
দীপার মনটা বড্ড খারাপ। মা বকা দিয়েছে। কারণ স্কুলের রেজাল্ট। পাশের বাসার আবীর গণিতে ফাটাফাটি নম্বর পেলেও দীপা স্টার মার্কসও পায়নি। বকাঝকার এমন এক ক্রান্তিকালে বাসার কলবেলটা বেজে উঠল। ক্রিং ক্রিং ক্রিং। দীপা দরজা খুলে দেখল, ডাকপিয়ন দাঁড়িয়ে। হাতের ঝোলা থেকে ঝকমকে একটা খাম বাড়িয়ে দিল তার দিকে। ওমা! এ দেখি আমেরিকা থেকে তার বন্ধু রন পাঠিয়েছে। মুহূর্তেই দীপার মন ভালো হয়ে গেল। মুখখানা হয়ে গেল রীতিমতো ঈদের চাঁদ।

তোমাদের অনেকেরই হয়তো দীপার মতো এমন অভিজ্ঞতা আছে! দেশে বা বিদেশে প্রায়ই চিঠি লিখো বন্ধুদের। যে চিঠি পাঠায় সে হয়তো তোমাকে কোনো দিন দেখেনি, কিন্তু তোমরা খুব অন্তরঙ্গ বন্ধু! বিশ্বজুড়ে এই শখের নাম পত্রমিতালি বা পেন ফ্রেন্ডশিপ। যখন কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের এত আধিপত্য ছিল না তখন এই শখ দারুণ জনপ্রিয় ছিল। দেশ-বিদেশের বন্ধুরা একে অপরকে চিঠির সঙ্গে পাঠাত সেই দেশের ভিউকার্ড, স্ট্যাম্পসহ নানা স্মারক উপহার। অনেকেই ভাবতে পারো, ইন্টারনেটের এই যুগে যেখানে ইলেকট্রিক মেইল করে সব জানা যায়, ফেসবুকে এক ক্লিকে বন্ধু বানিয়ে ফেলা যায়, সেখানে আবার কষ্ট করে হাতে-কলমে চিঠি লিখে কেন আরও বন্ধু বানাতে হবে। তাদের জন্য বলি, হাতে লেখা চিঠির গুরুত্বই অন্য রকম। কলমের কালিতে গুটি গুটি হরফে যে বন্ধুত্বের অনুভূতির কথা লেখা যায়, তা কখনো ই-মেইলের যান্ত্রিকতায় ফুটে ওঠে না। তাই পত্রমিতালি এখনো বেশ জনপ্রিয়।

