সাইকেলের নিরাপত্তায়

সাইকেলে চড়ে দেশ–দেশান্তরে ঘুরে বেড়ানোর নেশা নেই, এমন মানুষ পাওয়া বেশ দুরূহ। তবে ভ্রমণের নেশায় সাইকেলে চেপে বসার আগে তোমার প্রিয় সাইকেলটার নিরাপত্তার কথা ভুললে কিন্তু চলবে না। নিজে নিরাপদ থাকার পাশাপাশি সাইকেল যেন চুরি না হয়, সে বিষয়েও কিন্তু লক্ষ রাখা জরুরি। জেনে নেওয়া যাক সাইকেলের নিরাপত্তায় আরও কিছু টুকিটাকি।

বুঝেশুনে রেখে যাও

কোথাও সাইকেলে করে ঘুরতে গেলেও রেস্টুরেন্টে খেতে ঢুকলে বা হেঁটে যাওয়ার প্রয়োজন হলে সাইকেল পার্ক করার প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন সাইকেলটি সঠিক স্থানে পার্ক করা হয়। অনেক সাইকেলের সঙ্গে পার্ক করার সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন অন্যের সাইকেল বের করতে সমস্যা না হয়। পাশাপাশি সাইকেল রাখার সময় আরেক সাইকেলের হ্যান্ডেলবার যেন তোমার সাইকেলে লেগে স্ক্র্যাচ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চেষ্টা করতে হবে সাইকেল পার্কিং স্ট্যান্ডেই যেন সাইকেল রাখতে পারো। সে ক্ষেত্রে সাইকেলের নিরাপত্তার জন্য স্ট্যান্ডের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের তালা ব্যবহার করা যেতে পারে।

কী দিয়া বাঁধিবে তারে

তোমার প্রিয় সাইকেল নিরাপদ রাখার জন্য বেছে নিতে পারো পছন্দসই শিকল। স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি এসব শিকলে মরিচা ধরে না। ফলে এ ধরনের শিকল ব্যবহার করা বেশ নিরাপদ। প্রয়োজনে কাপড়ের কভার ব্যবহার করা যেতে পারে। তাহলে শিকলের সঙ্গে ঘষা লেগে সাইকেলের ফ্রেমে স্ক্র্যাচ পড়বে না। সাইকেল এক্সেসরিজের দোকানেই এমন শিকল পেয়ে যাবে। শিকলের আকার আর পুরুত্বের বেশ–কম মিলিয়ে এগুলোর দাম পড়বে ৩০০–৫০০ টাকা। শিকলের সঙ্গে ব্যবহার করা চাই ভালো তালা। এ জন্য ব্যবহার করতে পারো মোবাজ তালাগুলো। এই তালাগুলোর চাবিতে চার ধরনের স্ট্রোক থাকার ফলে সহজে এই তালার নকল চাবি বানানো যায় না, যা তোমার সাইকেলের জন্য বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

নতুন সাইকেল কেনার সঙ্গে সঙ্গেই সাইকেল–সম্পর্কিত কিছু তথ্য সংগ্রহ করে রাখতে হবে। সাইকেল কেনার রসিদটি কিন্তু ভুলেও ফেলে দেবে না। কারণ, সাইকেলের মালিকানা প্রমাণের এটাই তোমার একমাত্র লিখিত প্রমাণ।

এ ছাড়া এখন সিক্রেট কোড–নির্ভর সাইকেলের তালাও পাওয়া যায়। তোমার দেওয়া কোডেই শুধু এসব তালা খোলা সম্ভব। দাম একটু বেশি হলেও প্রিয় সাইকেলের নিরাপত্তার কথা ভেবে এগুলোও ব্যবহার করতে পারো তুমি। ডি–লক নামের আরেক বিশেষ ধরনের সাইকেল লক পাওয়া যায় বাজারে, যেগুলো চাকার সঙ্গে আটকে দিলে সাইকেলের চাকা আটকে যায়। ফলে সাইকেলে চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে

