ফুলের নাম শাপলা

ধরো শাপলা ফুলের ওপর যেভাবে মৌমাছি হইচই করে ঘুরেফিরে, ঠিক সেভাবে হইচই করতে করতে তোমাদের বয়সী একঝাঁক ছেলেমেয়ে মেঠোপথে  হেঁটে বাড়ি ফিরছে। সবার কাঁধে আঁটি বাঁধা লাল টুকটুকে শাপলা ফুল, সামনের বিল থেকে তুলেছে ওরা। ওদের কেউ শাপলা হাতে পরেছে ব্রেসলেটের মতো করে। কেউ তো শাপলা ফুল দিয়ে মুকুট বানিয়ে মাথাতেই পরে ফেলেছে, আর কেউ পেঁচিয়ে গলায় পরে গর্ব করে বলছে, এটাই নাকি তার গজমোতি মালা!

এই এই কলকাকলির দল, এত শাপলা নিয়ে কী করবে তোমরা? এ রকম প্রশ্ন যদি করো ওদের, অবাক হয়ে ওরা জবাব দেবে, কী করব আবার! খাব! বলেই হয়তো তোমাকে দেখিয়ে শাপলার ফলে কুড়মুড় করে একটা কামড় দেবে ওরা! শাপলার ফল বলতে যেটাকে বোঝায়, সেটার আরেক নাম ‘ঢ্যাপ’, মূলত শাপলার মাঝখানে যে গোল অংশটি থাকে, সেটাই হলো ঢ্যাপ। এটা কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যেমন যায়, তেমনি এর ভেতর থেকে বীজ বের করে তা শুকিয়ে ভেজে একপ্রকার খইও বানানো যায়। সেই খইয়ের সঙ্গে খেজুরের গুড় মেখে বানানো মোয়া খেতে দারুণ মজা। শাপলার এই ঢ্যাপ ছাড়া রান্না করে খাওয়া যায় এর ডাটি। ইলিশ কিংবা চিংড়ির সঙ্গে রান্না করলে তো কথাই নেই, একবার খেলে জিব আর সে স্বাদ ভুলবে না। শাপলার শিকড়ের সঙ্গে আলুর মতো একপ্রকার কন্দও থাকে, যেটাকে বলে শালুক। এই শালুকও খেতে বেশ সুস্বাদু।

শুধু খাবার হিসেবে নয়, শাপলা ফুলের কিন্তু রয়েছে বেশ কিছু ঔষধি গুণও। ডায়াবেটিস, চুলকানি কিংবা আমাশয়ের মতো রোগের জন্য শাপলা তো একপ্রকার মহৌষধ!

ধরো, শাপলা তোলা দলের কচিকাঁচাদের সঙ্গে ভাব নেওয়ার জন্য তুমি স্কুলের শিক্ষকের মতো  জিজ্ঞেস করলে, শাপলা তো না হয় খাবে, কিন্তু তোমরা কি জানো যে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল কী?

তোমার এই বোকা মার্কা প্রশ্ন শুনে হয়তো ওরা হা হা করে হেসে গড়াগড়ি খেয়ে নিজেদের কাঁধের লাল শাপলাগুলো দেখিয়ে বলবে, কেন জানব না, আমাদের কাঁধের এই শাপলা ফুলই তো জাতীয় ফুল, এটা তো সবাই জানে!

এবার তোমার মজা নেওয়ার পালা, তুমি তখন ক্লাসের পাওয়ারওয়ালা চশমা পরা জ্ঞানীর মতো জানিয়ে দেবে, উহু হয়নি, লাল শাপলা না। আমাদের জাতীয় ফুল হলো শুধু সাদা শাপলা! মোট তিন ধরনের শাপলা পাওয়া যায়, লাল, নীল আর সাদা; যার মধ্যে এই সাদা শাপলাই হলো আমাদের জাতীয় প্রতীক।

তোমাদের কানে কানে আরেকটা তথ্য জানিয়ে দিই, বাংলাদেশের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কারও জাতীয় প্রতীকও কিন্তু শাপলা।

একসময় আমাদের দেশের পুকুর-বিলে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত শাপলা। ধানখেতে জমা পানিতেও ঝাঁকে ঝাঁকে শাপলা ফুটত। পুকুর, বিলে যখন      থরে-থরে শাপলা ফুটে থাকে, তখন সেই অপরূপ সৌন্দর্য সহজেই মন কেড়ে নিতে পারে যেকোনো কাঠখোট্টা মানুষেরও। তোমরা যারা শহরের চার দেয়ালের ভেতর বেড়ে উঠছ, সামনাসামনি কখনো আসল শাপলা না দেখেও ড্রয়িং পরীক্ষায় শাপলার ছবি এঁকে মার্কস বাগিয়ে নিচ্ছ, তাদের সবার উচিত অন্তত একবার হলেও কাছে গিয়ে শাপলা ফুল দেখে আসা। তোমার এলাকার খুব কাছেই হয়তো এ রকম শাপলা ফুটে থাকে, চাইলেই বেরিয়ে পড়তে পারো সেই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে।