ভৌতিক পুতুল

পুতুল কে না খেলেছে ছোটবেলায় ! সবাই পুতুল খেলেছে । কেউ কেউ আবার পুতুলকে ভালোবেসে পুতুলের সুন্দর নাম রাখে, সেই নাম ধরে পুতুলকে ডাকে, পুতুলের সঙ্গে গল্প করে। কিন্তু কিছু পুতুল আছে, যারা পরিচিত ভয়ংকর হিসেবে। নানা রকম ভৌতিক ঘটনা নাকি ঘটিয়েছে এই পুতুলগুলো। প্রমাণ যদিও নেই, তবে আছে অনেক গল্প। তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র। তেমন কিছু পুতুলের কথাই বলব আজ।

রবার্ট

গায়ে ধবধবে সাদা নাবিকের পোশাক পরা, মাথায় টুপি—এ নিয়েই রবার্ট। গোলগাল মুখ, কালো গোলগোল চোখের রবার্ট দেখতে বেশ মায়াবী। প্রথম দেখাতেই সবাই নিজের পুতুল হিসেবে পেতে চাইবে এই রবার্টকে। রবার্টের মালিক ছিলেন রবার্ট অটো নামের এক লেখক এবং চিত্রশিল্পী। ছোটবেলায় বাড়ির এক কর্মচারীর কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন পুতুলটি। ভালোবেসে নিজের নামেই রাখেন পুতুলের নাম। পুতুলটি ছিল ইউজিনির সব সময়ের সঙ্গী। এমনকি পুতুলটার সঙ্গে কথাও বলতেন তিনি। ইউজিনির দাবি, পুতুলটাও কথা বলতে পারে। শুরুতে তার বাবা-মা এটাকে ছোট মানুষের খেয়ালি বলে উড়িয়ে দিয়েছিল, কিন্তু পরে তাঁরাও দাবি করেন, আসলেই রবার্ট কথা বলে। শুধু তারাই নয়, অনেকেই নাকি কথা বলতে দেখেছে রবার্টকে।

প্রায় ১১১ বছর বয়স এই রবার্টের। রবার্ট আদৌ কথা বলে কি না তা নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ১৯৯৮ সালে রবার্টকে নিয়ে ‘চাইল্ড প্লে’ নামে সিনেমাও তৈরি হয়। বর্তমানে রবার্ট ফ্লোরিডার ইস্ট মার্টেলো মিউজিয়ামের কাচের ঘরে সাজানো আছে। কিন্তু সেখানে রবার্ট একেবারেই নীরব। রবার্টের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছেন কোরি কনভারিতো নামের একজন নারী। দীর্ঘদিন ধরেই রবার্টকে দেখছেন তিনি, তিনিও বরাবরই নীরব দেখেছেন রবার্টকে। এমনকি বছরে এক-দুবার যখন কাচের বাক্স থেকে বের করে পুতুলটা পরিষ্কার করেন কোরি, তখনো নীরবই থাকে রবার্ট। কোরিও কখনোই কোনো রকম ভয় বা অস্বস্তিবোধ করেননি।

অ্যানাবেল

চুলে দুই বেণি, মুখে একটু হাসি—কাপড়ের তৈরি খুব সাধারণ একটা পুতুল অ্যানাবেল। ছোট্ট এই পুতুলটিকে ঘিরেও রহস্য খুঁজে পান অনেকে। ১৯৭০ সালে মেডিকেল শিক্ষার্থী এড এবং লরেইন ওয়ারেন উপহার হিসেবে পান এই পুতুলটাকে। এরপরই পুতুলটার মধ্যে অদ্ভুত আচরণ লক্ষ করেন তাঁরা। বাড়িতে নানা দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে। প্রেতচর্চা করে এমন একজন ব্যক্তি ওয়ারেনদের বলে, অ্যানাবেল হিগিন্স নামের একটি মৃত মেয়ের আত্মা আছে এই পুতুলটার ভেতর, সে জন্যই এটা অভিশপ্ত! কথিত আছে, অ্যানাবেল শুধু কথাই বলত না, লিখতেও পারত। তার লেখা চিরকুট পাওয়া যেত বাড়িময়। রাতের বেলা সে এক রুম থেকে অন্য রুমে ঘুরে বেড়াত। বর্তমানে আলোচনার শীর্ষে আছে এই পুতুল। বেশ কিছুদিন হলো মুক্তি পেয়েছে ব্লকবাস্টার মুভি অ্যানাবেল। অ্যানাবেল এখন ওয়ারেনদেরই প্রেত জাদুঘর ‘দ্য ওয়ারেন ওকাল্ট’ মিউজিয়ামে আছে। তবে সেখানে গিয়ে বোধ হয় সে চিরকুট লেখা ভুলে গেছে। নইলে নিশ্চয়ই এখনো চিরকুট পাওয়া যেত।

