মহাবীর হারকিউলিসের দুঃসাহসী অভিযান

বহুকাল আগের গ্রিস দেশের কথা বলছি। অলিম্পিয়াস পর্বতে তখন বাস করতেন দেবতারা। তাঁদের মধ্যে দেবরাজ জিউসের ছিল মহাপ্রতাপ। সেই জিউসের এক ছেলের নাম ছিল আলসিয়াস। বাবা দেবতা হলেও মা ছিলেন মানবী। নাম ছিল তাঁর আল্কমিনি। ফলে দেবরাজের ছেলে হয়েও আলসিয়াস মানুষ ছিলেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই যুদ্ধবিদ্যা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সংগীতসহ নানা বিদ্যায় দক্ষতা অর্জন করে মহাশক্তিমান এক বীরে পরিণত হন। তাঁর শক্তি-সাহস ছিল অফুরান। গ্রিস দেশে তাঁর মতো মহাবীর আর ছিল না। বড় হয়ে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হলো এক রাজকুমারীর। রাজকুমারীর নাম ছিল মেগারা। এই মেগারার বাবা ছিলেন থিবিসের রাজা ক্রেসাস।

ভালোই কাটছিল তাঁদের দিন। এরই মধ্যে একবার আলসিয়াসকে যেতে হলো পাতালপুরীতে। ফিরে এসে তিনি দেখলেন অঘটন একটা ঘটে গেছে। আরও মহা অঘটন ঘটে যায় যায় অবস্থা। ক্রেয়নকে ইউবিয়া থেকে আসা যোদ্ধা লিকোস খুন করেছে। সে এবার তাঁর স্ত্রী মেগারা এবং সন্তানদের মেরে ফেলার জন্য তৈরি হয়েছে। আলসিয়াস তাড়াতাড়ি লিকোসকে হত্যা করে নিজের পরিবারের সদস্যদের বাঁচালেন। কিন্তু পরে আবার অন্যের কানকথা শুনে খুন করে বসলেন নিজের সন্তানদেরই। নিজের ভুল যখন বুঝতে পারলেন, তখন তিনি পাগলপ্রায়। নানাজন নানা পরামর্শ দিল তাঁকে। শেষে ডেলফির অ্যাপোলোর মন্দিরের পুরোহিত তাঁকে টিরিনসের রাজা ইউরেস্থিউসের কাছে যেতে বললেন। সেখানে ১২ বছর থেকে তাঁর পরামর্শ মেনে চলতে বললেন। তিনিই তাঁর নাম দিলেন হিরাক্লেস। সেই থেকেই আলসিয়াস হয়ে গেলেন হিরাক্লেস। রোমানরা পরে হিরাক্লেস নামটাকে হারকিউলিস হিসেবে পরিচিত করে। তাই আলসিয়াস, হিরাক্লেস ও হারকিউলিস আসলে একই ব্যক্তি।

হারকিউলিস জানতেন, বীরত্বের দিক দিয়ে ইউরেস্থিউস তাঁর ধারেকাছেও ছিলেন না। তাই এ প্রস্তাবে প্রথমে তিনি রাজি হলেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাবলেন, এটা না করলে রেগে যেতে পারেন তাঁর বাবা জিউস। তাই শেষমেশ রাজি হলেন তিনি। ওদিকে ইউরেস্থিউস মনে মনে খুব হিংসা করতেন হারকিউলিসকে। তিনি ফন্দি আঁটলেন হারকিউলিসকে দিয়ে এমন কিছু কাজ করাবেন, যে কাজ করতে গিয়ে ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু হবে তাঁর। হারকিউলিসকে এমন ১০টি কঠিন কাজ করতে দিলেন তিনি, যা করে জীবন নিয়ে ফিরে আসতে পারা কিছুতেই সম্ভব নয়। রাজা ইউরেস্থিউস নিশ্চিত ছিলেন যে ভয়ংকর এই অভিযানগুলো চালাতে গিয়ে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু হবে হারকিউলিসের। যেসব অসম্ভব কাজ হারকিউলিসকে করতে দেওয়া হয়েছিল সেগুলো ছিল—

