‘পুলিশের ডিআইজিকে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ইভ টিজারের কথা বলে দিয়েছিলাম!’ — মোসাররত মেহজাবীন

মেহজাবীনের পথচলা শুরু হয়েছিল আবৃত্তি শেখা দিয়ে। জেলা শিল্পকলা একাডেমী থেকে আবৃত্তির ওপর তার হাতেখড়ি। এরপর একে একে বাংলাদেশ বেতারের রাজশাহী শাখার শিশুমেলার আবৃত্তি, অভিনয়শিল্পী আর উপস্থাপক হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করেছে সে। তারপর আবৃত্তিকে সঙ্গী করে নিজ বিদ্যালয় ছাড়াও শিশু একাডেমী, নজরুল একাডেমী ও রাজশাহী বিভাগীয় গ্রন্থাগার আয়োজিত নানা অনুষ্ঠানে অর্জন করেছে পুরস্কার। রাজশাহী সরকারী পিএন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মেহজাবীন সমানভাবে পারদর্শী উপস্থিত বক্তৃতা, গল্প বলা আর বিতর্ক করায়। ‘সনাক’ আয়োজিত ‘দুর্নীতিবিরোধী’ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় নিজ দলকে চ্যাম্পিয়ন করার পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ বিতার্কিকের পুরস্কারটা নিজের ঝুলিতে ভরতে একটুও ভুল হয়নি তার। তা ছাড়া মেহজাবীন অংশ নিয়েছে বিটিভিসহ বিভিন্ন বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলের নানা অনুষ্ঠানে। লেখালেখির দিক থেকেও পিছিয়ে নেই। ২০১২ সালের ‘ঐতিহ্য-গোল্লাছুট’ গল্পলেখা প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয় তার গল্প। তা ছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দিবসসহ নানা বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পেয়েছে পুরস্কার। এত কিছুর মাঝে পড়াশোনাটাও ঠিক রেখেছে সে। ১০ বছর স্কুলে ক্লাস ক্যাপ্টেন আর গার্লস গাইডিংয়ের পাশাপাশি অংশ নিয়েছে গণিত অলিম্পিয়াড, পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ও বিভিন্ন বিজ্ঞান মেলায়। ‘স্পেলিং বি’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সে পেয়েছিল বিভাগীয় পর্যায়ের পুরস্কার। ২০১৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ’-এ জাতীয় পর্যায়ে বর্ষসেরা পুরস্কারসহ সুযোগ পেয়েছে মালেশিয়ায় শিক্ষাসফরে যাওয়ার। তা ছাড়া মেহজাবীন ছাত্রী প্রতিনিধি হিসেবে ‘জেনেসিস ২.০’ প্রোগ্রামের আওতায় ভ্রমণ করেছে জাপান। পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে ও অষ্টম শ্রেণিতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পাওয়া মেহজাবীনের সবচেয়ে পছন্দের কাজ বৃষ্টিতে ভেজা আর বন্ধুদের সারপ্রাইজ দেওয়া।

মেহজাবীনের সাক্ষাৎকার

প্রশ্ন :

তুমি তো মালয়েশিয়া আর জাপানে গিয়েছিলে। ওদের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন দেখলে?

ওরা সহশিক্ষা কার্যক্রমে বেশি জোর দেয়। জাপানের মিয়াজা কিনিশি হাইস্কুলে ৩০টি ক্লাব আছে। পড়াশোনা আমাদের মতো হলেও পরিবেশটা অনেক মনোরম আর আন্তরিক।

প্রশ্ন :

প্রিয় লেখক, প্রিয় গল্পের বই—

আর্থার কোনান ডয়েল, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও রকিব হাসান। ট্রেজার আইল্যান্ড, শার্লক হোমস, আমি তপু, তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১/১।

প্রশ্ন :

সুযোগ পেলে যা করতে চাও?

পুরো মহাবিশ্ব ভ্রমণ করতে চাই এবং এভারেস্টসহ আরও কিছু পর্বত জয় করতে চাই।

প্রশ্ন :

স্কুলের কোনো মজার ঘটনা?

আমাদের স্কুলে একদিন ইভ টিজিং নিয়ে একটা সেমিনার হয়েছিল। সেখানে পুলিশের ডিআইজিকে আমি স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক ইভ টিজারের কথা বলে দিই। পরে সেই ছেলেটাকে পুলিশ ধরে, আর আমি সাহসী এই ঘটনার জন্য বকা খাই। কারণ, সবার মতে এভাবে ঘটনাটা পুলিশকে বলা উচিত হয়নি।

প্রশ্ন :

দেশের জন্য কিছু করার সুযোগ পেলে সবার প্রথমে কী করতে?

দুর্নীতি দূর করতাম।

প্রশ্ন :

যে কাজটি করা অসম্ভব—

কাউকে অসম্মান করা।

(কিশোর আলোর এপ্রিল ২০১৫ সংখ্যায় প্রকাশিত)