লেটা

১৯৭২ সাল। ভূতের বাড়ি দেখার ভূত চাপল কেরি ওয়ালটনের মাথায়। পরিত্যক্ত এক ভূতের বাড়িতে গিয়ে তার নজরে আসে একটি পুতুল। কিছু না ভেবেই সেই পুতুলটাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন কেরি। সেই পুতুলটার নাম লেটা। লেটাকে দুর্ভাগ্যের পুতুল মনে করে অনেকেই। পুতুলটাকে দেখলেই নাকি ঘটতে থাকে জীবনে নানা দুর্ঘটনা। লেটাকে নিয়ে ঘরে ঢুকলেই একদিকে হেলে পড়ে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা ছবি...এমন আরও কত-কী! অনেকের ধারণা, লেটার বয়স ২০০ বছরের কাছাকাছি। কোনো এক রোমানিয়ান তার ছেলের জন্য তৈরি করেছিল এই পুতুল। পানিতে ডুবে মারা যায় সেই ছেলেটা। কথিত আছে, ছেলেটার আত্মা ভর করেছে লেটার শরীরে। লেটার মাথায় সত্যি মানুষের চুলই ব্যবহার করা হয়েছিল। অনেকে দাবি করেছেন, লেটাকে দেখলেই আক্রমণ করতে চায় কুকুর-বিড়াল। আবার অনেকে দাবি করেছেন, পুতুলটাকে দেখে প্রবল দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে যায় তাঁদের মন।

ম্যান্ডি

ধারণা করা হয়, ১৯১০ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে জার্মানি কিংবা ইংল্যান্ডে তৈরি করা হয়েছিল ম্যান্ডি নামের এই পুতুলটা। দীর্ঘদিন ধরে ম্যান্ডি সংরক্ষিত ছিল এক নারীর কাছে, যিনি দাবি করতেন, পুতুলটার কান্না শুনতে পেতেন তিনি। বাড়ির বেসমেন্টে থাকত পুতুলটা। সেখান থেকেই আসত কান্নার শব্দ। পরবর্তী সময়ে ম্যান্ডিকে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার কুইনেল মিউজিয়ামে দান করে দেন সেই নারী। কিন্তু মিউজিয়ামেও নানা রকম ঘটনা ঘটায় ম্যান্ডি। নিয়মিতভাবে হারাতে শুরু করে অনেকের খাবার, অন্যান্য জিনিসপত্র। কোত্থেকে যেন ভেসে আসে পায়ের শব্দ! মিউজিয়ামের কর্মচারীরা দাবি করেন, অন্য পুতুলদের খোঁজখবরও নিত ম্যান্ডি। মিউজিয়ামের বিভিন্ন পুতুলের কাচের ঘরে নক করতে অনেকেই দেখেছে ম্যান্ডিকে। অনেকে বলেন, পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় চোখটা যেন জ্বলে ওঠে ম্যান্ডির।

এই ভৌতিক পুতুলগুলোর সঙ্গেও কিন্তু ব্যবসা জড়িত। হরর সিনেমা আর মুখরোচক গল্পে আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই এই পুতুলগুলোর রেপ্লিকা সংগ্রহ করতে চায়। বিভিন্ন অনলাইন সাইটগুলোতে বিক্রিও হয় ব্যাপক। হরর সিনেমায় ঘুরেফিরে এই পুতুলগুলোর আগমন প্রভাব ফেলে ক্রেতাদের মনে। কে জানে, হয়তো এ কারণেই এখনো ‘ভৌতিক’ উপাধি পেয়ে টিকে আছে এই পুতুলগুলো।