পাঁচ টাকার কয়েন

তিন ভাই, এক বোন ও মা-বাবাকে নিয়ে আমাদের পরিবার। এটা যখনকার ঘটনা, তখন আমার বাবা ছিলেন বেকার, মা গৃহিণী, বড় ভাইয়া টিউশনি করে কোনো রকমে আমাদের অভাবের সংসার চালাত। বড় ভাইয়ার নাম মামুন। তিনি প্রতি মাসে টিউশনির টাকা পেয়ে সেখান থেকে কিছু টাকাকে পাঁচ টাকার কয়েন বানিয়ে একটা ট্রাংকের ভেতর জমা করে রাখতেন ভবিষ্যতে কাজে দেবে—এই ভেবে!

তখন আমার বয়স কত ছিল, এই আট কিংবা নয়। এই বয়সেই আমি পাকা চোর হয়ে গিয়েছিলাম। হ্যাঁ, নিজেকে চোরই বলছি। কারণ, আমি যে ভাইয়ার ট্রাংকে রাখা কয়েনগুলো চুরি করে তা দিয়ে বিরিয়ানি খেতাম, গেমসের সিডি কিনতাম। ভাইয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করত, কিরে ফাহিম, টাকা কোথায় পেয়েছিস? আমি ভাইয়াকে অবলীলায় মিথ্যা করে বলে দিতাম যে রাস্তায় পাঁচ টাকা কুড়িয়ে পেয়েছি।

প্রায় এক বছর পর ভাইয়া তার ট্রাংক খুলে কয়েনগুলো গুনে দেখতে লাগল কতগুলো জমা পড়ল। কিন্তু ভাইয়া অবাক! সেখানে পাঁচ টাকার ১২৬টি কয়েন ছিল, যেখানে সে প্রায় দুই হাজারের মতো কয়েন ওই ট্রাংকে ঢুকিয়েছিল।

ভাইয়া বাসার সবাইকে ডেকে এনে তার ট্রাংকের ভেতর রাখা বাকি কয়েনগুলো কোথায় তা জানতে চাইল। কেউ কিছু বলতে পারল না, আমি একদম চুপ। ভাইয়া মন খারাপ করে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে কিছুক্ষণ শুয়ে ছিল। ঠিক এক ঘণ্টা পর রুম থেকে বের হয়ে টিউশনি করাতে চলে গেল। এরপর কিছুদিন ভাইয়ার মন অনেক খারাপ ছিল। কয়েনগুলো নিয়ে হয়তো তার কোনো স্বপ্ন ছিল, যা আমি ভেঙে দিয়েছিলাম।

এত কম বয়সে আমি মারাত্মক একটা অপরাধ করে ফেলেছিলাম, যা আজও আমাকে পোড়ায়। ছোটবেলার কথা মনে করতে গেলেই সবার আগে এই কর্মের কথা আমার মনে পড়ে। খুব কষ্ট পাই। ভাইয়াকে কখনো এটা বলা হয়নি। ভাইয়া, পারলে তোমার এই ছোট ভাইকে ক্ষমা করে দিয়ো!

তারিকুল হাসান

যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল হাইস্কুল, ঢাকা