বাংলা প্রবাদ প্রবচনের সাতকাহন

বাংলা প্রবাদ প্রবচনের ভান্ডার বিশাল, বৈচিত্র্যময় তো বটেই। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে, নতুন নতুন প্রযুক্তি আসার কারণে এই প্রবাদ প্রবচনের বেশ কিছু অংশ এদের প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। তবু লোকশিক্ষার কার্যকর উপাদান হিসেবে এদের আজও আবেদন ফুরায়নি। প্রবাদ প্রবচনগুলোর আসল রচয়িতার নাম আজ আর সঠিকভাবে জানার উপায় নেই। মুখে মুখে রচিত এসব প্রবাদ অনেক পরে লিখিতরূপে আবির্ভূত হয়। রামায়ণ, মহাভারত, নানা পৌরাণিক কাহিনি, লোককথা, বিভিন্ন মঙ্গলকাব্য এবং খনার রচনাকেও বাংলা প্রবাদ প্রবচনের আদি বীজতলা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকেরা। এখানে কয়েকটি প্রবাদের উৎস অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে।
অলংকরণ: শিখা

পিড়েয় বসে পেড়োর খবর

পেড়ো বলতে এখানে সুলতানি আমলের বাংলার রাজধানী পাণ্ডুয়া বোঝানো হয়েছে। সাধারণ মানুষের রাজধানী বা রাজা-বাদশাহর খবর নেওয়া অনধিকার চর্চার শামিল। পিড়েয় বসা শব্দটিতে রয়েছে অতি সাধারণ অবস্থার ইঙ্গিত।

অলংকরণ: শিখা

বড়র পিরিতি বালির বাঁধ, ক্ষণে হাতে দড়ি ক্ষণে চাঁদ

বড়লোকের সদিচ্ছা বালির বাঁধের মতো সহজেই ভেঙে পড়ে, অর্থাৎ তাদের সদিচ্ছা ক্ষণস্থায়ী। তাঁরা যখন সন্তুষ্ট থাকেন, তখন আকাশের চাঁদ হাতে তুলে দেন। কিন্ত্তু আবার একটু পরেই হাতে দড়ি দিতেও দ্বিধা করেন না। অর্থাৎ একটু খুশি হলেই কত উন্নতির আশা দেখান আবার একটু রুষ্ট হলেই হেনস্তার চূড়ান্ত করে ছাড়েন।

অলংকরণ: শিখা

ভবি ভুলবার নয়

শোনা যায়, অনেক আগে ভবানী বা ভবি নামে একটি বালিকা ছিল। তার আবদারে অতিষ্ঠ হয়ে তার বাবা-মা তাকে ভোলানোর জন্য এটা-সেটা দিয়েও সফল হননি। বিরক্ত হয়ে একসময় ভবিকে প্রহারও করা হলো। কিন্তু ভবি তার জেদ না ছেড়ে গোঁ ধরে বসেই রইল। এ ঘটনার পর উদ্ভব হয়েছে এই প্রবাদটি। কেউ যদি বহু সাধ্য সাধনার পরও জেদ না ছাড়ে তবে ‘ভবি ভুলবার নয়’ এ প্রবাদটি ব্যবহার করা হয়।

অলংকরণ: শিখা

বর্ণচোরা আম

কিছু কিছু আম পাকলেও হলুদ সোনালি বর্ণ ধারণ না করে কাঁচা আমের মতো সবুজ বর্ণ হয়ে থাকে। এ ধরনের আমকে বর্ণচোরা আম বলে। অর্থাৎ যে আম তার পরিণত অবস্থার রং লুকিয়ে রেখে কচি সবুজ থাকে। মানুষের মধ্যে যাদের বয়স বাড়লেও চেহারায় তেমন পরিবর্তন হয় না তাদের ব্যঙ্গার্থে বর্ণচোরা আম বলা হয়। কপট ব্যক্তিকেও বর্ণচোরা আম আখ্যা দিয়ে অন্যকে সতর্ক করে দেন তার অভিজ্ঞ শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

অলংকরণ: শিখা

বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁয়া

কচি বা তরুণ শালিক পাখির মতো ধাড়ি বা বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁয়া বা নতুন পালক ওঠে না। বৃদ্ধাবস্থায় কেউ যদি যুবকের মত কাজ করতে আগ্রহী হয়, তাহলে এই প্রবচনটি বৃদ্ধের প্রতি উচ্চারণ করা হয় পরিহাসের সুরে।

অলংকরণ: শিখা

লাথির ঢেঁকি কি চড়ে ওঠে?

পায়ের প্রবল চাপা দিয়ে যে ঢেঁকিকে ওঠাতে হয়, সে ঢেঁকি কি হাতের নরম চাপে ওঠে। এমন অনেক মানুষ আছে, যারা বাবা-বাছা বললেও কাজ পাওয়া যায় না। গাল বা মার দিলে তারা কাজ করে। এদের সম্পর্কে এই বাক্যটি প্রয়োগ করা হয়।