরণ পাড়ি দিয়েছে ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে। একে একে প্রশান্ত আর ভারত মহাসাগরও পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর অদম্য জয়রথ। কারণ, নিউটনের গতির তিনটি সূত্র আর মহাকর্ষ সূত্র দিয়ে কয়েক হাজার বছরের পুঞ্জিভূত রহস্যের সমাধান পাওয়া যেতে লাগল। শুধু কি তাই, আলো নিয়ে তাঁর তত্ত্বও সবার চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দিয়েছিল। তাঁর ক্যালকুলাসের আবিষ্কারও খুলে দিয়েছিল সূক্ষ্ম হিসাব-নিকাশের নতুন জগত্।

কয়েক হাজার বছরের হিসাব ধরলে নিউটনের এই কালটাকে চোখের পলক ফেলার মতোই মনে হয়। তাই এমন প্রতাপশালী বিজ্ঞানীকে নিয়ে ১৮ শতকের কবি আলেকজান্দার পোপ লিখে ফেললেন স্তুতিমূলক এক কবিতা। ওই রাজদরবারে সভাকবিরা যেমন রাজার প্রতি গদগদ হয়ে কবিতা লেখেন, তেমনি আরকি। পোপ লিখলেন, ‘ঈশ্বর আদেশ দিলেন, নিউটন আসুক! তাতেই বিশ্ব আলোয় ভরে গেল।’ সত্যিই নিউটনের আবির্ভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের আদিম সব অন্ধকার দূর হয়ে গিয়েছিল। নতুন চোখে বিশ্ব দেখার উপায় বাতলে দিয়েছিলেন তিনিই। প্রাকৃতিক যেসব ঘটনা রহস্যময় বলে মনে হতো, সেসব খুব ভালোমতোই ব্যাখ্যা করতে পারছিল তাঁর তত্ত্বগুলো। কিন্তু এক শতক পেরোনোর আগেই হঠাত্ হোঁচট খেল নিউটনের মহা আবিষ্কার বলে খ্যাত মহাকর্ষ তত্ত্ব। ঘটনাটা খুলেই বলি।

জার্মান সুরকার উইলিয়াম হার্শেল। ১৭৫৭ সালে মাতৃভূমি ছেড়ে ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলেন। এক গানের স্কুল খুলে দিব্যি জমিয়েও দিলেন। গান ছাড়াও জ্যোতির্বিদ্যায় বেশ আগ্রহ তাঁর। সময় পেলেই রাতের আকাশে দুরবিন তাক করে চেয়ে দেখতেন। তবে কবিদের মতো শুধু আকাশ ভরা সূর্য-তারার সৌন্দর্য দেখেই মন ভরত না তাঁর। তিনি চিনতে চাইতেন আকাশের গ্রহ, তারা আর ধূমকেতুদের। সেগুলো নিয়ে গবেষণাতেই বেশি আগ্রহ। সময় পেলেই জ্যোতির্বিদ্যার বই সংগ্রহ করতেন, পড়তেন, আকাশপানে তাকিয়ে মিলিয়ে দেখতেন পর্যবেক্ষণের সঙ্গে। তার ছোট্ট দুরবিনটা তেমন শক্তিশালী ছিল না। ভালো মানের দুরবিন কেনার পয়সাও নেই। শেষে নিজেই একখানা দুরবিন বানিয়ে নিলেন হার্শেল। এভাবে আকাশের জানা-অজানা অনেক কিছুই তাঁর নখদর্পণে চলে এসেছিল। 

