পরিবেশ রক্ষায় লেগোর উদ্যোগ

সবার কি তাদের ছোটবেলার খেলনাগুলোর কথা মনে আছে? যে সময়টা শুধুই ছিল খেলার, অন্য কোনো ঝঞ্ঝাট যখন ছিল না। সেই সময় প্রত্যেকেরই একটা না একটা প্রিয় খেলনা থাকতই। কারও পুতুল, কারও লাল গাড়ি, কারওবা পছন্দের সাইকেল। অনেকের মা-বাবাই তখন বুদ্ধি করে একটা বুদ্ধির খেলা ধরিয়ে দিতেন। লেগো ব্লকের খেলা। লেগো নামটা শুনলেই যেন চোখের সামনে ভেসে উঠে রংবেরঙের ছোট ছোট ব্লক। যেগুলো দিয়ে গাড়ি, রোবট, বিল্ডিং কত শত জিনিসই না বানাতাম আমরা। কদিন বাদেই আবার নতুন খেলনায় মেতে উঠতাম। কিন্তু পরে কী হতো সেই ব্লকগুলোর? কিছু হারিয়ে যেত, কিছু ভেঙে গেলে ফেলে দেওয়া হতো। খুঁজলে হয়তো কিছু টুকরা এখনো কারও কারও বাসার স্টোররুমের কোণে পাওয়া যেতে পারে।

পরীক্ষাগারে লেগো ব্লক পরীক্ষা

এই পুরো ব্যাপারটা হয়তো বেশ ভাবিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খেলনা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লেগো গ্রুপকে। আমাদের খেলনাগুলো আমাদের সংরক্ষণে থাকছে না। বরং সেগুলো ফেলে দেওয়ায় বা হারিয়ে যাওয়ায় সেগুলোতে ব্যবহৃত উপাদান পরিবেশদূষণে প্রভাব ফেলছে। তাই লেগো ইতিমধ্যেই এই সমস্যা থেকে উত্তরণের কাজে লেগে পড়েছে৷ তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের প্লাস্টিকের খেলনাগুলো তৈরিতে তারা ব্যবহার করবে ফেলনা প্লাস্টিক বোতল। বাচ্চাদের খেলনা তৈরিতে ফেলনা প্লাস্টিকের ব্যবহার শুনতে যতটা অদ্ভুত লাগছে ব্যাপারটা আসলে তেমন নয়। বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা এত বেড়েছে যে মানুষ প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। লেগো প্রতিষ্ঠানটি এই ভাবনাকে কাজে লাগিয়েছে৷ কীভাবে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক থেকে খেলনা তৈরি করা যাবে, কীভাবে সেগুলো বাচ্চাদের উপযোগী ও পরিবেশবান্ধব থাকবে, তা যাচাইয়ে এখন কাজ করছে দেড় শর বেশি প্রকৌশলী। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বোতল সংগ্রহ করে সেগুলোকে রং অনুযায়ী ভাগ করা হচ্ছে। তারপর সেসব প্লাস্টিকের গুণগত মান পরীক্ষার পরই সেগুলোকে ব্লকে রূপান্তর করা হচ্ছে। এ রকম এক লিটারের একটি প্লাস্টিক বোতল থেকে ১০ টুকরা লেগো ব্লক তৈরি করা সম্ভব। তাদের হাতে প্রায় আড়াই শ ধরনের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে একটি প্লাস্টিক বোতলকে।

২০১৮ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও ফেলনা প্লাস্টিকের তৈরি খেলনা এখনো বাজারে ওঠেনি। পরীক্ষাগারের নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে খেলনা যাবে মানুষের হাতে। কয়েক ধরনের বয়সী মানুষের হাতে দেওয়া হবে খেলনা সরাসরি পরীক্ষা করার জন্য। বুঝতে হবে প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার এই ক্ষেত্রে কতটা কার্যকরী, শিশুদের কাছেই বা কেমন লাগছে, আগের খেলনার সঙ্গে পার্থক্য আসলে কতটুকু, আকার-আকৃতি, ডিজাইন সঠিক কি না। সব পরীক্ষার শেষে ধারণা করা যাচ্ছে দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে নতুন এই খেলনা বাজারে সুলভ হবে।

পরিবেশবান্ধব লেগো ব্লকে প্রচারণা

এই ধরনের পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের জন্য লেগো গ্রুপ বেশ প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট টিম ব্রুক জানান ২০৩০ সালের ভেতর তাদের শতভাগ খেলনাই তৈরি হবে প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে। পরীক্ষাগারে চিড়েচ্যাপ্টা বোতলগুলই হাতে আসবে রংবেরঙের ব্লক হয়ে। লেগো এই উদ্যোগ নিয়ে বেশ আশাবাদী। তারা চায় শিশুরা নতুন এই লেগো দিয়ে খেলার সময় এর ইতিহাস সম্পর্কেও জানুক, খেলার ছলে পরিবেশ নিয়েও ভাবতে শিখুক।

তথ্যসূত্র: বিবিসি