বিড়ালের সঙ্গে বিশ্বভ্রমণ

পৃথিবীর বেশির ভাগ সাইক্লিস্টই সাইকেল চালিয়ে বিশ্বভ্রমণের স্বপ্ন দেখে। স্কটল্যান্ডের ডিন নিকলসন তেমনই একজন সাইক্লিস্ট। বিশ্বভ্রমণের স্বপ্নপূরণ করতে একদিন তিনি বেরিয়ে পড়লেন সাইকেল নিয়ে। সাইকেল চালিয়ে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, ইতালি ও ক্রোয়েশিয়া পাড়ি দিয়ে পৌঁছালেন বসনিয়ার কাছাকাছি। বর্ডারের কাছে পৌঁছাতেই ডিন শুনলেন বিড়ালের ডাক। পেছনে ফিরতেই দেখেন, জনশূন্য জায়গায় ছোট্ট এক বিড়াল। আসছে তাঁর পেছন পেছন। যেখানেই যাচ্ছেন ডিন, সঙ্গে লেগেই আছে বিড়ালটা। কী করবেন বুঝতে পারলেন না ডিন। তিনি বেরিয়েছেন বিশ্বভ্রমণে। বিড়ালের পেছনে পড়ে থাকলে চলবে? তবু সাইকেল থামিয়ে বিরতি নিলেন ডিন। নিজের রসদ থেকে খাবার দিলেন ছোট্ট বিড়ালটিকে। ভাবলেন, খাবার পেলেই নিজের কাজে ফিরে যাবে বিড়ালটা। কিন্তু বিড়াল ছাড়ল না ডিনকে। তখনই ডিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, বিড়ালটাকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন। বিশ্বভ্রমণের বাকি পথ পাড়ি দেবে বিড়ালটাও। ডিনের প্রিয় মুভি লায়ন কিং। মুভির জনপ্রিয় চরিত্র নালা—একটা সিংহী। তার নামেই ডিন বিড়ালটার নাম রাখলেন ‘নালা’। শুরু হলো ডিন আর নালার বিশ্বভ্রমণ।

বিশ্বভ্রমণে বের হলে কত প্রস্তুতির ব্যাপার আছে। কখন কোথায় কী দরকার হবে, তা তো বোঝার উপায় নেই। স্বাভাবিকভাবেই ডিনের সাইকেলভর্তি অনেক জিনিসপত্র। তাই সঙ্গে করে বিড়ালটিকে নেবেন না বলেই মনস্থির করেছিলেন তিনি। কিন্তু বিড়ালটা এত আদুরে, কিছুক্ষণ পর সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্যই হন ডিন। এত কিছুর মধ্যেও সাইকেলের পেছনে বিড়ালটির জন্য ছোট্ট একটি জায়গা বের করে ফেললেন। নালাকে সঙ্গে করে সাইকেলে প্যাডেল দিতে শুরু করলেন আবার।

কিছুদূর সাইকেল চালানোর পর ডিন টের পেলেন, নালা সাইকেলের পেছনে নেই। সে চড়ে বসেছে ডিনের কাঁধে। আসলে নালা চাইছিল ডিনের কাছাকাছি থাকতে।

কিন্তু বিড়ালটার কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, তার জন্য কী করা প্রয়োজন, সেগুলো তো জানেন না ডিন। তাই মন্টেনেগ্রোতে পৌঁছেই একজন পশুচিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলেন নালাকে। সেখান থেকেই জানতে পারলেন, নালার বয়স মাত্র সাত সপ্তাহ। প্রয়োজনীয় কিছু চিকিৎসা শেষে মন্টেনেগ্রোতেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ডিন, সঙ্গে রইল ছোট্ট নালা। সেখানে তাঁবু টানানোর কিছুক্ষণ পরই ডিনের বুকের ওপর ঘুমিয়ে পড়ল নালা। অনেকটা পথ সাইক্লিং হয়েছে। একটু তো বিশ্রাম দরকার!

সাইকেলে প্রতিদিন সাত ঘণ্টা কাটত ডিন আর নালার। বেশির ভাগ রাতই তারা কাটাত তাঁবুতে। দ্রুতই ডিনের প্রিয় ভ্রমণসঙ্গী হয়ে উঠল নালা। সাইকেলের যাত্রাটা মানিয়ে নিল খুব ভালোভাবেই। পদোন্নতিও হয়েছে তার, সাইকেলের সামনে বসা শুরু করল সে। অবশ্য সামনে বসে নালা বেশির ভাগ সময়ই কাটায় সূর্যের আলোয় গা এলিয়ে। মাঝেমধ্যে আবার সাইকেল চালাতে থাকা ডিনের মনোযোগ সরিয়ে দেয় নালা। তবে ডিন দক্ষ চালক। লম্বা যাত্রায় সতর্ক কীভাবে থাকতে হয়, তা তাঁর জানা। ডিন বলেন, ‘সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, নালাকে নিয়ে আমি এখনো একবারও সাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হইনি!’

সাইকেল চালিয়ে দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরতে ঘুরতে ছোট্ট বিড়াল নালার সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব জমে ওঠে ডিনের।

একবার আলবেনিয়ার রাস্তায় সাইকেল চালানোর সময় ঝড়ের মুখে পড়লেন তাঁরা। ধকল সামলাতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ে নালা। চিকিৎসক জানালেন, বুকে ইনফেকশন হয়েছে নালার। প্রয়োজন বিশ্রাম। আর শুকনো, উষ্ণ বাসস্থান। খুব সমস্যায় পড়ে গেলেন ডিন। তিনি বেরিয়েছেন বিশ্বভ্রমণে। এখানে শুকনো, উষ্ণ জায়গা পাবেন কোথায়? বিশ্বভ্রমণের অনেকটা পথ বাকি তখনো। থামার উপায় নেই।

কিন্তু ডিন কোনোভাবেই নালাকে হারাতে চাইছিলেন না। সিদ্ধান্ত নিলেন, ভ্রমণে বিরতি নেবেন। শুধু নালার জন্য একটি হোস্টেলে তিন সপ্তাহ থাকলেন ডিন। খুব যত্নে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে নালা। আবার শুরু হয় সাইকেলের যাত্রা। গ্রিসে পৌঁছে নালার জন্য পোষা প্রাণীর পাসপোর্টের ব্যবস্থা করেন ডিন, যেন নালা সব সময় তাঁর পাশেই থাকে।

নালাকে ছাড়া কোথাও যাওয়ার কথা ডিন আর কখনো ভাবেননি। ডিন বাড়ি যান অথবা অ্যাডভেঞ্চারে, নালা আর সাইকেল ঠিকই থাকে সঙ্গে। নালা আর সাইকেল নিয়ে আরও অনেক অনেক পথ পাড়ি দিয়ে চান ডিন নিকোলাস।

তোমার পোষা প্রাণীকে সঙ্গে করে একবার সাইক্লিংয়ে বেরোবে নাকি? তবে সাবধান, রাস্তায় বের হওয়ার আগে অবশ্যই ফাঁকা কোনো জায়গায় প্র্যাকটিস করে নেবে।

সূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য ডোডো