বলো তো সেই ম্যাজিক অঙ্কটি কত?

অলংকরণ: সালমান সাকিব শাহরিয়ার

আমরা ধাঁধা ধরে বন্ধুদের আইকিউ বা বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা করে মজা পাই। ছোটবেলায় কাউকে একটু বেকায়দায় ফেলতে গণিতের ধাঁধা ধরতাম। জিজ্ঞেস করতাম, বলো তো ‘শুভঙ্করের ফাঁকি, ৩৬ থেকে ৩০০ গেলে কত থাকে বাকি?’ সবাই মহা চিন্তায় পড়ে যেত। ৩৬ থেকে ৩০০ কীভাবে বিয়োগ করা যাবে? যারা একটু উঁচু ক্লাসের, তারা বলতেন (৩৬ - ৩০০) = (-২৬৪)। উত্তর বিয়োগান্তক হবে। আমরা হো হো করে হেসে বলতাম, আরে এটা তো গণিত বিশেষজ্ঞ শুভঙ্করের একটি ধাঁধা। তিনি এখানে ৩০০ বিয়োগ করতে বলেননি। তিনি জানতে চেয়েছেন, ৩৬টি ব্যঞ্জনবর্ণ থেকে ৩টি শ, মানে শ, ষ ও স বাদ দিলে কত বাকি থাকবে? উত্তর খুব সহজ। (৩৬ - ৩) = ৩৩। তখন সেই সিনিয়রদের বলতাম, এত সহজ একটা হিসাব মেলাতে পারলেন না?

সে যুগে গণিতের এ রকম অনেক ধাঁধা ছিল। আধুনিক কালে সেসব ধাঁধার ধরনও পাল্টে গেছে। যেমন এই ডিজিটাল যুগের একটি ধাঁধা দেখো। তোমাদের জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা ৫ ও ৬ এই দুটি অঙ্কের (ডিজিট) মাঝখানে শুধু একটি গাণিতিক চিহ্ন ব্যবহার করে এমন একটি সংখ্যা তৈরি করতে পারবে কি, যা ৫–এর চেয়ে বড় ও ৬–এর চেয়ে ছোট একটি সংখ্যা হবে?

চট করেই এর উত্তর দেওয়া যায়। যারা পড়ছ, ওদের অনেকেই হয়তো এরই মধ্যে উত্তর বের করে ফেলেছ। উত্তরটি হলো ৫.৬। ৫ ও ৬–এর মাঝখানে শুধু একটি দশমিক চিহ্ন বসিয়ে ৫ দশমিক ৬ সংখ্যাটি তৈরি করা হয়েছে। ৫.৬ সংখ্যাটি ৫–এর চেয়ে বড় ও ৬–এর চেয়ে ছোট, এটা তো দেখলেই বোঝা যায়।

আরেকটি ধাঁধা দেখো। তুমি একুশের বইমেলা থেকে চারটি বই কিনলে। পরে হিসাব করতে গিয়ে একটা মজার বিষয় লক্ষ করলে। সবগুলো বইয়ের দাম পূর্ণসংখ্যায়। বই চারটির দাম এক টাকা করে বেশি। প্রথমটির দামের চেয়ে দ্বিতীয়টির দাম ১ টাকা বেশি, তৃতীয়টির দাম আরও ১ টাকা বেশি...এ রকম। এখন তুমি চারটি বইয়ের দাম বের করতে চাচ্ছ। তিনটি বিকল্প। ক. ১০০ খ. ১০২ গ. ১০৪ । বলো তো মোট দাম কোনটি? এবং বই চারটির প্রতিটির দাম কত?

ধাঁধাটি প্রথমে একটু কঠিন লাগবে। কিন্তু একটু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এক মিনিটেই উত্তর পেয়ে যাবে। পর্যবেক্ষণের প্রথম ধাপ হলো ক, খ ও গ–এর তিনটি মানের মধ্যে বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কোনো সংখ্যা আছে কি না, সেটা পরীক্ষা করে দেখা। তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে সংখ্যা তিনটির মধ্যে মাত্র একটি ৪ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য নয়। সেটি হলো খ. ১০২। কিন্তু ক. ১০০ এবং গ. ১০৪—এ সংখ্যা দুটি ৪ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য। তাহলে তুমি চট করে বলে দিতে পারবে যে সঠিক উত্তর খ = ১০২ এবং বই চারটির মোট দাম ১০২ টাকা। কারণ চারটি ধারাবাহিক সংখ্যার যোগফল কখনো ৪ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য নয়। এটা তোমরা পরীক্ষা করে দেখতে পারো। যেমন (৩ + ৪ + ৫ + ৬) = ১৮। এটি ৪ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য নয়। সুতরাং এ ধরনের প্রশ্ন দেখলেই তোমরা প্রথমে পরীক্ষা করে দেখবে কোনটি ৪ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য নয়। তাহলে নির্দ্বিধায় বলে দিতে পারবে, সেটাই উত্তর।