১৭৮১ সালের ১৩ মার্চের ঘটনা। সেদিন রাতে নিজের দুরবিনে আকাশে এক ছোট্ট ক্ষীণ আলো ছুটে যেতে দেখলেন। অনেকটা চাকতির মতো এক আলো বলে মনে হচ্ছিল বস্তুটিকে। হার্শেল বুঝলেন, ওটা আর যাহোক নক্ষত্র নয়। কারণ নক্ষত্ররা সব সময় বিন্দুর মতো আলো ছড়ায়। একবার ভাবলেন, ওটা বোধ হয় নতুন কোনো ধূমকেতু। নিশ্চিত হতে পারলেন না। পরের রাতগুলো অধীর উত্তেজনা  নিয়ে অজানা ওই বস্তুর দিকে চেয়ে থাকতে লাগলেন হার্শেল। ওটার গতিপথ অনুসরণ করে বোঝার চেষ্টা করলেন বস্তুটির প্রকৃতি। এক রাতে খেয়াল করলেন, চাকতির মতো ওই বস্তুটির কিনারা বেশ তীক্ষ। কিন্তু তখন পর্যন্ত গবেষণায় জানা ছিল, ধূমকেতুর কিনারা ঝাপসা হয়। তাহলে ওটা কী? আরও দেখা গেল, তারাদের সাপেক্ষে নতুন বস্তুটি বেশ ধীরগতির। আমাদের সৌরজগতে সূর্য থেকে কোনো বস্তু যত দূরে সেটি তারাদের সাপেক্ষে ততই ধীরগতিতে চলতে দেখা যায়। নতুন বস্তুটি শনি গ্রহের চেয়েও ধীরগতির বলে মনে হলো হার্শেলের কাছে। তাতে বোঝা গেল, বস্তুটি শনি গ্রহ থেকেও দূরে অবস্থিত। আবার তখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত শক্তিশালী দুরবিন দিয়েও শনি গ্রহ থেকে দূরে অবস্থিত কোনো ধূমকেতু দেখা সম্ভব ছিল না। তাই হার্শেল সিদ্ধান্ত নিলেন, ওটা নতুন গ্রহই হবে।

হার্শেলের কথাই যদি সত্যি হয়, তাহলে বলতে হবে, সেই প্রাচীন জ্যোতির্বিদদের পর ওটাই প্রথমবার নতুন কোনো গ্রহ আবিষ্কারের ঘটনা। গ্রহটি সূর্য থেকে প্রায় ১ হাজার ৭৮০ মিলিয়ন মাইল (২ হাজার ৮৬০ মিলিয়ন কিলোমিটার) দূরে। যা কিনা সূর্য থেকে শনি গ্রহের দূরত্বের প্রায় দ্বিগুণ। তাই প্রাচীন জ্যোতির্বিদেরা খালি চোখে গ্রহটি দেখতে পাননি। জ্যোতির্বিদদের মধ্যে বেশ বাদানুবাদের পর অবশেষে আকাশের নতুন বস্তুটি গ্রহের স্বীকৃতি পেল। ব্রিটেনের সে যুগের রাজা তৃতীয় জর্জের নামে গ্রহটির নাম জর্জিয়াম সাইডাস (জর্জের তারা) দিলেন হার্শেল। অন্য জ্যোতির্বিদেরা বললেন এর নাম হার্শেল হোক। নাম নিয়ে দুপক্ষের দড়ি টানাটানির মধ্যে জার্মান জ্যোতির্বিদ জোহান এলার্ট এক প্রস্তাব দিলেন। তিনি বললেন, আগের গ্রহগুলোর নাম যেহেতু প্রাচীন পুরাণের দেব-দেবীর নামে দেওয়া হয়েছে, সেই ধারাতেই নতুন গ্রহটির নাম হোক। যেমন বুধ গ্রহ বা মার্কারি হচ্ছে রোমান দেবতা জুপিটারের ছেলে। শুক্র বা ভেনাস সৌন্দর্যের দেবী। পৃথিবীর পরের গ্রহ মঙ্গল বা মার্স যুদ্ধের দেবতা। বৃহস্পতি গ্রহ বা জুপিটার আবার মার্সের বাবা। বৃহস্পতির পরেই শনি বা স্যাটার্ন, জুপিটারের বাবা। তাহলে নতুন গ্রহটি স্যাটার্নের বাবা হওয়াই বেশি যুক্তিযুক্ত। মানে ইউরেনাস। ব্যস, স্যাটার্নের বাবাকেই সবাই মেনে নিল, নতুন গ্রহটি হয়ে গেল ইউরেনাস। এর ছয় বছরের মধ্যে ইউরেনাসের দুটি উপগ্রহ আবিষ্কার করলেন হার্শেল। দিকে দিকে আগেই তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল। এবার আরও ছড়াল। ভালোই কাটছিল হার্শেলের দিন-রাত।