১. নেমিয়ার ভয়ংকর সিংহকে হত্যা করে চামড়া নিয়ে আসা।
২. নয় মাথাওয়ালা লার্নিয়ার দানব হাইড্রাকে মেরে ফেলা।
৩. সেরিনিয়ার হরিণকে জ্যান্ত ধরে নিয়ে আসা।
৪. ইরিম্যান্থিয়ার হিংস্র শূকরকে ধরে নিয়ে আসা।
৫. জন্তু-জানোয়ারের পূর্ণ অজিয়ার আস্তাবল এক দিনের মধ্যে পরিষ্কার করা।
৬. স্টিম্ফেলিয়ার মানুষখেকো পাখির ঝাঁককে মেরে ফেলা।
৭. ক্রেটান বুল বা ক্রিট দ্বীপের ষাঁড়কে ধরে নিয়ে আসা।
৮. সাফল্যের সঙ্গে ডায়োমেডেসের মাদি ঘোড়া চুরি করে আনা।
৯. দুর্ধর্ষ নারী যোদ্ধাদল আমাজনদের রানি হিপোলিটার কোমরবন্ধনী হাতিয়ে নেওয়া।
১০. ভয়ংকর দানব গোরিয়নের পোষা গরুর পালকে ধরে নিয়ে আসা।

ইউরেস্থিউস ভাবতেই পারেননি যে এসব অসম্ভব কাজ করে হারকিউলিস প্রাণ নিয়ে ফিরে আসতে পারবেন। কিন্তু যখন দুঃসাহসী হারকিউলিস কাজগুলো সম্পন্ন করলেন, তখন তিনি কোনো প্রশংসা করার বদলে তাঁর কাজের মধ্যে দুটো দোষ আবিষ্কার করলেন। একটা দোষ ছিল, তিনি সাফল্যের সঙ্গে লার্নিয়ার হাইড্রাকে হত্যা করতে পারলেও এই কাজে ভাগনে লোলাউসের সাহায্য নিয়েছিলেন তিনি। অন্য দোষটি ছিল, তিনি অজিয়ার আস্তাবল সফলভাবে পরিষ্কার করতে পারলেও এই কাজ করার পর তিনি গ্রহণ করেছিলেন মজুরি। এই দুটো খুঁত ধরে হারকিউলিসের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো আরও দুটো নতুন কাজ। অগত্যা তাঁকে মেনে নিতেই হলো নতুন দুই কাজ সম্পাদনের দায়িত্ব। সেই নতুন দুই কাজ ছিল—

১. হেস্পেরিডিসের সোনার আপেল চুরি করে আনা।
২. পাতাল থেকে সেরবেরুসকে ধরে আনা।

হারকিউলিসের কাহিনিতে যেসব জায়গার নাম আছে সেগুলো কিন্তু কল্পলোকের কোনো জায়গা নয়, বরং মর্ত্যেই ছিল সেসব জায়গার বাস্তব অস্তিত্ব। অবশ্য হাজার হাজার বছর ধরে প্রচলিত অন্য সব পুরাণ-কাহিনির মতো এই কাহিনিও কাল্পনিক। এতে মানুষের কথা কিছু আছে বটে, তবে দেবতাদের ক্ষমতাই এখানে বেশি করে ফুটে উঠেছে। কিন্তু এই কাহিনিতেও আছে উপদেশ, আছে শিক্ষা। এবার আমরা শুনে নিই হারকিউলিস কী করে সফল হয়েছিলেন সব অভিযানে।