বাড়িতেও চাই কড়া নিরাপত্তা

আমেরিকার এক জরিপে দেখা যায়, বেশির ভাগ সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটে বাসায়। কেননা বাড়িতে সাইকেল রাখার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি অনিরাপদভাবে রাখি আমরা। তাই বাড়ির গ্যারেজে সাইকেল রাখার ক্ষেত্রেও নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। সেখানেও সাইকেলে তালা দিয়ে রাখতে হবে। গ্যারেজে সিসি ক্যামেরা থাকলে সাইকেল যেন ক্যামেরাসীমার মধ্যে থাকে, সেটার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। সাইকেলে লাগানো ফ্ল্যাশ লাইট, হর্ন, স্পিড মিটার যেন কেউ সহজে খুলে নিতে না পারে, এ জন্য স্ট্রিপ বেল্ট দিয়ে এগুলো লাগিয়ে রাখতে হবে। এ ছাড়া কেউ চাইলে তার থাকার রুমে সাইকেল হ্যাঙার লাগিয়েও সাইকেল রাখতে পারো, যা তোমার প্রিয় সাইকেলকে আরও বেশি নিরাপত্তা দেবে।

আরও পড়ুন

থাকা চাই নিজের চিহ্ন

তোমার প্রিয় সাইকেলটি অন্য সবার সাইকেলের থেকে আলাদা হওয়া চাই তো? তাহলে নিজের সাইকেলে নিজেই বানিয়ে নাও ছোটখাটো কোনো চিহ্ন। সেটা হতে পারে তোমার সাইকেলের কোথাও এঁকে রাখা বিশেষ কোনো চিহ্ন। পেনসিল বা পারমানেন্ট মার্কার দিয়ে সিট কভারের নিচে লিখে রাখতে পারো নিজের নামের আদ্যক্ষর। এ ছাড়া মাড কাভারের নিচেও চাইলে এ ধরনের কিছু এঁকে রাখা যেতে পারে। সাইকেলের পেছনের অংশে কোথাও তোমার পরিচয় লুকানো আছে, এমন বারকোডের স্টিকার লাগিয়ে দিতে পারো। তবে সাইকেলের ফ্রেমে এ ধরনের চিহ্ন তৈরি করতে গিয়ে কখনোই ফ্রেমের ক্ষতি করা যাবে না। এ ছাড়া এখন বাজারে ভেহিকল ট্র্যাকিং ডিভাইস পাওয়া যায়। চাইলে তোমার সাইকেলের নিরাপত্তার জন্য সেগুলোও ব্যবহার করতে পারো।

টুকে রাখো টুকিটাকি

নতুন সাইকেল কেনার সঙ্গে সঙ্গেই সাইকেল–সম্পর্কিত কিছু তথ্য সংগ্রহ করে রাখতে হবে। সাইকেল কেনার রসিদটি কিন্তু ভুলেও ফেলে দেবে না। কারণ, সাইকেলের মালিকানা প্রমাণের এটাই তোমার একমাত্র লিখিত প্রমাণ। এ ছাড়া সাইকেলের মডেল নম্বর, ফ্রেম নম্বর, কালার কোড, ফ্রেমের সাইজ, সাইকেলের চাকার সাইজ, গিয়ার মডেল নম্বর টুকে রাখবে। পরবর্তী সময়ে তোমার সাইকেল চুরি গেলে এসব তথ্য তোমার সাইকেলটি খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।

যদি দুর্ঘটনা ঘটেই যায়

হাজারো সতর্কতা অবলম্বনের পরেও তোমার সাইকেল চুরি হয়ে যেতেই পারে। সাইকেল চুরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিশেহারা হওয়া চলবে না। তোমার স্থানীয় বন্ধুদের সাইকেলের বিবরণসহ খোঁজ করতে বলো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও তোমার সাইকেলের বিবরণ, ছবিসহ পোস্ট করতে পারো। সে ক্ষেত্রে কেউ তোমার সাইকেল দেখে থাকলে বা চোর তোমার সাইকেল কোথাও বিক্রি করতে গেলে তুমি তার খোঁজ পাবে। এ ছাড়া নিকটস্থ থানায় তোমার সাইকেলের সব তথ্য নিয়ে গিয়ে সাধারণ জিডি করে রাখতে পারো। সাইকেলে জিপিএস সিস্টেম ব্যবহার করে থাকলে সেটা দিয়েও সাইকেলের অবস্থান জানতে পারবে।

সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেল কেনার ক্ষেত্রে ওই সাইকেল চুরি করা হয়েছে কি না, সেটা জানতে যার থেকে কিনবে, তার থেকে সাইকেল কেনার রসিদ দেখে নাও। একটু চোখ–কান খোলা রাখলেই তোমার প্রিয় সাইকেলের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা তুমিই দিতে পারবে।

তাহলে আর চিন্তা কিসের? সব কিছু ভেবেচিন্তে তোমার প্রিয় সাইকেলকে সঙ্গী করে বেরিয়ে পড়তে পারো নতুন কোনো অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে।