বাবা দি বস

বাবা আমাদের সুপারহিরো। আর এই সুপারহিরোদের চমকে দাও বাবা দিবসে। বাবা মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে মেয়ে সানজানা

বকা দিচ্ছ? দাও। আমারও নালিশ করার জায়গা আছে। বাবা বাড়ি ফিরুক, সব বলে দেব। তখন মজা বুঝবে। এই কথা বলে মুখ ভার করে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই—কখন বাবার ছায়া দেখব। বাবার থেকে বড় হিরো আর কে আছেন! হলিউড, বলিউড ফেল বাবার সামনে। কাউকে ঢিসুম-টিসুম খাওয়াতে চাইলে বাবাই মস্ত পালোয়ান। মেয়ে তাঁর রাজকন্যা ও ছেলে রাজপুত্র। তাই যত অভিমান-অভিযোগ বাবার সামনে করা চলে।

তবে তাই বলে এই না যে বাবাকে আমরা ভয় পাই না। যদি একটু উল্টাপাল্টা করতে যাই, তখনই মায়ের হুংকার—তোমার বাবা যদি শোনেন তাহলে কিন্তু...ব্যস, এটুকু শুনলেই ঘাম ছোটে। যদিও মা কখনোই বলেন না, বাবার কাছ থেকে কী শাস্তি পাওয়া যাবে। তবু কী এক অজ্ঞাত কারণে বাবা একটা ভয়ের নামও বটে।

তবে বাবারা কখনোই ঠিকভাবে বকা দিতে পারেন না। আসলে বকা দেওয়াটা যে আর্ট, সেটাই তাঁরা জানেন না—কখনো বেশি বকে ফেলেন, কখনো আবার রক্তচক্ষু করে তাকান কেবল। আর ওদিকে আমাদের অন্তর ছিঁড়ে কুটিকুটি হয়ে যায়। তবে তিনি যে রক্তচক্ষু-মার্কা চাহনি দেন, আমাদের মতো ত্যাঁদড় বাবুদের সিধে রাখার জন্য, তা কি আমরা বুঝি না? আমরা কি আর অত ছোট আছি! বাবারা বাইরে দিয়ে যতই রাগী, শক্ত ভাব দেখান না কেন, ভেতরে ভেতরে তাঁরা ভীষণ আবগপ্রবণ। তাঁদের চোখের পানি সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু আমাদের হাউমাউ কান্নার আশ্রয়স্থল বাবা। যেকোনো লড়াইয়ের প্রধান বিচারপতি বাবা। এমনকি আইসক্রিম খাওয়া থেকে শুরু করে পরীক্ষায় ডাব্বা খাওয়া—সবকিছুতেই বাবার আশকারা। কত কত গোপন দুষ্টুমির অনুমতিও মেলে তাঁর কাছ থেকে। তিনি বলে দেন, খবরদার! মা যেন না জানেন। তিনি আমাদের আদর দিয়ে মাথায় তোলেন, আবার মাথা থেকে যেন ব্যালেন্স হারিয়ে নিচে পড়ে না যাই, সেদিকেও খেয়াল রাখেন।

বাবার জন্য নিজেই আঁকিবুঁকি করে বানাতে পারো মগ

যেখানে জাঁকজমক করে মা দিবস, বন্ধু দিবস, ভালোবাসা দিবস পালন হচ্ছে, সেখানে বাবা দিবস তো অবশ্যই থাকতে হয়। সাধারণত জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস উদ্‌যাপন করা হয়। এই হিসাবে এ মাসের ২১ জুন হলো বাবা দিবস। আগে কিন্তু কেবল মা দিবস উদ্‌যাপন করা হতো। ধারণা করা হয়, ৫ জুন, ১৯০৮ সালে প্রথম বাবা দিবস উদ্‌যাপন করা হয়েছিল। আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় ১৯০৭ সালে খনিতে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় বহু মানুষ মারা গিয়েছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন বাবা। তাঁদের কথা স্মরণ করেই প্রথম এই দিবস উদ্‌যাপন করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সনোরা ডট নামের এক ভদ্রমহিলা মনে করলেন মা দিবসের মতো প্রতিবছর বাবা দিবসও থাকা প্রয়োজন। তখন জুনের ১৯১০ সাল তিনি শুরু করলেন বাবা দিবস উদ্‌যাপন। যদিও সে সময়ে বাবা দিবস তেমন জনপ্রিয় ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বাড়তে লাগল।

ছবি দিয়ে নানান কিছু বানিয়ে চমকে দিতে পারো

বাবার জন্য ভালোবাসা তো দিনে ২৪ ঘণ্টা করে সারা জীবন। তবু বছরের একটা দিনে একটু বাড়তি আহ্লাদ আর কি। এই বাড়তি আহ্লাদের অংশ হিসেবে বাবাকে কী উপহার দেওয়া যেতে পারে ভেবেছ? নিজের হাতে কিছু বানিয়ে দিতে পারলেই সবচেয়ে ভালো হয়। কাগজ দিয়ে তো কত কী বানানো যায়। রং-বেরঙের কাগজ দিয়ে কার্ড বানাতে পারো। এ ছাড়া পেনহোল্ডার, চাবির রিং, কাগজের বল বা পেপার ওয়েট, ক্যালেন্ডার, ফটোফ্রেম—কত্ত কত্ত আইডিয়া। অথবা কাগজ দিয়ে না হয় একটা গাড়িই বানিয়ে দিলে—গাড়ির ওপর লিখে দিলে বাবাকে কত ভালোবাসো। আবার এমনও করতে পারো, কয়েকটা কাগজ একটার পর একটা জোড়া দিয়ে একটা তিন ইঞ্চি মিনি ডায়েরি বানাতে পারো। এরপর ডায়েরির প্রতিটা পাতায় বাবার একটা করে গুণ লিখে দাও। ইশ্! বাবা যে তাঁর গুণের তালিকা দেখে কী খুশি হবেন! আর যদি ছবি আঁকতেও চাও, সেটাও চমত্কার হবে। বাবার ছবি আঁকতে পারো, অথবা বাবার কোনো পছন্দের ব্যক্তিত্বের ছবিও আঁকতে পারো। বাবাকে একটা মেডেল বা কাপ দিতে পারো—কাগজ দিয়েই বানানো যাবে। খেলোয়াড়দের যেমন কাপ দেয়, তেমন একটা মোটাসোটা কাপ বানিয়ে ওপর দিয়ে লিখতে পারো—‘পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা’। তবে যা-ই করো, বাবাকে একটা চিঠি লিখতে ভুলো না। মনের সব আবেগ ঢেলে একটা বিশাল চিঠি লিখে ফেলো। বাবার সঙ্গে বাড়তি আহ্লাদের দিন তো আর রোজ রোজ আসবে না।