নেমিয়ার সিংহ হত্যা করে চামড়া নিয়ে আসার কাহিনি

নেমিয়ার সিংহ আসলে ছিল এক দানব প্রাণী। সে বিভিন্ন রূপ ধরতে পারত। তার চামড়ার ওপরের লোম ভেদ করে মানুষের তৈরি কোনো অস্ত্র ঢুকতে পারত না। তলোয়ারের চেয়েও ধারালো ছিল তার নখ। সিংহ অভিযানে গিয়ে প্রথমে তির মেরে ঘায়েল করার চেষ্টায় ব্যর্থ হলেন হারকিউলিস। তারপর সিংহের গুহার কাছে গিয়ে দেখলেন তাতে দুটো পথ আছে। পালিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার দ্বিতীয় পথটা বন্ধ করে সিংহকে তাড়িয়ে প্রথম পথ দিয়ে ঢোকালেন গুহায়। এবার অন্ধকার গুহায় ঢুকে দানব সিংহকে দেহের সব শক্তি দিয়ে মুগুরপেটা করলেন। তারপর সিংহের নখ দিয়েই ছিললেন তার চামড়া। মৃত সিংহের দেহ কাঁধে নিয়ে গিয়ে হাজির হলেন ইউরেস্থিউসের দরবারে।

দেবী ডায়ানার আশীর্বাদধন্য সেরিনিয়ার হরিণকে জ্যান্ত ধরে আনার কাহিনি

হারকিউলিস খুঁজতে খুঁজতে এক ঝরনার ধারে পেলেন হরিণটাকে। এবার কৌশলে তার পায়ে তির মেরে আহত করে জ্যান্ত হরিণটাকে কাঁধে নিয়ে রওনা দিলেন তিনি। পথে দেখা হলে ডায়ানাকে বুঝিয়ে শান্ত করে জ্যান্ত হরিণটি তিনি পাঠিয়ে দিলেন ইউরেস্থিউসের দরবারে।

ইরিম্যান্থিয়ার দানবাকৃতির হিংস্র শূকর ধরার কাহিনি

এই অভিযানে যাওয়ার পথে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় বন্ধু সেন্টরের। এই সেন্টর কিন্তু পুরো মানুষ ছিল না। এর পেট, বুক ও মাথা ছিল মানুষের, আর বাকি অংশ ছিল ঘোড়ার। তো, সেন্টরের পরামর্শে পর্বতের পুরু বরফস্তরে শূকরকে চেপে ধরে কাবু করার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং ঠিক ঠিকই তাকে ধাওয়া করে নিয়ে গেলেন বরফঢাকা এলাকায়। সেখানে জাল দিয়ে বন্দী করলেন শূকরটিকে। তারপর তাকে কাঁধে নিয়ে গেলেন রাজদরবারে।

লার্নিয়ার নয় মাথাওয়ালা সর্পদানব হাইড্রা বধ করার কাহিনি

হাইড্রা ছিল এক ভয়ংকর দানব। তার মাঝখানের মাথাটা কিছুতেই কাটা যেত না। অন্য মাথাগুলোর যেকোনো একটাকে কাটলে তা থেকে একসঙ্গে জন্ম নিত দুটো করে মাথা। তাই এই হাইড্রা ছিল আসলে বহু মাথাওয়ালা দানব। এই দানব মারার অভিযানে হারকিউলিস সঙ্গে নিলেন তাঁর ভাগনে লোলাউসকে। গুহার দেয়ালের সঙ্গে তিরের সাহায্যে দানবের মূল মাথা আটকে ধরে তা বড় পাথরে চাপা দেন তিনি। অন্য আটটি মাথাকে পুড়িয়ে দেন মশালের আগুনে। নিজের তিরগুলো হাইড্রার বিষরক্তে চুবিয়ে বিষাক্ত করে তোলেন। কিন্তু এত বড় সাফল্যের পরও ভাগনে লোলাউসের সাহায্য নেওয়ায় এ কাজের স্বীকৃতি তিনি পেলেন না।

জন্তু-জানোয়ারপূর্ণ আস্তাবল এক দিনে পরিষ্কার করার কাহিনি

অভিযান শুরুর আগে রাজা অজিয়াসের কাছে গিয়ে হারকিউলিস বললেন, ৩০ বছর ধরে অপরিষ্কার থাকা বিশাল আস্তাবলটি তিনি এক দিনে পরিষ্কার করে দিতে রাজি আছেন। কিন্তু বিনিময়ে আস্তাবলের ১০ ভাগের ১ ভাগ পশু দিতে হবে তাঁকে। ৩০ বছরের জঞ্জাল এক দিনে সাফ হবে ভেবে এতে রাজি হলেন রাজা। হারকিউলিস তখন রাজার প্রাসাদের দুই দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া অ্যাফিউস ও পিনিউস নামের দুই নদীর গতিপথ বদলে দিয়ে আস্তাবলের ওপর দিয়ে নদীর জলধারা বইয়ে দিলেন। এভাবে দ্রুত আস্তাবল পরিষ্কার হয়ে গেল। এই কাজটি হারকিউলিসের জন্য অবমাননাকর ছিল। তারপরও হারকিউলিসের কাজ নদী দুটো করে দিয়েছে অজুহাত দেখিয়ে এবং পারিশ্রমিক গ্রহণের ছুতোয় এই কাজের স্বীকৃতি দিলেন না ইউরেস্থিউস।

