বিভ্রান্তিকর জীবজন্তু

চেহারা-সুরত একই রকম হওয়ার কারণে নানা ঝামেলা সামলাতে হয় যমজদের। যেমন রুনুর দুষ্টুমির কারণে আস্ত চড় খেতে হয় নির্দোষ টুনুকে। কিংবা টুনুর অপরাধে বকুনি খেতে হয় গোবেচারা রুনুকে। চেহারা হুবহু এক হলে এ রকম আরও কত যে দুর্বিপাক আছে, তা যাঁরা যমজ ভাই বা বোনদের পাশাপাশি এলাকায় থাকেন, তাঁরাই জানেন। চেহারার কারণে বনের জীবজন্তু নিয়েও বেশ কিছু দুর্বিপাক আই মিন বিভ্রান্তি দেখা দেয়। যেমন: চিতা, লেপার্ড, জাগুয়ার—এই তিন প্রাণীকেই বাংলায় চিতাবাঘ নামে ডাকা হয়। এই তিনজনই বিড়াল পরিবারের সদস্য। কিন্তু তা হলেও এদের প্রজাতি আলাদা। আবার এদের চেহারা-সুরতেও রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য।

বিড়াল পরিবারের বড় সদস্যদের (বিগ ক্যাট) মধ্যে বাঘ ও সিংহের পরে জাগুয়ার সবচেয়ে বড়। বিশাল আকৃতিই একে বাকি দুই চিতাবাঘ নামধারী থেকে আলাদা করেছে। পূর্ণবয়স্ক জাগুয়ারের ওজন ৭০ থেকে ১০০ কেজি। লেজসহ দৈর্ঘ্য ছয় ফুট। উচ্চতা ২ দশমিক ৫ ফুট। সবচেয়ে শক্তিশালী কামড় দিতে পারা প্রাণীদের মধ্যে জাগুয়ারের স্থান চতুর্থ। এদের লেপার্ড থেকে আলাদা করার উপায় হচ্ছে এদের গায়ের কালো ছোপ। জাগুয়ারের গোল গোল প্রায় বৃত্তাকার ছোপগুলোর মাঝখানে কালো কেন্দ্র থাকে, যা লেপার্ডের থাকে না। এদের শুধু আমেরিকা মহাদেশেই পাওয়া যায়।

লেপার্ড আর জাগুয়ারের চেহারায় এতই মিল যে দুজনকে আলাদা করা কঠিন। জাগুয়ারের কপাল বিশাল আর চোয়াল চওড়া। বড় শিকার ধরতে এ দুটি তাদের বেশ সাহায্য করে। লেপার্ড ছোটখাটো প্রাণী শিকার করে। তাই এদের কপাল আর চোয়ালও বেশ ছোট। এদের ওজন সাধারণত সর্বোচ্চ ৯০ কেজি। দৈর্ঘ্য পাঁচ ফুট আর উচ্চতা ২ দশমিক ৫ ফুট হতে পারে।

দ্রুতগামী চিতাকে ব্যাঘ্র জগতের বোল্ট বলা যেতে পারে। চিতা লম্বা-চওড়ায় অন্য দুজনের মতো হলেও তুলনামূলকভাবে বেশ দুর্বল। এদের ওজন ৭৫ কেজি। ছোট চোয়াল আর ছোট থাবা দিয়ে এরা সাধারণত ছোটখাটো প্রাণীই শিকার করে। বিশাল দেহের তুলনায় এদের মাথা ছোট। আর পা-ও বেশ শুকনো। পায়ের নখ সব সময় বেরিয়ে থাকে বলে এরা কুকুর-জাতীয় প্রাণী বলে ধারণা অনেকের। কিন্তু এরা বিড়াল পরিবারেরই সদস্য। নাকের দুপাশে লম্বা কালো দাগ এদের অন্য দুজন থেকে আলাদা করেছে। চিতা একমাত্র বিগ ক্যাট, যারা গর্জন করতে পারে না।

Crocodile ও Alligator দুটি প্রাণীরই বাংলা কুমির। কিন্তু এরাও আলাদা প্রাণী। এলিগেটরের চোয়াল ইংরেজি U অক্ষরের মতো। এদের নিচের চোয়ালের দাঁতগুলো দেখা যায় না। ক্রোকোডাইলের চোয়াল V আকৃতির। টুথপেস্টের বিজ্ঞাপনে পোজ দেওয়ার মতো এরা সব সময়ই দাঁত বের করে রাখে। শুধু আমেরিকা মহাদেশে এলিগেটরের বসবাস। ক্রোকোডাইল পৃথিবীর মোটামুটি সব দেশেই পাওয়া যায়।

ছুঁচো (অনেকে চিকা বলেন) আর ইঁদুরের চেহারায় ব্যাপক মিল। অনেকের ধারণা, এ দুটো একই জাতীয় প্রাণী। কিন্তু এরা সম্পূর্ণ আলাদা জাতের। ইঁদুরের দাঁত বেশ ধারালো। সময় পেলেই এরা সবকিছু কাটাকুটি করে। তাই এরা রোডেন্ট (Rodent) বর্গের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ছুঁচো সোরিকমরফা (Soricomorpha) বর্গের অন্তর্ভুক্ত। ছুঁচোর আত্মীয়স্বজনের বেশির ভাগই মাটির নিচে বসবাস করে। এরা চোখেও খুব কম দেখে বা অন্ধ।

পান্ডা নামটা শুনলেই মনে ভাসে সাদা ভালুক-জাতীয় এক প্রাণীর চেহারা। কিন্তু পান্ডা নামটি আসলে সৃষ্টি হয়েছিল লাল পান্ডাদের জন্য। সাদা পান্ডাদের বলা হয় জায়ান্ট পান্ডা। এরা ভালুক-জাতীয় প্রাণী। অন্যদিকে, লাল পান্ডা হচ্ছে রেকুন-জাতীয় প্রাণী। একই পূর্বপুরুষ থেকে রেকুন আর লাল পান্ডাদের সৃষ্টি। কিন্তু তা সত্ত্বেও রেকুনদের বাস আমেরিকা মহাদেশে। আর লাল পান্ডাদের শুধু হিমালয়ের আশপাশে দেখা যায়।