পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি চেরাপুঞ্জিতে নাকি মৌসিনরামে?

আগে আমরা জানতাম, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে। এখন আমরা জানি, চেরাপুঞ্জি নয়, সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় মেঘালয়েরই আরেক জায়গায়, তার নাম মৌসিনরাম। মেঘালয়ের পূর্ব খাসি হিল জেলায় এটি অবস্থিত। গড় বৃষ্টিপাত বছরে ১১,৮৭২ মিলিমিটার বা ৪৬৭ ইঞ্চি।

চেরাপুঞ্জিও একই জেলায়। এর গড় বৃষ্টিপাত ১১,৭৭৭ মিলিমিটার। ৪৬৩.৭ ইঞ্চি।

এ বছরের খবর (১৮ জুন): ‘ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের (আইএমডি) জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা ১২২ বছরের মধ্যে এক দিনে তৃতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। আর গত তিন দিনে সেখানে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটিও গত ২৭ বছরের মধ্যে তিন দিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।’

তার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে মৌসিনরাম। ১৮ জুন পিটিআই জানাচ্ছে, শুক্রবারে, মানে ১৭ জুনে এখানে বৃষ্টি হয়েছে ১০০৩.৬ মিমি। তার মানে চেরাপুঞ্জিকে হারিয়ে দিয়েছে মৌসিনরাম।

বাংলাদেশের সিলেট, ময়মনসিংহের সীমান্তের উত্তরেই পাহাড়—মেঘালয়ের পাহাড়, গারো পাহাড়। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প নিয়ে মেঘ যায় উত্তর দিকে। পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা খেয়ে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ঘটায় এ মেঘমালা।

আসাম ও মেঘালয় পাহাড়ি উঁচু এলাকা। এখানে বৃষ্টিপাত হলে তার ঢল নেমে আসে বাংলাদেশের সমভূমিতে। আসলে বাংলাদেশ একটা বদ্বীপ। পাহাড় থেকে নেমে আসা জলধারা যে পলি বয়ে আনে, তা জমে জমেই বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে।

ফলে বর্ষাকালে পাহাড়ে বৃষ্টি হলে বাংলাদেশে বন্যা হয়। এ বন্যার সঙ্গে বসবাস করেই বাংলাদেশের মানুষ টিকে আছে হাজার হাজার বছর। বন্যা পলি জমায়। পলি জমার ফলে ফসল ভালো হয়। কিন্তু সমস্যা হলো, বন্যায় বিপন্ন হয় মানুষের জীবন। ভেসে যায় ঘরবাড়ি।

মানুষ তার প্রয়োজনে রাস্তাঘাট বানায়। রেলপথ বানায়। এমনকি বন্যার কবল থেকে বাঁচতে নদীর দুপাশে বাঁধও দেয়। বাঁধ দেওয়া হলে সাময়িকভাবে বন্যার হাত থেকে দুকূলবাসী বাঁচতে পারে। কিন্তু যে বিপুল পরিমাণ পলি বাংলাদেশের নদীর পানি বয়ে আনে, বাঁধের কারণে তা আর দুকূলে ছড়াতে পারে না। ফলে নদীর তল উঁচু হয়ে যায়। নদীর পানি ধারণ করার ক্ষমতা কমে যায়। রাস্তাঘাট, বাঁধ, রেলপথ, নিচু জমি ভরাট করা, নানা ধরনের স্থাপনার কারণেও পানির স্বাভাবিক গতিপথ ব্যাহত হয়। অনেক পাকা ঘরবাড়ি রাস্তা লনের কারণে বৃষ্টির পানি চুইয়ে মাটির ভেতরে ঢুকতে পারে না। সবটা মিলিয়ে বন্যা হয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা জলবায়ুর বদল ঘটাচ্ছে। ফলে ঝড়, বন্যা, সাইক্লোন, খরা ঘন ঘন হচ্ছে।

তাহলে বন্যা থেকে বাঁচার উপায় কী? আসলে বন্যা রোধ করা যায় না, বন্যার সঙ্গে বসবাস করতে শিখতে হয়। ভালো হতো, যদি পৃথিবীতে একটাও বাঁধ না থাকত।

তা তো আর সম্ভব নয়। ফলে আমাদের যেকোনো স্থাপনা, তা ভবনই হোক, স্টেডিয়ামই হোক, রাস্তাই হোক আর রেলপথই হোক, বানানোর আগে পরিবেশের ওপরে এর কী প্রভাব পড়বে, তা বিবেচনায় নিতে হবে। হাওর এলাকায় রাস্তা না বানিয়ে ফ্লাইওভার বানালে ভালো হতো। সিদ্ধান্তগুলো ওপর থেকে না নিয়ে স্থানীয় মানুষ এবং বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে নিতে পারতে হবে।

কিন্তু সবার আগে সুনামগঞ্জ থেকে কুড়িগ্রাম, বাংলাদেশের বন্যাপীড়িত মানুষের পাশে আমাদের সবার দাঁড়াতে হবে।