মশা কেন আমাকেই বেশি কামড়ায়

খুবই অন্যায়। তারপরও মশা কিছু কিছু মানুষকে বেশি পছন্দ করে। তাদের রক্তে পিপাসা মেটায়। বুঁদ হয়ে পড়ে থাকে। এমনটা তারা কেন করে? তাহলে এসো, মশার দু-একটা গোপন কথা জেনে নিই। আচ্ছা, মশা কীভাবে আমাদের দেখে? মশা প্রথমেই দেখে রং। তারপর আমাদের আকার-আকৃতি। তিন নম্বরে আসে আমাদের নড়াচড়া। মশার একটা কেমিক্যাল ভিশনও আছে। ওরা আমাদের (শুধু আমাদের কেন, মশা অনেক প্রাণীকেই কামড়ায়) শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইডও শনাক্ত করতে পারে। অন্ধকারে যখন কিছু নজরে আসে না, তখন এই কার্বন ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতির তারতম্য থেকেই তারা আমাদের চিনে ফেলে। প্রথম যে তিনটি ভিশন সম্পর্কে বলা হয়েছে, সেগুলোকেই আমরা একেবারে বেসিক বলে ধরে নেব। যেহেতু রংটাই মশাকে বেশি টানে, তাই খুব বেশি রংচঙের পোশাক যারা গায়ে দেয়, মশা তাদের প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলে। লম্বা-চওড়া, নাদুসনুদুস এদেরও মশার ভারি পছন্দ। যারা খুব বেশি নড়াচড়া করে বা অস্থির প্রকৃতির, মশা তাদেরও বেশ খাতির করে। যে যত লম্বা আর মোটাতাজা হবে, মশা তাদের ছেড়ে কথা কইবে না। তাই মেয়েরা মশার কামড় কম খায়। কারণ, সচরাচর মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে লম্বায় একটু খাটো হয়। সবচেয়ে বেশি সুবিধা পায় বেঁটে লোকজন। মশা এদের সমীহ করে। খুব বেশি ঘাঁটায় না। তবে ঘরে যদি আর কেউ না থাকে, তাহলে ছোট কিংবা বেঁটের অজুহাত খাটবে না।

তবে একটা কথা, পুরুষ মশা কিন্তু কাউকে কামড়াবে না। কামড়ায় কেবল স্ত্রী মশা। ডিম উত্পাদনের জন্য রক্তের প্রোটিন ওদের খুবই দরকার। রক্ত ছাড়া তারা তাই অচল। বেশির ভাগ মশাই উষ্ণ রক্ত পান করে। তবে কিছু কিছু বিশেষ গা গরম মশার ঠান্ডা পানীয় দরকার পড়ে। ওরা তাই শীতল রক্তের বাহক ব্যাঙ, কুমির, এমনকি সাপকেও রেহাই দেয় না।

আরেকটি কথা না বললেই নয়। সম্প্রতি ব্রিটেনে চালানো এক গবেষণায় পাওয়া গেছে আরেক চমকপ্রদ তথ্য। দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কিছু ডিএনএর (ডাইঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) প্রতি আকৃষ্ট হয় মশারা। এ কথা শুনে অনেকে প্রশ্ন করে বসতে পারে—তাহলে ডিএনএর গন্ধ আছে নাকি? না, তা নেই। তবে কিছু ডিএনএ আমাদের দেহে নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়াকে আকৃষ্ট করে। আর এদের কারণেই দেহে বিশেষ ধরনের গন্ধ তৈরি হয়। এমনিতে সব মানুষের দেহে ব্যাকটেরিয়াসহ প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন জীবাণুর বাস। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এসব জীবাণুর মধ্যে সামান্য হলেও কিছু জীবাণু এক মানুষ থেকে আরেক মানুষে একেবারেই আলাদা। অনেকটা হাতের ছাপের মতোই অনন্য। এভাবেই ডিএনএর কারণে এক মানুষ থেকে আরেক মানুষের দেহের গন্ধ আলাদা হয়। সেটি অন্য কেউ না বুঝলেও মশারা বেশ ভালোই টের পায়। আরও ব্যাপার হচ্ছে, দেহে ভিটামিন ও অন্যান্য রাসায়নিক তৈরির সময় এসব জীবাণু দেহে বিশেষ গন্ধ তৈরি করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের দেহের বিভিন্ন রকমের গন্ধে বিভিন্ন মশা আকৃষ্ট হয়। সে জন্য ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা হাত ও পায়ে কামড়াতে পছন্দ করে। অন্য মশারা আবার বগল বা কুঁচকির কাছের রক্ত খেয়ে মজা পায়।

তাই এরপরের বার কোনো মশা যদি তোমাকে না কামড়ে তোমার বন্ধুর রক্ত খায়, তাহলে তোমার ডিএনএকে একবার ধন্যবাদ দিতে ভুলো না। কারণ, তোমার ডিএনএর কারণেই তোমার দেহে এমন কোনো গন্ধ তৈরি হয়েছে, যা মশাদের একেবারেই আকৃষ্ট করতে পারেনি। জয় হোক ডিএনএর।