সাইকেলের টুকিটাকি

বন্ধুরা সবাই মিলে সাইকেল চালাচ্ছ। হঠাৎ প্যাডেলে কটমট শব্দ করে চেইন জড়িয়ে সাইকেলটা থেমে যায়। তোমার কোনো বন্ধু হয়তো হাতুড়ি নিয়ে চলে এল। প্যাডেলের একটু নিচেই হাতুড়ি দিয়ে লাগিয়ে দিল কয়েক ঘা। মাঝেমধ্যে এভাবে তোমার সাইকেল ঠিক হয়ে গেলেও, এ রকমভাবে সাইকেল ডাক্তারি কিন্তু মোটেও ভালো না। আবার হাতের কাছে সব সময় মেকানিক না থাকার কারণে হয়তো তোমাকেই হতে হয় তোমার প্রিয় সাইকেলের ডাক্তার। তাহলে উপায়? হুটহাট সাইকেলের এসব জটিলতা কাটিয়ে উঠতে চলো দেখে নেওয়া যাক নিচের টিপসগুলো।

যত্ন নাও ফ্রেমের

তোমার সাইকেল যদি হালকা ফ্রেমের হয়ে থাকে, তাহলে এ জন্য তোমার বেশি সতর্ক থাকতে হবে। সাইকেলের যেকোনো অংশে তাই কাজ করার সময় তোমার ফ্রেমের সক্ষমতা মাথায় রাখতে হবে। সাইকেলের যেকোনো অংশের স্ক্রু, বোল্ট বা ফ্রেমের নিচের অংশে থাকা বটম–ব্র্যাকেট কাপ খোলার সময় বাড়তি সতর্ক থাকা জরুরি। সাইকেলের এক পাশে কোনো রকম আঘাত করলে অন্য পাশ থেকে ফ্রেম শক্ত করে ধরে রাখতে হবে। আর সাইকেলে আঘাতের ক্ষেত্রে হাতুড়ির মাথায় নরম কাপড় পেঁচিয়ে নিতে পারো। এতে ফ্রেমে আঘাতের দাগ পড়বে না।

প্রয়োজন বুঝে সিটপোস্ট

ফ্রেমের আকার আর চালকের উচ্চতা বুঝে সাইকেলের সিটপোস্টের অবস্থান ঠিক করতে হয়। অনেকে এমনভাবে সিট রাখে, যেন সেটাতে বসে সাইকেল চালানোর সময় সিটপোস্ট সামনে–পেছনে ওঠানামা করে। এ কারণে সাইকেলের ফ্রেমের ক্ষতি হয়। বারবার সিটপোস্ট ওঠানামার কারণে সিটের নিচে থাকা বোল্ট ঢিলা হয়ে যায়। ফলে কোনো বন্ধুর রাস্তায় চলার সময় চালক না চাইলেও সাইকেলের সিটপোস্ট ওঠানামা করে। এর ফলে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই সিটপোস্টের নিচের বোল্ট প্রয়োজনমতো টাইট করতে হবে।

পরিষ্কার রাখো ব্র্যাকেট কাপ

বটম–ব্রাকেট কাপ—চিনেছ এটা? তোমার চেইনহুইল লাগানো থাকে যেখানে, সেখানকার ভেতরের কাপটিকে বলা হয় বটম–ব্র্যাকেট কাপ। অনেকে এটাকে সংক্ষেপে বি.বি কাপ বলে। এই কাপ ঠিকমতো পরিষ্কার রাখলে তোমার সাইকেল আরও দ্রুতগতিতে চলবে। এটা পরিষ্কার করার জন্য মাঝেমধ্যে কাপগুলোকে বের করে নরম কাপড় দিয়ে মুছতে হয়, যেন ভেতরে থাকা ধুলা পরিষ্কার হয়। তবে এই কাপ খোলার বিশেষ নিয়ম আছে। প্রথমেই সাইকেলে চেইনহুইল খুলে নিতে হবে। এরপর মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে সাইকেল ফ্রেমটিকে কোলের ওপরে কাত করে নিতে হবে। এ অবস্থায় সাইকেলের ওপরের টিউবটি তোমার বুকের ওপরে থাকবে। এরপর হাতুড়ি দিয়ে অপর পাশ থেকে বিবি কাপে আঘাত করলে ধীরে ধীরে সেটি নিচের দিকে বের হয়ে আসবে। কোনোভাবেই বিবি কাপে জোরে আঘাত করা চলবে না।