প্রশ্ন হলো, ৪ দিয়ে বিভাজ্য না হলে যে সঠিক উত্তরটি পাওয়া যায়, তার প্রমাণ কী? খুব সহজ। কারণ বইগুলোর দাম যা-ই হোক, যেহেতু দামগুলোর মান ধারাবাহিক, তাই সবচেয়ে কম দামের বইয়ের দামের চার গুণের সঙ্গে ৬ যোগ করলে বই চারটির মোট দাম পাওয়া যাবে। সুতরাং একে ৪ দিয়ে ভাগ করলে অবশ্যই ২ অবশিষ্ট থাকবে। এখানে মূল ব্যাপার হলো বইয়ের দামগুলোর মান ধারাবাহিক। এটা না হলে ৪ দিয়ে বিভাজ্যতা পরীক্ষা করে লাভ নেই।

মোট দাম তো পেলাম। এখন আলাদাভাবে বইগুলোর দাম বের করতে হবে। এ জন্য প্রথমে মোট দাম থেকে ৬ বিয়োগ করে ৪ দিয়ে ভাগ করি। (১০২ - ৬) / ৪ = (৯৬ / ৪) = ২৪। এটাই সবচেয়ে কম দাম। সুতরাং বইগুলোর দাম হলো ২৪, ২৫, ২৬ ও ২৭ টাকা। এবার যোগ করে মিলিয়ে দেখি। (২৪ + ২৫ + ২৬ + ২৭) = ১০২ টাকা।

অবশ্য বীজগণিতের নিয়মে তো অবশ্যই এর উত্তর বের করা যায়। যেমন মনে করি, সবচেয়ে কম দামের বইয়ের দাম ‘ক’। তাহলে পরের বইগুলোর দাম হবে (ক + ১), (ক + ২) এবং (ক + ৩)। তাহলে চারটি বইয়ের মোট দাম (ক) + (ক + ১) + (ক + ২) + (ক + ৩) = (৪ক + ৬)। এখন এই সূত্র ব্যবহার করে আমরা সহজেই বইগুলোর দাম এবং মোট দাম বের করতে পারি। দেখা যাবে, শুধু খ) ১০২ মানই সঠিক। অর্থাৎ বইগুলোর মোট দাম ১০২ টাকা।

এবার তোমাদের জন্য একটি মজার ধাঁধা দিচ্ছি। প্রথমে অঙ্ক (ডিজিট) ও সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য বুঝিয়ে বলি। ১, ২, ৩...৯ প্রভৃতি হলো এক একটি অঙ্ক (ডিজিট)। কিন্তু ১২ অথবা ৩৬৮ একটি দুই বা তিন অঙ্কের সংখ্যা। অবশ্য এক অঙ্কের সংখ্যাও হতে পারে। কিন্তু অঙ্ক সব সময়ই এক অঙ্কেরই হবে, একাধিক হবে না। এখন বলো তো এমন কোন অঙ্ক আছে, যাকে দুবার লিখে যোগ করলে বা গুণ করলে একই উত্তর পাওয়া যায়? মনে হয় প্রশ্নটি শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে তোমরা সবাই উত্তর বলে দিতে পেরেছ। উত্তর ২। (২ + ২) = ৪ আবার (২X২) = ৪।

ধাঁধা ভাঙাও

একটি ম্যাজিক অঙ্ক বের করো। সেটি এমন হতে হবে যে একে দুবার লিখে যোগ করলে দুই অঙ্কের এমন একটি সংখ্যা পাওয়া যাবে, যার অঙ্ক দুটি যোগ করলে সেই ম্যাজিক অঙ্কটি ফিরে পাবে। আবার ওই একই অঙ্ক দুবার লিখে গুণ করলে আরেকটি দুই অঙ্কের সংখ্যা পাওয়া যাবে, যার অঙ্ক দুটি যোগ করলেও সেই ম্যাজিক অঙ্কটিই পাবে। অর্থাৎ একই অঙ্ক দুবার লিখে যোগ করে বা গুণ করে প্রাপ্ত সংখ্যাগুলোর অঙ্ক দুটি যোগ করলে সেই প্রথম অঙ্কটিই পাওয়া যাবে।

এখন বলো তো সেই ম্যাজিক অঙ্কটি কত?