শিল্পীর তুলিতে ইউরেনাস গ্রহ আবিষ্কারক শখের জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম হার্শেল। পেছনে তাঁর ব্যবহার করা দুরবিন
শিল্পীর তুলিতে ইউরেনাস গ্রহ আবিষ্কারক শখের জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম হার্শেল। পেছনে তাঁর ব্যবহার করা দুরবিন

ইউরেনাস নিয়ে এদিকে দিন-রাত হারাম হয়ে গেল অন্য কজন জ্যোতির্বিদের। হিসাব কষে সূর্যের চারপাশে ইউরেনাসের গতিপথ বা কক্ষপথ নির্ণয় করা হলো। গ্রহগুলোর কক্ষপথ যে উপবৃত্তাকার, সেটি প্রথম ভেবেছিলেন জার্মান জ্যোতির্বিদ জোহানেস কেপলার, ১৫৯৬ সালের দিকে। অবশ্য এমনটি সত্যিই হতে পারে কি না, তা নিয়ে তাঁর খানিকটা দ্বিধাও ছিল। এর প্রায় ১০০ বছর পর নিউটন মহাকর্ষ তত্ত্ব দিয়ে গাণিতিকভাবে প্রমাণ করলেন—ওটাই সত্যি। মানে গ্রহগুলো সূর্যের চারপাশে বৃত্তাকার নয়, উপবৃত্তাকার পথে ঘুরছে। মহাকর্ষ তত্ত্ব বলে, মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুই পরস্পরকে আকর্ষণ করছে। বস্তুগুলোর ভর যত বেশি, তাদের আকর্ষণ বলও তত বেশি। আবার বস্তুগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব যত তাদের আকর্ষণ বলও তত কম। সেই হিসাবে ইউরেনাসের গতিপথ সূর্য এবং পার্শ্ববর্তী বড় দুটি গ্রহ বৃহস্পতি ও শনি দিয়েও প্রভাবিত হবে। এভাবে ইউরেনাসের একটি নির্ভুল গতিপথ নির্ণয় করতে চাইলেন জ্যোতির্বিদেরা। তাতে অন্য গ্রহগুলোর মতো বছরের যেকোনো সময় ইউরেনাস অবস্থান সঠিকভাবে জানা যাওয়ার কথা।

