‘বন্ধুরা মজা করে আমাকে ফাঁসিয়ে দেয়!’ — আজমাইন আকমাল

ক্লাস থ্রিতে পড়ুয়া একটা ছেলে কম্পিউটার পেলে সাধারণত কী করে? হয়তো গেমস খেলে, গান শোনে, সিনেমা দেখে কিংবা পেইন্টে আঁঁকাআঁঁকি করেই কাটায় সময়। কিন্তু ব্যতিক্রম বগুড়া জিলা স্কুলের আজমাইন। পেইন্টে আঁঁকতে গিয়ে তার মাথায় প্রশ্ন এল, এটা কীভাবে তৈরি, সফটওয়্যারটি কাজ করছে কীভাবে? ইন্টারনেটের মাধ্যমে সে জানতে পারে, এসব সম্ভব হয়েছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে। বাবার কাজের জন্য কেনা কম্পিউটার ব্যবহার করে বাইরের কারও সাহায্য ছাড়াই শিখে ফেলে ‘স্ক্র্যাচ’ প্রোগ্রামিং ভাষা। তারপর সে একে একে রপ্ত করে আরও কিছু প্রোগ্রামিং ভাষা। আর এই রপ্ত জ্ঞানকে সে ব্যবহার করতে নেমে গেছে নানান বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে। ২০১৪ সালে শিশু জিহাদের টানেলে মর্মান্তিক মৃত্যুর পরে আজমাইনের মাথায় আসে টানেলে আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে পারে এমন রোবট তৈরির ভাবনা। শুরু হয় তার রোবোটিকস নিয়ে পড়াশোনা। ক্লাস ফোরে পড়ার সময় এই রোবোটিকস এবং প্রোগ্রামিং জ্ঞান ব্যবহার করে সে তৈরি করে রেসকিউ রোবটের প্রোটোটাইপ। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে ২০১৫ সালে চিলড্রেন সায়েন্স কংগ্রেস আয়োজিত বিজ্ঞান মেলায় বিজয়ী হয় সে। তাছাড়া জাতীয় উদ্ভাবনী মেলায় সেরা দশে নির্বাচিত হয় তার প্রোটোটাইপ। ২০১৭ সালে সরকারি অনুদানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআইয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশের প্রথম মিলিটারি রেসকিউ রোবট বানানোর কাজ করেছে বগুড়া জিলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী।

এ ছাড়া ‘উদ্ভাবকের খোঁজে’ নামের টিভি শোতে স্মার্ট সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্টারপ্রেটারের আইডিয়া দিয়ে সেরা দশে আছে। ২০১৭ সালে অক্টোবরে তুরস্কের ‘স্টার্ট আপ ইস্তাম্বুল’-এর প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাওয়া আজমাইন ও তার বন্ধুরা মিলে আবার দাঁড় করিয়েছে নিজস্ব আইটি কোম্পানি। এ ছাড়া ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে গ্লোবাল ইন্টারন্যাশনাল টিন কনফারেন্সের আমন্ত্রণে বক্তা হিসেবে নেপালে গিয়েছিল সে। তার ইচ্ছা নিজের উদ্ভাবনী ক্ষমতা দিয়ে জীবনে বহুদূর এগিয়ে যাওয়া।

আজমাইনের সাক্ষাৎকার

প্রশ্ন :

যে দিনটার কথা ভোলা যাবে না...

সেপ্টেম্বরে নেপালে ‘গ্লোবাল ইন্টারন্যাশনাল টিন কনফারেন্স ২০১৭’-এ বক্তা হিসেবে যাওয়া।

প্রশ্ন :

যে স্বপ্ন ঘুমাতে দেয় না...

উদ্ভাবনী ভাবনাগুলো এবং সেসব বাস্তবায়নের স্বপ্ন।

প্রশ্ন :

বাঁশবাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠেছে ওই...

মাগো আমার শৈশবের শীতকাল কই?

প্রশ্ন :

এমন একটা সত্যি বলো, যেটার কথা তুমি ছাড়া কেউ জানে না...

আমি কিন্তু কবিতা লিখি! হিহি...

প্রশ্ন :

টানটান উত্তেজনার একটা বই পড়তে পড়তে হঠাৎ দেখা গেল, শেষের তিন পৃষ্ঠা নেই। কী করবে?

ডাউনলোড করে বাকিটুকু পড়ে ফেলব। এখন ইন্টারনেটের যুগ!

প্রশ্ন :

ক্লাসে কোনো শাস্তি বিনা কারণে পেয়েছিলে বলে মনে হয়?

এমনটা প্রায়ই ঘটে, বন্ধুরা মজা করে আমাকে ফাঁসিয়ে দেয়!

প্রশ্ন :

অমাবস্যা...লোডশেডিং...ঘুটঘুটে অন্ধকার চারদিকে! বাড়িতে তুমি ছাড়া কেউ নেই। হঠাৎ পাশের রুম থেকে তোমার গলায় কেউ কথা বলে উঠল! কী করবে?

ফোন নিয়ে ভিডিও করা শুরু করব। পরের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিয়ে দেব। আর লিখে দেব, ‘অমাবস্যার রাতে ছেলেটির সঙ্গে এ কী হলো! (দেখুন ভিডিওসহ)’।

(কিশোর আলোর ডিসেম্বর ২০১৭ সংখ্যায় প্রকাশিত)