রেফ্রিজারেটর কীভাবে কাজ করে

প্রাচীনকাল থেকেই খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল মানুষ। শীতপ্রধান দেশে বরফ সহজলভ্য। তাই তাদের জন্য খাদ্য সংরক্ষণ কিছুটা সহজ ছিল। কিন্তু গ্রীষ্মপ্রধান দেশে বরফের অভাবে সেকালে একধরনের লবণ ও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবহৃত হতো। শোনা যায়, ১৬ শতকে ভারতের মোগল সম্রাটেরা সুদূর হিন্দুকুশ থেকে দিল্লিতে বরফ নিয়ে আসতেন। তবে খাবার পচন থেকে রক্ষা করতে নয়। গরমের দিনে শরবতের সঙ্গে বরফকুচি মিশিয়ে একধরনের আইসক্রিম বানিয়ে খেতেই পছন্দ করতেন তাঁরা। যা-ই হোক, মানুষের এতসব মুশকিল আসান করতে ১৮৭৪ সালে যান্ত্রিকভাবে খাদ্য সংরক্ষণের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন সুইডেনের বিজ্ঞানী কার্ল লিন্ডে। তবে সেটা ছিল সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছু আগে রেফ্রিজারেটরের সঙ্গে সাধারণ মানুষের পরিচয় ঘটে। একসময় রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ আধুনিক জীবনের এক প্রয়োজনীয় যন্ত্রে পরিণত হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় শাকসবজি, ফলমূল, মাছ-মাংসসহ পচনশীল দ্রব্যাদি সংরক্ষণে রেফ্রিজারেটরের জুড়ি নেই। সাধারণত নিম্ন তাপমাত্রা সৃষ্টি করে রেফ্রিজারেটরে এসব জিনিস পচন থেকে রক্ষা করে। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় অতি ক্ষুদ্র জীবাণু ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে খাবার বা অন্যান্য জিনিসকে পচিয়ে ফেলে। কিন্তু নিম্ন তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে তাদের বংশবৃদ্ধি থেমে যায়। এ কারণে এসব জীবাণু খাবার পচাতে পারে না।

ফ্রিজের ভেতর ঠান্ডা করতে কম্প্রেসন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। এই প্রক্রিয়ার প্রধান উপাদান হচ্ছে কম্প্রেসর, কন্ডেন্সার, এক্সপেনশন ভালভ আর এভাপোরেটর। এ ছাড়া রেফ্রিজারেন্ট বা শীতকদ্রব্য হিসেবে ঘন কার্বন-ডাই-অক্সাইড (ড্রাই আইস) ব্যবহার করা হয়। অবশ্য একসময় ক্ষতিকর সিএফসি (ক্লোরোফ্লোরো কার্বন) ব্যবহৃত হতো।

রেফ্রিজারেটরের ঠান্ডা করার প্রক্রিয়া কয়েক ধাপে শেষ হয়। প্রথমে ফ্রিজের ভেতরের দ্রব্যাদির তাপ শুষে নিয়ে ড্রাই আইস বাষ্পে পরিণত হয়। এ বাষ্পকে কম্প্রেসরের মাধ্যমে প্রচণ্ড চাপ দেওয়া হয়। পরে তা কন্ডেন্সারের মাধ্যমে ঠান্ডা এবং তরলে পরিণত করা হয়। এই ঠান্ডা ও তরল রেফ্রিজারেন্ট তাপ ও চাপ কমিয়ে একটি এক্সপেনশন ভালভের মধ্য দিয়ে চালিত হয়, যাতে এভাপোরেটরের ভেতর রেফ্রিজারেটরের ভেতরের তাপ শুষে নিয়ে এই রেফ্রিজারেন্ট আবার বাষ্পীভূত হতে পারে। পুরো প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বারবার ঘটার কারণে ফ্রিজের ভেতরের জিনিসের তাপমাত্রা ক্রমেই কমতে থাকে।