ফরাসি জ্যোতির্বিদ অ্যালেক্সিস বোভার ১৮২১ সালে পর্যবেক্ষণে দেখলেন, তত্ত্বের সঙ্গে ইউরেনাসের গতিপথ ঠিক মিলছে না। আসলে গাণিতিকভাবে ইউরেনাসের যে গতিপথ পাওয়া যাচ্ছিল বাস্তবে গ্রহটির গতিপথে সামান্য পার্থক্য দেখা যাচ্ছিল। মোটা দাগে এই পার্থক্য তেমন কিছুই নয়। কিন্তু জ্যোতির্বিদ্যার হিসাবে বিষয়টি মোটেও নিখুঁত নয়। তাহলে কি নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব ভুল? মুকুটহীন সম্রাট নিউটনের রাজত্বের কি তাহলে সূর্যাস্ত হতে চলল এবার? গভীর দোটানায় পড়লেন বিজ্ঞানীরা। কেউ কেউ বললেন, ইউরেনাসের কক্ষপথের ক্ষেত্রে মহাকর্ষ সূত্র না মেলার কারণ হয়তো শনি ও বৃহস্পতির ভর যতটা আমাদের জানা আছে, বাস্তবে তা নয়। কিংবা সূর্য থেকে ইউরেনাসের যে দূরত্ব মাপা হয়েছে, সেটাও হয়তো সঠিক নয়, অন্য কিছু। আকাশ তোলপাড় করে আবারও বৃহস্পতি আর শনির ভর মাপা হলো। মাপা হলো সূর্য থেকে ইউরেনাসের দূরত্ব। না, কোথাও কোনো ভুল পাওয়া গেল না। তাহলে? এক দল বিজ্ঞানী মহাকর্ষ তত্ত্ব ভুল বলে মেনে নিতে রাজি হয়ে গেলেন। তবে দমলেন না আরেক দল। আরেকটা সম্ভাবনা উঁকি দিল দ্বিতীয় দলের বিজ্ঞানীদের মনে। তাঁরা মহাকর্ষ সূত্র কাজে লাগিয়েই হিসাব কষে বললেন, ইউরেনাসের পরও সৌরজগতে আরেকটা গ্রহের অস্তিত্ব থাকতে পারে। সেই অজানা রহস্যময় গ্রহটির আকর্ষণেই হয়তো ইউরেনাসের গতিপথে এমন জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এমনকি মহাকর্ষ সূত্র ব্যবহার করেই তাঁরা বলে দিলেন, আকাশের সম্ভাব্য কোথায় খুঁজলে রহস্যময় গ্রহটির দেখা মিলতে পারে।

116_119_Newton & Neptune (1)
116_119_Newton & Neptune (1)
ফরাসি জ্যোতির্বিদ জোসেফ ল্যাভিয়ের
ফরাসি জ্যোতির্বিদ জোসেফ ল্যাভিয়ের

কেউ কেউ অবশ্য একে নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব বাঁচানোর একটা পাঁয়তারা হিসেবেই দেখলেন। তবে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ বছর বয়সী গণিতের ছাত্র জন কাউচ অ্যাডামস ছিলেন জ্যোতির্বিদদের দ্বিতীয় দলে। ১৮৪৬ সালের দিকে অজানা গ্রহটি কোথায় মিলতে পারে, তা গাণিতিকভাবে বের করেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে নিজের একটা দুরবিন না থাকায় হিসাবটা মিলিয়ে দেখতে পারলেন না। একটি দুরবিন পাওয়ার আশায় অনেক দিন হন্যে হয়ে সে যুগের নামকরা বিজ্ঞানীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ালেন অ্যাডামস। কিন্তু তাঁর গাণিতিক হিসাবের তোয়াক্কা করলেন না কেউই। উল্টো এভাবে গ্রহ খোঁজা নিছক সময় আর শ্রমের অপচয় বলেই ভাবলেন তাঁরা।

দুরবিনের অভাবে অ্যাডামস যখন গভীর হতাশায় ডুবতে বসেছেন, ঠিক তার আট মাস পরে আটলান্টিকের উল্টো পারে ঘটছিল আরেক ঘটনা। অ্যাডাম্ল্ল্ল্ল্ল্ল্ল্ল্লেনামের এক ফরাসি জ্যোতির্বিদ ইউরেনাসের গতিপথ নিয়ে গবেষণা করছিলেন। ১৮৪৬ সালের ১ জুন প্রকাশিত হয় তাঁর গবেষণাপত্র। আশ্চর্য! ইউরেনাস-সংক্রান্ত তাঁর গবেষণার ফলাফল অ্যাডামসের ফলাফলের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে মিলে গেল। অ্যাডামসের মতো ল্যাভিয়েরেরও কোনো ভালো দুরবিন ছিল না। তাই তিনিও খাতায় কষা অঙ্কের ফলের সঙ্গে আকাশের পর্যবেক্ষণ মেলাতে পারলেন না। তবে ল্যাভিয়েরের কাজের খবর বিদ্যুত্গতিতেই পৌঁছাল ব্রিটেনে। এবার একটু নড়েচড়ে বসতেই হলো ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদদের। যাঁরা এতকাল অ্যাডামসের কাজ তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিলেন, তাঁদের বোধোদয় হলো যেন। কিন্তু অ্যাডামস বা ল্যাভিয়েরের নির্দেশিত জায়গায় দুরবিন তাক না করে আকাশে এলোপাতাড়ি খুঁজতে লাগলেন। ফ্রান্সেও সেই একই অবস্থা। তাই ব্যর্থতা যে তাঁদের সঙ্গী হবে, তাতে আর আশ্চর্য কী!

