স্যরি ভাইয়া!

তখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি। স্কুলের বেতনটা ব্যাগ থেকে কীভাবে যেন হারিয়ে গেল। বাবা-মাকে টাকা হারানোর কথা বললেই বকা খেতে হবে। কিছু না ভেবেই আম্মুর ব্যাগ থেকে ৫০০ টাকা সরিয়ে ফেললাম আমি। ভেবেছিলাম কেউ টের পাবেনা। কিন্তু আম্মু ঠিকই টের পেয়ে গেলেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, সরাসরি অস্বীকার করলাম। ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করতেই ভাইয়া খেপে গেল। ভাইয়ার টেবিলে নতুন কমিক বইগুলো দেখে আম্মুর সন্দেহ হলো ভাইয়ার ওপর। ঘটনা শুনে ভাইয়াকে মারধরও করলেন বাবা। আমি আরও ভয় পেয়ে গেলাম। মনে মনে বারবার বলছিলাম টাকা আমি নিয়েছি, কিন্তু মুখে বলতে পারছিলাম না। পরে ব্যাপারটা সবাই ভুলে গিয়েছিল, ভাইয়াও। কিন্তু আমি ভুলিনি। ভাইয়াকে কখনোই সাহস করে বলতে পারিনি, ‘ভাইয়া, টাকাটা আমিই নিয়েছিলাম।’ প্রায়ই ভাবি ওকে সরি বলব। কিন্তু বলা হয় না। কাকে বলব? ভাইয়া মারাগেছে তিন বছর হয়ে গেল। এসব সরি-টরি কি আর ওকে স্পর্শ করবে এখন? দেয়ালে টাঙানো ওর ছবির দিকে হঠাৎ চোখ পড়লে বুক ফেটে কান্না আসে। ছবিটার দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ভাবি, কেন এমন করলাম! খুব অপরাধী মনে হয় নিজেকে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর আগ পর্যন্ত ভাইয়ার সঙ্গী ছিল কমিক বই। কমিকের সংগ্রহ বাড়াতে চাইত ও। আমি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। এখনো কমিক দেখলেই কিনে ফেলি ভাইয়ার জন্য। কমিকের সংগ্রহ এখন বেড়েছে অনেক, শুধু ভাইয়া দেখছেনা। কে জানে, হয়তো দেখছে।

তাসনুভা জারিন

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, মহাখালী, ঢাকা