বহুদিন ধরে বহুপথ ঘুরে তুলিতে গিয়াছে সেলফি

মুরগির ঠ্যাং চিবুতে চিবুতে পাঁচ-ছয়জন বন্ধুকে নিয়ে তুমি যখন মজার মুখভঙ্গি করে সেলফি মানে নিজেই নিজের ছবি তুলছ, মনে রেখো, অ্যালেক্স চ্যাকন তত দিনে তুলে ফেলেছেন ৩৬০ ডিগ্রির এক দুর্দান্ত ভিডিও সেলফি।

সেলফি সেলফির এ খেলায় আর সবাইকে গুনে গুনে গোল দিয়ে হারিয়ে দিয়েছেন অ্যালেক্স। তবে মন খারাপ কোরো না, তোমার বাথরুম সেলফি আর কিউট ফেস সেলফিগুলো তো অনেক দূরের কথা, উপস্থাপক ইলেন ডিজেনারেসের অস্কার সেলফিও অ্যালেক্সের পাশে পানি পাচ্ছে না।

ঝিমুতে থাকা সিংহের পাশে, সমুদ্রের নিচে স্কুবা ডাইভিং করতে করতে, বানজি জাম্প দেওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে, নায়াগ্রা জলপ্রপাতের পাশে পানির ছাঁট বাঁচিয়ে, উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় পা ঝুলিয়ে বসে, হাতির শুঁড়ের সঙ্গে করমর্দন করতে করতে, ট্রেনের দরজায় ঝুলতে ঝুলতে, স্কাইডাইভ দিতে দিতে—কত রকমভাবেই না সেলফি তুলেছেন তিনি। ৩৬টি দেশ, ৬০০ দিন, পাঁচটি মোটরসাইকেল, এক লাখ ২৫ হাজার ৯৪৬ মাইলের ড্রাইভ—এক নজরে এই হলো অ্যালেক্সের ভ্রমণপঞ্জি। লাঠির মাথায় একটা গো প্রো ক্যামেরা সঙ্গী করেই অ্যালেক্স ঘুরে বেড়িয়েছেন বিশ্বের মোটামুটি বেশির ভাগ দর্শনীয় স্থান।

সেলফি তুলেছেন এভারেস্টের বেসক্যাম্পে, ভারতের নানা রাজ্যে, বলিভিয়ার একদম পেটের ভেতর—যেখানে এমনকি জিপিএসও কাজ করে না, পেরুর মাচুপিচুসহ আরও কত জায়গায়। আর সেসব জায়গার ফুটেজ নিয়েই তৈরি করেছেন তিন মিনিটের ভিডিও। ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি—থ্রি ইয়ার এপিক সেলফি’ অ্যালেক্সের সেলফি ভিডিওর শিরোনামটা নামকরণের সার্থকতা নিয়ে আর একটা শব্দও খরচ করার প্রয়োজন নেই। আর এই ভিডিও ভাইরাল না হয়ে যায় কোথায়, দুই সপ্তাহে দেখা হয়েছে ৬২ লাখ বারের বেশি।

তবে হুট করেই মোটরসাইকেলে করে বেরিয়ে পড়লেন কেন তিনি? শুধু কি সেলফি তুলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়াই তাঁর উদ্দেশ্য? modernmotodiaries.com নামে অ্যালেক্সের এই ওয়েবসাইটে আছে সব জবাব। মোটো মানে মোটরসাইকেল ডায়েরিজ নামটা শুনেই আরেকটা কথা মনে পড়ে গেল না? চে গুয়েভারা আর তাঁর মোটরসাইকেল ডায়েরিজ। ঠিক ধরেছ, অ্যালেক্সেরও অনুপ্রেরণা তিনিই।

চের জন্মস্থান আর্জেন্টিনা থেকে শুরু করে বলিভিয়া, চিলি, দক্ষিণ আমেরিকার অনেকটা অংশই অ্যালেক্সও চষে বেড়িয়েছেন মোটরসাইকেলে করে। চের মতোই অ্যালেক্সও চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র। গাড়ি, টেলিভিশন, জামাকাপড়—বিক্রয়মূল্য আছে এমন আর যা যা থাকতে পারে একজন শিক্ষার্থীর, সবকিছুই বিক্রি করে অ্যালেক্স বেরিয়ে পড়েন এই অভিযানে। আমেরিকার টেক্সাসে ঘরবাড়ি ছেড়ে মোটরসাইকেলটাকে সঙ্গী করেই শুরু হয় তাঁর যাত্রা। ‘মৃত্যুঝুঁকি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, রাজনীতি, অপরাধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পার্কিং লটে ঘুমানো, টাকাপয়সা খোয়ানো—এই সবকিছুরই মোকাবিলা করতে হয়েছে তাঁকে। একই সময়ে তিনি ফান্ড জোগাড় করেছেন চ্যারিটির জন্য।’ তাঁর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায় এসব কথা। চিলড্রেন অব উগান্ডা নামের চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য তিনি টাকা তুলেছেন। আরও একটা ইচ্ছা ছিল তাঁর, ‘আমি যে অসাধারণ অভিজ্ঞতার স্বাদ পেয়েছি, আমার ভিডিওর মাধ্যমে সবার সঙ্গেই তা ভাগ করে নিতে চেয়েছি।’ এক টেলিভিশন সাক্ষাত্কারে বলেছেন তিনি।

অ্যালেক্স এখন কাজ করছেন আলোকচিত্রী ও বক্তা হিসেবে। এর পাশাপাশি মোটরসাইকেল অভিযানে নানা রকম সহায়তা দেয় এমন একটি প্রতিষ্ঠানেও কাজ করেন। তার মানে অ্যালেক্সের বাইকের পেছনে বসে তুমিও বেরিয়ে পড়তে পারো নতুন কোনো অভিযানে। যোগাযোগ করেই দেখো না। ‘ইয়োর এক্সপিডিশন সাউথ’ লিখে ইন্টারনেটে খুঁজলেই পাবে।

তথ্যসূত্র: মডার্নমোটোডায়রিজ ডটকম