তুমি হয়তো জানো না একজন আমেরিকান বাংলাদেশ সম্বন্ধে কী ভাবেন, আবার আফ্রিকার আমাজন সম্বন্ধে তোমার জানার বড় ইচ্ছা, মধ্যপ্রাচ্যের ‘সারিদ’ কিংবা দিল্লির লাড্ডু খেতে কেমন তোমার জানতে ইচ্ছা করে। তুমি হয়তো অ্যা অ্যা করে মুখস্থ করে পরীক্ষা দিতে যাও, আর একদিন তুমি জানলে যে ইউরোপের শিক্ষাব্যবস্থায় মুখস্থের কোনো বালাই নেই! ব্যক্তিগতভাবে তোমার বন্ধুর সঙ্গে ভালো লাগা, আনন্দ ও কষ্টগুলো ভাগাভাগি করতে চাও, তবে তোমার কয়েকজন পেনপাল লাগবেই! এ ছাড়া পত্রমিতালি করলে তোমার ভাষার ওপর দক্ষতা বাড়বে, গুছিয়ে লেখার ক্ষমতা বাড়বে, বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি সম্বন্ধে ভালোভাবে জানতে পারবে। আর তোমার যদি ডাকটিকিট জমানোর শখ থাকে তবে পত্রমিতালির মাধ্যমে তোমার এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে। এখন হয়তো তুমি আমায় বলবে, হ্যাঁ, আমারও পত্রবন্ধু চাই—তা কীভাবে শুরু করব?
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকায় দেখবে পত্রমিতালির একটা কলাম থাকে। সেখান থেকে তোমার বয়স উপযোগী ঠিকানা নিয়ে চিঠি পাঠানো শুরু করতে পারো। আর তোমার যদি ইন্টারনেট সংযোগ থাকে তবে তো কথাই নেই! ইন্টারনেট সংযোগ বাড়িতে না থাকলে বাবা-মাকে বলে সাইবার ক্যাফেতে যেতে পারো। তারপর পেনপাল সাইটে রেজিস্ট্রেশন করো। ওখানে তোমার বয়সী অনেকের ছবিসহ ই-মেইল আইডি পাবে। সেখানে তাদের বৃত্তান্তও দেওয়া থাকে। তোমার কাজ হবে তোমার বয়সের এবং পছন্দের সঙ্গে খাপ খায় এমন কয়েকটা বন্ধুর ই-মেইল আইডি নিয়ে ইংরেজিতে চটপট করে একটা চিঠি টাইপ করে ফেলা। তারপর পাঠিয়ে দাও। এভাবে কয় দিন ই-মেইলে পত্র আদান-প্রদান করো। একসময় খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেলে তার বাড়ির ঠিকানা বা স্নেইল মেইল জানতে চাও। যদি সে দেয় তবে আর দেরি কেন? কাগজ-কলম নিয়ে বসে যাও। তোমার দেশের ঐতিহ্য বহন করে এমন কয়েকটি ডাকটিকিট লাগিয়ে পাঠিয়ে দাও বন্ধুর ঠিকানায়।
চাইলে চিঠির সঙ্গে তোমার পছন্দের স্টিকার, দু-একটা ছবিও দিয়ে দিতে পারো। আর পেনপালদের চিঠি লেখার নিয়ম তোমার অন্য বন্ধুদের কাছে চিঠি লেখার মতোই।
হয়ে গেল বন্ধু বানানো! ফেসবুকে অনেকগুলো পেনপাল গ্রুপ আছে, সেখানেও তুমি নিজের সম্বন্ধে এবং কেমন বন্ধু চাও তা পোস্ট করে দিতে পারো। সে ক্ষেত্রে তোমার ই-মেইল ঠিকানাটা দিতে ভুলে যেয়ো না কিন্তু। আবার অন্যদের পোস্টও দিতে পারো।
কয়েকটি পেনপাল সাইটের ঠিকানাও দিয়ে রাখলাম। এসবে ঢুঁ মারার পাশাপাশি আরও অনেক সাইট খুঁজে পাবে, সেখানে পেনপাল করা যায়।
penpalworld.com
interpals.net
penpalsnow.com
studentsoftheworld.info
hipenpal.com

তবে পত্রবন্ধু বানানোর সময় কয়েকটা বিষয় খেয়াল রাখবে—
১. ইংরেজিতে ভালো হতে হবে। সে জন্যে বেশি বেশি তোমার ইংরেজি বই পড়তে হবে। ইংরেজি গল্পের বই, ম্যাগাজিনও পড়তে পারো।
২. কেউ যদি টাকা চেয়ে জাংক মেইল পাঠায় তবে তাকে পাত্তা দেবে না। কারণ, এটা মূলত একধরনের প্রতারণা।
৩. চিঠি লেখার সময় ভাষা যথাসম্ভব প্রাঞ্জল করার চেষ্টা করবে।
৪. তোমার আঁকা ছবি কিংবা ঈদ কার্ডটি বন্ধুকে পাঠিয়ে দিতে পারো। তাহলে বন্ধুত্ব আরও গভীর হবে।
৫. বাংলাদেশের গর্ব হলো মুক্তিযুদ্ধ ও আমাদের বাংলা ভাষা, তাই এ সম্পর্কে চিঠিতে লিখতে পারো।
৬. প্রথম পরিচয়ে কখনোই পত্রমিতা বন্ধুর সঙ্গে একা একা দেখা করতে যাবে না।
৭. কোনো বিষয়ে সন্দেহ হলে অবশ্যই বড়দের সঙ্গে কথা বলবে।
এই নেশায় যদি তোমাকে একবার পেয়ে বসে, তবে তুমি অচিরেই গ্লোবাল ভিলেজের একজন সক্রিয় সদস্য হয়ে যাবে। সবাইকে তখন বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে, আমার পুরো পৃথিবীজোড়া বন্ধু!
শুভকামনা রইল তোমার জন্য।