পথে থামো ব্রেকের ঘষায়

সাইকেলে চেপে স্টান্টবাজি করতে গিয়ে ব্রেকটা নষ্ট করে ফেলে অনেকেই। রাস্তায় চলতে চলতে হুট করেই টের পেলে যে তোমার ব্রেক কাজ করছে না। একটু বুঝতে চেষ্টা করো, কোথায় ঠিক সমস্যা হয়েছে। অনেক সময় সাইকেল ধোয়ার পরে চাকার রিং বেশি মসৃণ থাকার কারণে ব্রেক কাজ করে না। আবার ব্রেকের যে ক্লিপ, সেটাও ক্ষয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে নতুন ক্লিপ লাগিয়ে নিতে হবে। আর যদি ব্রেক টাইট করতে চাও, তাহলে ক্লিপের পেছনে থাকা স্ক্রুগুলো টাইট করে নিতে পারো। কোনোভাবেই ব্রেক ঠিক না করে সাইকেল চালাবে না। প্রয়োজনে তোমার আশপাশে থাকা মেকানিকের সাহায্য নিতে ভুলো না কিন্তু

চাকার হাওয়ায় ভাসতে হলে

প্রতিদিন সাইকেল নিয়ে বের হওয়ার আগে চাকায় হাওয়া ঠিক আছে কি না, সেটা দেখতে তুমি ভোলো না, তা আমি জানি। তবে চাকায় পরিমাণমতো হাওয়া আছে কি না, সেটাও কিন্তু তোমায় বুঝতে হবে। কম হাওয়া হলে তোমার সাইকেল চালাতে কষ্ট হবে, ক্ষতি হবে চাকার স্পোক আর রিংয়ের। আবার বেশি হাওয়া হলেও সাইকেল লাফাবে। অতিরিক্ত হাওয়ার চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে টায়ার। তাই চাকায় হাওয়া দেওয়ার পরপরই মেপে দেখতে পারো চাকায় হাওয়ার চাপ। এ জন্য কিনে নিতে পারো ছোট্ট একটা ব্যারোমিটার। কিছু হ্যান্ড পাম্পারে ব্যারোমিটার সঙ্গেই থাকে। সাধারণত ৭০ থেকে ১০০ পিএসআই (পাউন্ড ফোর্স পার স্কয়ার ইঞ্চ) চাপ থাকে সাইকেলের চাকায়। হাওয়া ভরা শেষে চাকায় কোনো ছিদ্র আছে কি না দেখে নিতে ভুলো না কিন্তু।

ঠিক করে নাও বাঁকা হ্যান্ডেলবার

অনেক জোরে সাইকেল চালালে, দ্রুত বাঁক নিলে তোমার সাইকেলের হ্যান্ডেলবার বাঁকা হয়ে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে হ্যান্ডেলবারের বোল্টও ঢিলা থাকে। সাইকেল চালাতে চালাতে এ রকম কিছু হলে সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক করে নিতে পারো তুমি নিজেই। এ অবস্থায় সাইকেলের সামনের দুই চাকা তোমার দুই পায়ের মাঝে নিয়ে দাঁড়াতে হবে। তারপর দুই হাতে সাইকেলের হ্যান্ডেলবার দুদিক থেকে ধরে ডানে–বাঁয়ে প্রয়োজনমতো ঘুরিয়ে সোজা করে নিতে পারো। সবশেষে হ্যান্ডেলবারের ওপরের দিকে থাকা বোল্টটি টাইট দিতে ভুলো না। বারবার হ্যান্ডেলবার যদি ঢিলা হয়ে যায়, তাহলে নিকটস্থ মেকানিক দেখিয়ে বদলে নিতে পারো হ্যান্ডেলবারের বোল্টটি।

তাহলে আর বাধা কিসে? দুই–চাকার বন্ধুটিকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়ো নতুন কোনো অভিযানে। আর যেকোনো সমস্যায় নিজেই সারিয়ে ফেলো তোমার প্রিয় সাইকেলটিকে।