দুটি হাতই যাঁর সমান চলে, তিনিই সব্যসাচী। বাংলা ভাষার এই শব্দটি সবচেয়ে জুতসই সৈয়দ শামসুল হকের বেলায়। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জীবনাবসান হয় এই বিখ্যাত লেখকের। বড়দের জন্য তো বটেই, ছোটদের জন্যও অনেক লিখেছেন তিনি।
সৈয়দ হকের জন্ম কুড়িগ্রামে, ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর। ছেলেবেলায় জ্বরে কাবু হয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে একদিন দেখেন, রান্নাঘরের পাশের শজনেগাছে একটা লাল টুকটুকে পাখি বসে আছে। তখনই লিখে ফেলেন, ‘আমার ঘরে জানালার পাশে গাছ রহিয়াছে/ তাহার উপরে দুটি লাল পাখি বসিয়া আছে।’ সেই থেকে শুরু। তাঁর প্রথম গল্পের বই তাস প্রকাশিত হয় ১৯৫৪ সালে। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র।
সৈয়দ হকের শিক্ষাজীবন শুরু কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুল থেকে। ২০০৪ সালে প্রকাশিত ছোটদের জন্য লেখা আমার স্কুল নামে একটা বইয়ে তিনি লিখেছেন সেই স্কুলজীবনের চমৎকার সব গল্প। তাঁর লেখা অমর সৃষ্টিগুলো হলো: নীল দংশন, বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ, তুমি সেই তরবারি, নিষিদ্ধ লোবান, বিরতিহীন উৎসব, বৈশাখে রচিত পঙিক্তমালা ওপরানের গহীন ভিতর। আর তাঁর অতুলনীয় কাব্যনাট্যের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় ও নূরলদীনের সারাজীবন।
১৯৮৬ সালে ছোটদের জন্য সৈয়দ হকের দুটি বই প্রকাশিত হয়—আনু বড় হয় ও সীমান্তের সিংহাসন। মফস্বলের আনু নামের এক ছেলের বেড়ে ওঠার কাহিনিটা পড়লে নিজেকেও একসময় আনু মনে হয়! তাঁর আরেকটা চমৎকার বই হডসনের বন্দুক। রোমাঞ্চে ভরপুর এই বইয়ের কাহিনির সূত্রপাত ১৮৫৭ সালে! সিপাহি বিদ্রোহ, দিল্ল্লির পতন, বাহাদুর শাহকে হত্যা, এনফিল্ড রাইফেল, ক্যাপ্টেন স্যামুয়েল হডসন, ব্রিটিশ যাত্রী হডসন, চেলোর বাক্স—সব মিলিয়ে জটিল এক রহস্যে জড়িয়ে পরে ঝিনুক আর তার মামা।
ছড়া-কবিতার বেলায় সৈয়দ হকের আমার পরিচয় বইটি এককথায় অনন্য। বইটিতে লিখেছেন, ‘আমি জন্মেছি বাংলায়, আমি বাংলায় কথা বলি/ আমি বাংলার আলপথ দিয়ে হাজার বছর চলি।/ চলি পলি মাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে।/ তেরোশত নদী শুধায় আমাকে কোথা থেকে তুমি এলে।’
সীমান্তের সিংহাসন বইটি সৈয়দ শামসুল হক উৎসর্গ করেছিলেন তাঁর ছেলে দ্বিতীয় সৈয়দ হককে। উৎসর্গপত্রে যেটা লিখেছিলেন, সেটা যেন বাংলাদেশের সব শিশু-কিশোরের উদ্দেশেই বলা, ‘...সাহসী হও, মানুষকে ভালোবাস, মানুষকে বাদ দিয়ে দেশ নয়, মানুষকে ভালোবাসাই দেশকে ভালোবাসা, দেশকে ভালোবাসতেও সাহসের দরকার হয়। বাবা দ্বিতীয়, সাহস ও ভালোবাসা নিয়ে তোমরা সবাই বড় হও।’
শিশু-কিশোরদের জন্য সৈয়দ শামসুল হকের যত বই
আনু বড় হয় (বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, ১৯৮৬)
লাল টুকটুক টিয়ে (বিদ্যাপ্রকাশ, ১৯৮৮)
হডসনের বন্দুক (বিদ্যাপ্রকাশ, ১৯৮৮; পাঞ্জেরী, ২০১৪)
সীমান্তের সিংহাসন (বইঘর, ১৯৮৬; বিদ্যাপ্রকাশ, ১৯৯৯)
গল্প + পদ্য = গল্পদ্য (অন্যপ্রকাশ, ১৯৯৮)
পড়ার ঘরে ছবি (বিদ্যাপ্রকাশ, ২০০০)
সবুজ নীল লাল জামা (অন্যপ্রকাশ, ২০০৪)
চালতালেবু (সাহিত্য প্রকাশ, ২০০৫)
কিশোর সমগ্র (চারুলিপি, ২০০৫)
শিশু-কিশোর কবিতাসমগ্র (মাওলা ব্রাদার্স, ২০০৭)
শ্রেষ্ঠ কিশোর কবিতা (শুদ্ধস্বর, ২০১১)
নৌকোর গল্প (জনতা প্রকাশ, ২০১২)
কলমের গল্প (জনতা প্রকাশ, ২০১২)
বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা (বাংলা একাডেমি, ২০১৩)
টরে টরে টক্কায় (বেঙ্গল পাবলিকেশনস লিমিটেড, ২০১৪)
বাবুদের বর্ণ চেনা (গোল্ডেন বুকস, ২০১৪)
আমার পরিচয় (বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, ২০১৫)
এই আমাদের সোনার বাংলা (অন্যপ্রকাশ)
আমার স্কুল (সাহিত্য প্রকাশ, ২০০৪)