বেথানির কাগুজে ভাস্কর্য

হাউ কুড শি ও বানি

বই সব সময়ই পাঠকের মনে কল্পনার এক জগৎ তৈরি করে। তবে বেশির ভাগ পাঠকের এই কল্পনার জগৎ আটকে থাকে বইয়ের পাতায়। কিন্তু পাঠক হিসেবে বেথানি বিকলে এই ক্ষেত্রে আলাদা। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী এই প্রচ্ছদশিল্পী এবং ডিজাইনার অভিনব এক উপায়ে বই নিয়ে নিজের কল্পনাকে বাস্তব শিল্পে রূপ দেন। উপায়টা হয়তো অদ্ভুত মনে হতে পারে, তবে বেথানি কাজটি করেন একধরনের ভাস্কর্য বানিয়ে। মজার বিষয় হলো, বই নিয়ে তৈরি সেই ভাস্কর্য দাঁড়িয়ে থাকে খোলা বইয়ের ওপর!

ক্রিসমাস ট্রি, ফায়ারপ্লেস, ঘন জমাট বাঁধা তুষার কী নেই তাঁর ভাস্কর্যে! এমনকি ফায়ারপ্লেসে জ্বলতে থাকা আগুনও চোখে পড়ে। এখন প্রশ্ন হলো, এই দারুণ সুন্দর ভাস্কর্য বেথানি বানান কী দিয়ে।

শুনলে চমকে উঠবে, এই শিল্পী অসাধারণ সব ভাস্কর্য বইয়ের ওপর বানান শুধু পুরোনো কাগজ, ছেঁড়া ম্যাগাজিন বা পুরোনো দৈনিক পত্রিকা ব্যবহার করে। অথচ, প্রতিটা ভাস্কর্য এত জীবন্ত যে দেখলেই মুগ্ধ হয়ে যেতে হয়। বিশ্বাসই হতে চায় না এত সূক্ষ্ম কাজ শুধু কাগজ ব্যবহার করে করা সম্ভব।

সাফোক সামার

ভাস্কর্যগুলোর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্যের কথা এবার বলা যাক, সবগুলো ভাস্কর্য একেকটা দৃশ্য বা গল্প বলে। আর সেই গল্প বা দৃশ্যের উৎস হলো সেই বই, যার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে ভাস্কর্যগুলো। গোলমেলে মনে হচ্ছে? উদাহরণ দিয়ে বলি, লেখক জন টেট অ্যাপলবাইয়ের লেখা ‘সাফোক সামার’ বইয়ে বেথানি যে ভাস্কর্য বানিয়েছেন, তাতে দেখা যায় গ্রীষ্মের দিনে বাগানে ফুটে থাকা গোলাপ আর সুন্দর এক রাজকীয় মহল, যেটা সাফল্ক সামার বইয়ের একটি দৃশ্য। বই নিয়ে এমন আরও প্রচুর ভাস্কর্য তৈরি করেছেন বেথানি বিকলে।

দি বোন ইয়ার্ড

এবার জানা যাক এই দারুণ পরিকল্পনা তাঁর মাথায় এল কী করে? উত্তরে বেথানি বলেন, একবার একটি বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকার কাজ পান তিনি। তবে প্রচ্ছদ আঁকতে গিয়ে খেয়াল করেন শুধু ছবি দিয়ে একটা বইকে পুরোপুরি প্রকাশ করা কঠিন। তখন বেথানি চেষ্টা শুরু করেন বাস্তবিক কিছু করার। আর খুব দ্রুতই জেফারসন ব্যাসের লেখা ‘দ্য বোন ইয়ার্ড’ বইয়ের ওপর বানিয়ে ফেলেন তাঁর প্রথম ভাস্কর্য। বেকলি আরও বলেন তাঁর এই শিল্পকর্মগুলো যত নিখুঁত হয়, ততই তিনি এক জাদুকরে পরিণত হতে থাকেন। যে একধরনের মায়ার খেলায় আচ্ছন্ন করছে সবাইকে। এভাবেই বেকলি তার কাজে খুঁজে নেন আনন্দ। নিজ হাতে বানানো প্রতিটা ভাস্কর্য দিয়ে বলেন বইয়ের গল্প, সবার সামনে নিয়ে আসেন কল্পনার এক নিজস্ব জগৎ। সেই জগৎ এতটাই প্রাণবন্ত আর বাস্তব যে মুগ্ধ হয়ে যেতে হয়।

অল দ্য ব্রাইট প্লেসেস

শিল্পদৃষ্টিতে দেখলে বেকলির এই ভাস্কর্যগুলো কথা বলে, জানান দেয় বইয়ের মাঝে লুকিয়ে আছে কী ধরনের অনুভূতি! যেমন সিলভিয়া পাথের লেখা ‘দ্য বেল জার’-এর ওপর তাঁর তৈরি করা ভাস্কর্যে এক বয়ামবন্দী মেয়েকে দেখা যায়, যে নিজের ভেতর আটকে পড়া মানুষের উদাহরণ। এভাবেই বেথানি তাঁর অসামান্য কাগুজে শিল্প দিয়ে মন জয় করে নিয়েছেন সবার।

তুমিও চাইলে শুরু করে দিতে পারো বই নিয়ে এই ভাস্কর্য বানানোর কাজ। তবে শুরু করার আগে ঢুঁ মেরে আসতে পারো বেথানি বিকলের ব্লগে। সেখানে সন্ধান পাবে তাঁর সব কাগুজে শিল্পকর্মের।

তথ্যসূত্র: বোরডপান্ডা