ওদিকে গ্রহ খুঁজতে এরপর যৌথভাবে মাঠে নামলেন জার্মান জ্যোতির্বিদ জোহান গটফ্রিড গ্যালে এবং হেনরিক লুডভিগ ডিঅ্যারে। অবশ্য সে জন্য আকাশের কোথায় সেটি খুঁজতে হবে ল্যাভিয়েরের কাছ থেকে সে বিষয়ে এক চিঠি পেয়েছিলেন তাঁরা, ১৮৪৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সে জন্য বার্লিন অবজারভেটরি ব্যবহার করা ছাড়া তো কোনো উপায় নেই। এ কাজে অবজারভেটরির প্রধান জোহান ফ্রান্স এনকাহ যে কিছুতেই রাজি হবেন না, সেটি জানা ছিল তাঁদের। তাই এক বুদ্ধি আঁটলেন তাঁরা। এনকাহর জন্মদিনে অবজারভেটরি ব্যবহারের অনুমতি চাইলেন। জন্মদিন বলেই হয়তো এনকাহ না করতে পারলেন না। সেদিন রাতেই অর্থাত্ ২৩ সেপ্টেম্বর গ্যালে এবং ডিঅ্যারে যৌথভাবে আকাশে নতুন এক বস্তুর দেখা পান। সেটিই যে অ্যাডামস বা ল্যাভিয়েরের নির্দেশিত নতুন গ্রহ, তা বুঝতে পারলেন তাঁরা। এভাবে জন্মদিনে ভালোই এক উপহার পেলেন এনকাহর।

এ সাফল্যের খবর প্রচারিত হতে অনেকেই এ আবিষ্কারের কৃতিত্বে ভাগ বসাতে উঠেপড়ে লাগলেন। বলাই বাহুল্য, এই দলে ছিলেন অ্যাডামস ও ল্যাভিয়েরকে তাচ্ছিল্য করা সেই জ্যোতির্বিদেরা। তবে সর্বসম্মতিক্রমে অ্যাডামস ও ল্যাভিয়ের দুজনকেই এই আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। আবিষ্কার তো হলো এবার নাম দেওয়ার পালা। প্রথমে আবিষ্কারের নামেই নামকরণের প্রস্তাব উঠল। পরে আবিষ্কারকদের প্রত্যাখ্যান। যথারীতি রোমান পুরাণ ঘেঁটে দেওয়া হলো নতুন গ্রহের নাম, সাগর দেবতা নেপচুনের নামে। কারণ, দুরবিনে গ্রহটি দেখতে সাগরের মতো সবুজাভ নীল রঙের। তাই এমন নাম। এভাবেই আকাশে উদিত হলো সৌরজগতের অষ্টম গ্রহ নেপচুন।

যাহোক, নেপচুন আবিষ্কারের মাধ্যমেই শেষ পর্যন্ত নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান হয়েছিল। তাতে আরেকবার বোঝা গেল মহাকর্ষ তত্ত্বের শক্তি, সামর্থ্য। নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল তত্ত্বটির নির্ভুলতা সম্পর্কেও। সেবার টিকে গেলেও এ ঘটনার ৬০ বছর পর নিউটনের রাজত্ব চুরমার করে দিয়েছিলেন জার্মান তরুণ আইনস্টাইন। অবশ্য সেটি আরেক গল্প।

সূত্র: মহাকর্ষের কথা/সুকন্যা সিংহ, হাউ ডিড উই ফাইন্ড আউট নেপচুন/আইজ্যাক আসিমভ