ভবিষ্যতের সাইকেল

১৮১৭ সালে যখন সাইকেল আবিষ্কার করা হয়, সে সময় কেউই হয়তো বর্তমান নকশা ও প্রযুক্তির সাইকেল কল্পনাও করেনি। সময়ের বিবর্তনে বদলেছে সাইকেলের নকশা, হয়েছে আকর্ষণীয়। শুধু নকশা নয়, বদলে গেছে সাইকেলের সংজ্ঞাও। বাজারে এখন হাজার রকম সাইকেল। তবে বর্তমানে আমরা যেসব সাইকেল দেখছি, সেসবই–বা কত দিন থাকবে? সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাবে দিন, বদলাবে সাইকেল। ১০০ বা ২০০ বছর পর সাইকেল কেমন হবে, সেটা হয়তো বলা কঠিন। তবে অদূর ভবিষ্যতে সাইকেল কতটা বদলাচ্ছে, তা এখনই অনুমান করা যায়। কেমন হবে সেসব সাইকেল?

অডি ই-বাইক

চার চাকার গাড়ি তৈরির জনপ্রিয় কোম্পানি অডি ‘ই-বাইক’ বা ‘ইলেকট্রনিক বাইক’ নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে অনেক দিন থেকেই। নামের সঙ্গে ইলেকট্রনিক আছে বলে সাইকেলটি শুধু বিদ্যুতের সাহায্যেই চলবে, বিষয়টা এমন নয়। ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনের পাশাপাশি প্যাডেল ব্যবহার করেও চালানো যাবে এই সাইকেল। পেছনের চাকায় ব্যবহার করা হয়েছে মোটরসাইকেলের গিয়ার। ইলেকট্রনিক ইঞ্জিন ব্যবহার করে প্রায় ৮০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে চালানো যায় এই সাইকেল। অন্যদিকে প্যাডেল দিয়ে ৪০-৪২ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে চালানো সম্ভব। অন্যান্য ইলেকট্রনিক বাইকের তুলনায় অডি ই-বাইক অনেকটাই হালকা।

কার্বন ফাইবারের ব্যবহারে তৈরি হয়েছে চাকা। স্পোক ও হাব সাধারণ সাইকেলের চেয়ে একদমই ভিন্ন রকম। অ্যালুমিনিয়াম ও কার্বন ফাইবার ব্যবহারের ফলে অডি ই-বাইক অন্য সব বাইসাইকেল, এমনকি কিছু মোটরসাইকেলের চেয়েও বেশি স্ট্রং!

সরাসরি মোবাইল অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত করা যায় এই স্মার্ট বাইসাইকেল। হ্যান্ডেলবারের একটু নিচেই আছে একদম ছোট্ট এক ডিসপ্লে। অ্যাপের সাহায্যে পাঁচটি আলাদা আলাদা মুডে চালানো যায় অডি ই-বাইক। স্টান্টের উপযোগী এই সাইকেলের আছে আরও অনেক অনেক ফিচার!

সাইক্লোট্রন

রাস্তায় হুট করে সাইকেলের টিউব ফেটে যাওয়াটা সাইক্লিস্টদের জন্য বিশাল এক সমস্যা। তবে ভবিষ্যৎ সাইক্লিস্টদের বোধ হয় এমন সমস্যায় আর পড়তে হবে না। ‘সাইক্লোট্রন’ চালাতে চাকার ভেতরে বাতাসের কোনো প্রয়োজনই হয় না। পলিমার টায়ার দিয়ে বানানো এই চাকায় নেই কোনো স্পোক, নেই কোনো হাব! স্পোক ও হাব ছাড়া বানানো প্রথম বাইসাইকেল এটি।

সাইক্লোট্রন তৈরির পেছনে তিন বছর খেটেছে আমেরিকান একটি দল। স্পোক ও হাববিহীন চাকায় বিশাল একটা অংশ ফাঁকা থাকে। এই সাইকেলে সেই ফাঁকা অংশ ব্যবহারেরও সুযোগ আছে। বিশেষ ঝুড়ি ও চেয়ার জুড়ে দেওয়া যায় চাকার ফাঁকা অংশ দিয়ে। বিশেষ ঝুড়ি ও চেয়ার—দুটোই সাইক্লোট্রনের পণ্য।

সাধারণ সাইকেলে চেইন খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে সাইক্লোট্রনে প্যাডেলের আশপাশে নেই কোনো চেইন। সেখানে বসেছে ইলেকট্রনিক ১৮ গিয়ারের বক্স। ইলেকট্রনিক বাইকগুলোর মতো সাইক্লোট্রনের সঙ্গেও অ্যাপের সাহায্যে স্মার্টফোনের সংযোগ দেওয়া যায়। সাইকেলের নিরাপত্তাসহ আরও অনেক কাজে আসে এই প্রযুক্তি। এ সাইকেলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে, রাতে সাইকেল চালানোর সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাকার মধ্যে থাকা এলইডি বাতি জ্বলে ওঠে। রাতের অন্ধকারে দুটো চাকা জ্বলতে জ্বলতে এগিয়ে যাচ্ছে, যেন আলোর গতিতে চলছে সাইকেল!

টেসলা বি

অডির মতো ‘টেসলা’ও জনপ্রিয় এক কোম্পানি। দারুণ সব গাড়ি বানিয়ে মাঝেমধ্যেই বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় টেসলা। এবারও তাক লাগিয়েছে। তবে গাড়ি দিয়ে নয়, সাইকেল দিয়ে। ‘টেসলা বি’ তাদের নতুন একটি ভাবনা। অডি ই-বাইক ও সাইক্লোট্রন সাইকেল—দুটিরই বাণিজ্যিক উৎপাদন হয়েছে। তবে টেসলা বি ভাবনাটি একদমই প্রথম ধাপে আছে। মাত্র এর নকশা ও প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশ পেয়েছে। এই সাইকেলই হবে ভবিষ্যতের বাইসাইকেলের প্রথম ঝলক। ইতিমধ্যেই টেসলা বির চোখধাঁধানো নকশা সাড়া ফেলেছে ইন্টারনেট দুনিয়ায়।

টেসলা বি দুই ভাবে ব্যবহার করা যাবে। সাধারণ সাইকেলের মতো ব্যবহারের পাশাপাশি ‘অটো পাইলট’ মুডেও চলবে এই সাইকেল। সাইকেলটি চলতে হলে প্রয়োজন হবে না চালকের। নিজে নিজেই আরোহীকে নিরাপদে পৌঁছে দেবে গন্তব্যে। টেসলা বির প্রথম ঝলকে দেখা গেছে, সাইক্লিস্টের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ প্রযুক্তি যুক্ত হবে এই সাইকেলে। অন্যান্য ইলেকট্রনিক বাইকের মতো এটিও সাধারণ সাইকেলের চেয়ে বেশি গতিসম্পন্ন হবে।

ভবিষ্যতে সাইকেলের সংজ্ঞা যে অনেকটাই পাল্টে যাবে, তা এখনই স্পষ্ট টের পাওয়া যাচ্ছে। হয়তো অডি ই-বাইক, সাইক্লোট্রন ও টেসলা বির মতো আরও অনেক সাইকেল আসবে। একদম নতুন জাতের সাইকেলও চলে আসতে পারে, যা আমরা এখনো কল্পনা করতে পারিনি। যতই বদলাক, প্রত্যাশা থাকবে সাইকেল বাহনটা অন্তত যেন চিরদিনই পরিবেশবান্ধব থাকে, যেন আমাদের সুস্থ রাখে।