মমি হতে হতো ওদেরও!

দক্ষিণ কায়রোর সাকারা, মিসরের সবচেয়ে পুরোনো ও বিশাল সমাধিস্থল। যেখানে মাথা উঁচু করে পিরামিডগুলো দাঁড়িয়ে আছে কয়েক হাজার বছর ধরে। যার মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত ধাপবিশিষ্ট দোজার পিরামিডও। প্রাচীন মিসরীয় রাজবংশের সদস্যদের মৃত্যুর পর মমি করে রাখা হতো পিরামিডের অভ্যন্তরে থাকা সমাধিস্তম্ভে। প্রত্নতাত্ত্বিক ও গবেষক দলের কল্যাণে এগুলো এখন সবাই জানে। তবে মমি করা হতো বিড়ালদেরও। সম্প্রতি এমনই ১২টি বিড়ালের মমির সন্ধান পাওয়া গেল সাকারার পিরামিড কমপ্লেক্সে। ধারণা করা হচ্ছে, তখন মিসরের শাসনভার ছিল ফারাওদের পঞ্চম রাজবংশের হাতে। যা কিনা খ্রিষ্টপূর্ব ২৪৬৫ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ২১৫০-এর কথা।

প্রাচীন মিসরীয়দের ধর্মে বিড়ালের স্থান ছিল অন্য উচ্চতায়। কারণ সংগীত, নৃত্য আর আনন্দের দেবী হিসেবে পূজা করা হতো বিড়ালরূপী বাসটেটকে। এ ছাড়া অশুভ শক্তি বিনষ্টের ক্ষমতা ছিল তার। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ধর্মীয় কারণেই তখন বিড়ালের মমি করা হতো। শুধু যে বিড়ালের মমি পাওয়া গেছে, এমনটা নয়। গোখরা সাপ ও কুমিরের মমি পাওয়া গেছে ওই সমাধিস্তম্ভে। আরও মিলেছে কাঠের তৈরি প্রায় ১০০টি বিড়ালমূর্তি, যেগুলোর ওপরে আবার স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া এবং ছিল বিড়ালদেবী বাসটেটের একটি ব্রোঞ্জ মূর্তিও।

বিড়াল, সাপ কিংবা কুমিরের মতো প্রাণীদের মমি হওয়ার পেছনে কারণ হয়তো খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। হতে পারে এরা মেরুদণ্ডী প্রাণী বলে মিসরীয়দের কাছে আলাদা কদর ছিল। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিকেরা অবাক হলেন যখন প্রথমবারের মতো গুবরে পোকার মমি উদ্ধার করা হলো। গুবরে পোকাদেরও মমি হতে হতো, ভাবা যায়! পরিস্থিতির শিকার হয়ে কিংবা কোনো কাকতালীয়ভাবে যে তারা মমি হয়েছে—ব্যাপারটা তা নয়। কেননা একটা চুনাপাথরের কফিনে আলাদা করেই পাওয়া গেছে তাদের। কফিনের ডালায় আবার কালো রঙের তিনটি গুবরে পোকার ছবিও আঁকা ছিল। যেটা প্রমাণ করে ওগুলোকে মমি করে রাখার পেছনে নির্দিষ্ট কোনো কারণ অবশ্যই ছিল। হয়তো এটিও কোনো ধর্মীয় পবিত্র রীতি! আসলে প্রাচীন মিসরীয়দের জীবনধারা এত বিচিত্র ছিল যে সঠিক কারণ অনুমান করা দায়। প্রায় সাড়ে চার হাজার বছরের পুরোনো সমাধিগুলো এত দিন সবার অজানাই ছিল। সেসব স্থান খনন করে নতুন অদ্ভুত কিছু উদ্ধার হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।


সূত্র: ইয়াহু, গার্ডিয়ান