যত সব রহস্যময় পাণ্ডুলিপি

সাংকেতিক বার্তা, প্রাচীন ভাষা, গুপ্তধনের সংকেত, কথার হেঁয়ালি—বহুকাল ধরে মানুষের অদম্য কৌতূহলের বস্তু। বছরের পর বছর ধরে নানা অমীমাংসিত রহস্য উদ্ধারের চেষ্টা করে চলেছে ক্রিপ্টোলজিস্ট, প্রাচীন ভাষাবিদ, গোয়েন্দা ও অনুসন্ধিৎসু মানুষ। এমনই কিছু অমীমাংসিত সাংকেতিক রহস্যের কথা এখানে তুলে ধরা হলো—

ভয়নিক পাণ্ডুলিপি

৪০০ বছরের পুরোনো ভয়নিক পাণ্ডুলিপি পৃথিবীর অমীমাংসিত রহস্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। ছয়টি বিভাগে বিভক্ত এ পাণ্ডুলিপির প্রতিটি পৃষ্ঠাই এক অদ্ভুত রহস্যে ঠাসা। কোনো পৃষ্ঠায় রয়েছে নাম না-জানা গাছের পাতার ছবি, আয়ুবের্দিক প্রণালি। কোনো পৃষ্ঠা আবার জ্যোতির্বিজ্ঞানের ছক, মহাজাগতিক রহস্য, মানবদেহের উদ্ভট ছবিতে ভরা। ১ লাখ ৭০ হাজার সাংকেতিক চিহ্নসংবলিত এ পাণ্ডুলিপিটি এত সাবলীল ও বিস্তৃতভাবে লেখা যে একে নিরর্থক বলে উড়িয়ে দেওয়াও সহজ নয়। আবার এর রহস্যোদ্ধারের কোনো সূত্রও কেউ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। বছরের পর বছর ধরে তাই ভয়নিক পাণ্ডুলিপি বাঘা বাঘা ক্রিপ্টোলজিস্টের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছে।

ক্রিপ্টোস

গোপন রহস্য উদ্ধারে কিংবা দুর্ধর্ষ সব অভিযানের জন্য মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ সিআইএর খ্যাতি এবং কুখ্যাতি বিশ্বজোড়া। অথচ এই সিআইএর সদর দপ্তরেই রয়েছে অদ্ভুত এক রহস্যময় নিদর্শন—ক্রিপ্টোস। এতে রয়েছে ৮৬৯টি সাংকেতিক চিহ্ন।

১৯৯০ সালে ক্রিপ্টোস স্থাপনের পর থেকেই সিআইএর গোয়েন্দা, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ক্রিপ্টোলজিস্ট এ সংকেত সমাধানের চেষ্টা করছেন। শুধু তা-ই নয়, ড্যান ব্রাউনের দ্য লস্ট সিম্বলসহ আরও বিভিন্ন বইতে বারবার উঠে এসেছে ক্রিপ্টোসের রহস্যের কথা। ২০০৬ সালের এপ্রিলে এর স্থপতি স্যানবর্ন নিজেই এটিকে অসম্পূূর্ণ সংকেত হিসেবে আখ্যায়িত করায় রহস্য আরও ঘনীভূত হয়।

১৯৯৯ সালে প্রথম জেমস জিলগলি নামক এক কম্পিউটার বিজ্ঞানী দাবি করেন যে তিনি ৭৬৮টি সাংকেতিক চিহ্নের রহস্যোদ্ধার করেছেন। কিন্তু বাকি সংকেতগুলোর কোনো অর্থ উদ্ধার না হওয়ায় এটি এখনো এক অমীমাংসিত রহস্য!

ডি-ডে পিজিয়ন

ডি-ডে পিজিয়ন সংকেতটি পাওয়ার ঘটনাও বেশ অদ্ভুত। প্রায় ৩০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের এক দম্পতি বাড়ির চিমনি পরিষ্কার করতে গিয়ে পেল কবুতরের হাড় আর একটি লাল বাক্স। লাল বাক্সটিতে পাওয়া গেল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রেরিত একটি বার্তা। ধারণা করা হয়, এটি প্যারাট্রুপিং বা বোমাবর্ষণের কোনো নির্দেশিকা। বার্তাটির প্রেরক এক্স জিরো টু (X02) নামধারী এক ব্যক্তি এবং ১৩৫টি অক্ষরে লেখা এ বাতার্টি ডব্লিউ স্টট এসজেটি (W Stot Sjt) নামক কারও উদ্দেশে লেখা। বলা হয়ে থাকে, কোনো নির্দিষ্ট সংকেত উদ্ধারের নিয়ম মেনে লেখা হয়েছে এ সাংকেতিক বার্তাটি। আর সেটি না জেনে এটির পাঠোদ্ধার সম্ভব নয়। এমনকি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা একে অমীমাংসিত বলে চিহ্নিত করেছে।

ডোরবেলা সংকেত

সুরকার হিসেবে একসময় বেশ বিখ্যাত ছিলেন এডওয়ার্ড এলগার। ইংরেজ এই সুরকারের লেখা একটি চিঠি ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্রিপ্টোলজিস্টদের গবেষণার বস্তু হয়ে আছে। ডোরা পেনি নামে এক নারীকে লেখা এ চিঠিটির পুরোটাই সাংকেতিক চিহ্নে লেখা। তিন লাইনে লেখা ৮৭টি চিহ্ন রয়েছে এ চিঠিতে এবং প্রতিটি চিহ্নই তিনটি অর্ধবৃত্তের সমন্বয়ে লেখা।

বিয়েল সংকেত

১৮২০ সালের দিকে বিয়েল নামে এক ব্যক্তি দুই ওয়াগনভর্তি গুপ্তধন যুক্তরাষ্ট্রের বেডফোর্ড কান্ট্রির কোথাও লুকিয়ে রাখেন। গুপ্তধনের সংকেতটি একটি বাক্সে বন্দী করে তিনি তা এক ব্যক্তির কাছে রেখে যান। সেই ব্যক্তি তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সে সংকেতটি উদ্ধার করতে না পারায় তা এক বন্ধুকে দিয়ে যান। বন্ধুটি ২০ বছর চেষ্টার পর গুপ্তধন বলতে যে স্বর্ণ, রৌপ্য বোঝানো হয়েছে, তা বের করতে সমর্থ হন। কিন্তু সে গুপ্তধন কোথায় রয়েছে—এ রহস্য দুই শতক পরও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

তথ্যসূত্র: জার্নাল অব ক্রিপ্টোলজি