‘সবার দুঃখগুলোকে সুখে পরিণত করে দিতে চাই’ — সুরত আলম

ছবি : সৌরভ দাশ

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরাও স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের মতো খেলাধুলা করে থাকে। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পায়। তারা ক্রিকেট খেলে স্টিলের স্টাম্প আর বিশেষ বল দিয়ে, যার ভেতর মার্বেল থাকে। এর শব্দ অনুসরণ করে খেলে তারা। ফুটবলের ক্ষেত্রেও তা-ই। দাবা খেলায় তাদের জন্য আলাদা বোর্ড থাকলেও নিয়ম একই। দাবার ঘুঁটিগুলো এমনভাবে তৈরি যেন তাতে হাত দিয়ে চিহ্নিত করা যায়। সুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে খেললে তারা তাদের বোর্ড নেয় এবং দুটি বোর্ডেই একই চাল দেয়। ফলে বুঝতে পারে ঘুঁটি কোথায় আছে।

এমনই এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দাবা খেলোয়াড় সুরত আলম। পঞ্চম শ্রেণিতে উঠে সে দাবা খেলা শুরু করে। কয়েক মাস পর চট্টগ্রাম ক্রীড়া সংস্থার দাবা প্রতিযোগিতায় নিজ স্কুল থেকে সেসহ চারজন অংশ নেয়। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় আয়োজক কমিটি প্রথমে তাদের অংশ নিতে দেয়নি। পরে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অনুরোধে কমিটি রাজি হয়। কিন্তু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বোর্ড ছিল মাত্র দুটি। তাই বাদ দিতে হয় দুজনকে। সুরতও বাদ পড়ে। কিন্তু ভেঙে না পড়ে আরও অনুশীলন করে সে। এরই মাঝে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাদের চারটি বোর্ড প্রদান করে। অতঃপর সে অংশ নেয় স্কুলের প্রতিযোগিতায়। সেখান থেকে শুরু, তারপর সব প্রতিযোগিতায় হয় প্রথম। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন আয়োজিত জাতীয় জুনিয়র দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে ২৫তম হয় সে। চারজন রেটেড খেলোয়াড়কে হারিয়ে জায়গা করে নেয় দাবার বিশ্বপরিবারে। তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা ছিল স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন। সুরতের বর্তমান রেটিং পয়েন্ট ১৪৭৪।

সুরতের কিছু অর্জন

  • সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয় আয়োজিত প্রতিযোগিতায় ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫-তে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন।

  • চট্টগ্রাম বিভাগীয় আন্তপ্রাতিষ্ঠানিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ২০১৪-তে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন।

  • চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত প্রতিযোগিতা ২০১৪-তে তৃতীয় স্থান অর্জন।

  • ২০১৩ সালে জেনাস দাবা প্রতিযোগিতায় অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন।

  • বাংলাদেশ ব্লাইন্ড প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য।

সুরতের সাক্ষাৎকার

প্রশ্ন :

অবসরে কী করতে ভালো লাগে?

বই পড়তে (ব্রেইল বই), গান শুনতে আর খেলাধুলা করতে।

প্রশ্ন :

বড় হয়ে কী হতে চাও?

ব্যারিস্টার।

প্রশ্ন :

যদি আলাদিনের চেরাগ পাও—

সবার দুঃখগুলোকে সুখে পরিণত করে দিতে চাই।

প্রশ্ন :

দাবার বিশ্বপরিবারে ঢুকে অনুভূতি—

প্রথমে বিশ্বাস হয়নি আমি এত দূর আসতে পারব। এখন মনে হচ্ছে আমি আরও এগিয়ে যাব।

প্রশ্ন :

এমন যদি হতো—

আমাদের যেন সবাই সমান চোখে দেখে।

প্রশ্ন :

তোমার জীবনের আদর্শ—

স্কুলের প্রধান শিক্ষক সামাদ স্যার।

(কিশোর আলোর মার্চ ২০১৭ সংখ্যায় প্রকাশিত)