স্টিম্ফেলিয়ার মানুষখেকো পাখির ঝাঁক হত্যার কাহিনি

গ্রিস দেশের একটি এলাকা আর্কাডিয়া। সেখানকার স্টিম্ফেলিয়ার হুদ এলাকায় বাস করত মানুষখেকো পাখি। তাদের ঠোঁট, নখ ও পাখা ছিল পিতলের। ভয়ংকর পাখিরা তাদের ধারালো নখ, ঠোঁট এসব দিয়ে আক্রমণ চালিয়ে মানুষ মেরে শেষ করত। তাদের হত্যা করার জন্য দেবী অ্যাথেনা সহায় হলেন হারকিউলিসের অভিযানে। তাকে ক্রোটালা নামের থালার মতো জিনিস দিলেন তিনি। পাহাড়ে উঠে ক্রোটালায় আঘাত করে প্রচণ্ড আওয়াজ তুললেন হারকিউলিস। পাখির ঝাঁক সেই আওয়াজে দিশেহারা হয়ে উড়তে লাগল। তখন তির ছুড়ে পাখির ঝাঁকের প্রায় সবগুলোকে মেরে ফেললেন তিনি। বাকি পাখিগুলো পালিয়ে গেল।

ডায়োমিডাসের ঘোড়া নিয়ে আসার কাহিনি

দেবতাদের অভিশাপে মারা গিয়েছিলেন ডায়োমিডাস। তার মানুষখেকো ঘোড়াগুলোকে একরকম বিনা বাধায় নিয়ে এলেন তিনি।

আমাজনদের রানি হিপোলিটের কোমরবন্ধনী আনার কাহিনি

হিপোলিট প্রথমে কোমরবন্ধনী দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে অন্য এক ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়ে নিজের অঙ্গীকার থেকে পিছিয়ে পড়লেন। আমাজনরা হামলা করল হারকিউলিসের জাহাজে। বেধে গেল যুদ্ধ। তিনি তখন আমাজনদের যুদ্ধে হারিয়ে দিলেন এবং তাঁর হাতে মারা পড়লেন হিপোলিট। এবার হিপোলিটের কোমরবন্ধনী নিয়ে ফিরে এলেন হারকিউলিস।

তিন মাথাওয়ালা দানব গোরিয়নের পোষা গরুর পাল নিয়ে আসার কাহিনি

ইরাইথিয়া দ্বীপের গোরিয়নের গরু খুঁজতে গিয়ে ভূমধ্যসাগর এলাকায় বিশাল দুটো স্তম্ভ বানালেন হারকিউলিস। সে সময় তিনি সন্ধান পেয়ে গেলেন দানব গোরিয়নের পোষা গরুর পালের। গোরিয়নের ছিল অর্থ্রাস নামের দুই মাথাওয়ালা পাহারাদার হিংস্র কুকুর। আর গরুর পাল পাহারা দিত এরিতিয়ন নামের রাখাল। বহু বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে গোরিয়নকে হত্যা করে বিশাল পশুর পাল নিয়ে দুঃসাধ্য যাত্রা করে ফিরে এলেন তিনি।

