ফরমালিন হলো ফরমালডিহাইড, পানি ও মিথানলের একটি সম্পৃক্ত দ্রবণ। এতে আয়তনের ৪০ শতাংশ ফরমালডিহাইড থাকে। মৃতদেহ সংরক্ষণে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। মাছ-মাংস, ফলমূল ও শাকসবজিতে ফরমালিন ব্যবহার করলে ওগুলো বেশ কয়েক দিন টাটকা থাকে। পচে না, নষ্ট হয় না। চকচকে দেখায়। কারণ, এই রাসায়নিক দ্রব্য ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মারা তো ভালো কাজ, তাহলে ফরমালিনে এত ভয় কেন? কারণ, অন্য যেসব ওষুধ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, সেগুলো মানুষের পরিপাকতন্ত্রের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত বর্জ্য আকারে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ফরমালিন শরীরে থেকে যায়। এই রাসায়নিক দ্রব্যটি ব্যাকটেরিয়ার কোষের ভেতরের তরল শুষে নিয়ে সেখানে একধরনের আঠালো পদার্থ তৈরি করে। ফলে ব্যাকটেরিয়া মরে বটে, কিন্তু নতুন আকারে ফরমালিনযুক্ত ওই কোষগুলো শরীরের ভেতরে থেকে কাজ করে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের পর বিপাক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য উপাদানগুলোকে ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র ও কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেওয়ার কাজ করে মানুষের লিভার। কিন্তু সে ফরমালিনে আক্রান্ত কোষগুলোকে শরীর থেকে বের করে দিতে পারে না। ফরমালিনের কারণে লিভার থেকে বের হওয়া এনজাইমগুলো নষ্ট হয়। এর ফলে লিভার ও কিডনির ওপর চাপ পড়ে। পরিণতিতে লিভার সিরোসিস হতে পারে। কিডনি নষ্ট হতে পারে। ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে। খাদ্যে খুব সামান্য ফরমালিন মানুষের শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। ফরমালিন মেশানো ফল বা মাছ-মাংস অনেক দিন ধরে খেলে লিভার ক্যানসার, হার্টের অসুখ, কিডনি নষ্ট প্রভৃতি হতে পারে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ফরমালিনযুক্ত খাবার খেলে বমি বমি ভাব দেখা দেয়।