পাতাল থেকে তিন মাথাওয়ালা কুকুর সারবেরুসকে ধরে আনার কাহিনি

সারবেরুসকে ধরে আনার জন্য হারকিউলিস শুরু করলেন পাতাল অভিযান। কিন্তু প্লুটো একটা শর্ত দিলেন। শর্তটা হলো সারবেরুসকে ধরে আনা যাবে। কিন্তু তার ওপর কোনো অত্যাচার করা যাবে না। হারকিউলিস শর্ত মেনে নিলেন এবং সারবেরুস নামের তিন মাথাওয়ালা কুকুরকে কাঁধে নিয়ে ফিরে এলেন। ইউরেস্থিউসকে সেই কুকুর দেখিয়ে আবার পাতালে রেখে এলেন।

ক্রিট দ্বীপের ষাঁড় ধরে আনার কাহিনি

ক্রিট দ্বীপে গিয়ে হারকিউলিস মিনোসকে উপহার দেওয়া পোসেডনের ষাঁড়কে পোষ মানিয়ে ফেলেন। তারপর নৌকায় করে ষাঁড়টি নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে চলে আসেন।

হেস্পেরিডিসদের সোনার আপেল আনার কাহিনি

হেস্পেরিডিসদের বাবা ছিলেন অ্যাটলাস। তিনি দুই হাতে ধরে রেখেছিলেন আকাশ। হারকিউলিস তাঁর কাছে গিয়ে সোনার আপেলের কথা বললেন। তিনি সেই আপেল দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে জানালেন। হারকিউলিস তাঁকে বললেন যে যতক্ষণ না আপেল নিয়ে তিনি ফেরত আসছেন, ততক্ষণ তিনি নিজে দুই হাতে আকাশ ধরে রাখবেন। আকাশ ধরে রাখার মতো কঠিন কাজ থেকে রেহাই পাবেন ভেবে অ্যাটলাস তাড়াতাড়ি আকাশ ধরার ভার হারকিউলিসকে দিয়ে আপেল আনতে চলে গেলেন। আপেল তিনি নিয়েও এলেন। তবে তাঁর মাথায় তখন অন্য বুদ্ধি চেপেছে। তিনি স্থায়ীভাবে হারকিউলিসের কাঁধে আকাশ বহনের মতো কঠিন বোঝা চাপিয়ে দিতে চাইলেন। তিনি বললেন, ইউরেস্থিউসের কাছে তিনি নিজেই আপেল নিয়ে যাবেন। বুদ্ধিমান হারকিউলিস তাঁর মতলব বুঝে ফেললেন। বুদ্ধি খাটিয়ে বললেন, বেশ। তবে আমি কাঁধে একটু নরম কাপড় বেঁধে আসছি। ততক্ষণ আকাশের ভারটা আপনি একটু বহন করেন।

বোকা অ্যাটলাস হারকিউলিসের কথায় রাজি হয়ে দুই হাত ধরে আকাশকে কাঁধে তুলে নিলেন। এই সুযোগে হারকিউলিস সোনার আপেল নিয়ে চলে গেলেন ইউরেস্থিউসের কাছে।

কী হলো শেষ পর্যন্ত

এভাবে শেষ হয়েছিল হারকিউলিসের প্রায়শ্চিত্তের বারো অভিযান। তবে এই অভিযানগুলোই শুধু নয়, ট্রয়ের যুদ্ধসহ আরও বহু যুদ্ধ-বিগ্রহ, অভিযানে মহাব্যস্ত থেকেছেন তিনি জীবনভর। শেষে এক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ভয়ংকর যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়লেন তিনি। তখন তিনি চিতা তৈরি করে তাতে বসলেন। চিতায় আগুন জ্বলল। মৃত্যুর মাধ্যমে তিনি স্বর্গে গেলেন। দেবতারা তাঁর বীরত্ব, নিষ্ঠা ও শ্রমে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাঁরা তাঁকে অমরত্ব দিলেন এবং মানুষ থেকে তিনি দেবতায় পরিণত হলেন।

হারকিউলিসের কাহিনির শিক্ষা: গ্রিক পুরাণের হারকিউলিস কাহিনির মধ্যে বড় একটা শিক্ষা আছে। তা হলো আন্তরিক নিষ্ঠা ও শ্রম কোনো দিনও বৃথা যায় না। তার মূল্য একদিন না একদিন পাওয়া যাবেই। হারকিউলিসও তাই মানুষ থেকে পরিণত হয়েছিলেন দেবতায়।