এবার গরমের ছুটি থাকবে না, শিশু-কিশোরেরা কী বলে

ছোটবেলায় গ্রীষ্মের ছুটি একটা বিশেষ ব্যাপার ছিলঅলংকরণ: আরাফাত করিম

আয় ছেলেরা, আয় মেয়েরা
ফুল তুলিতে যাই,
ফুলের মালা গলায় দিয়ে
মামার বাড়ি যাই।

...

ঝড়ের দিনে মামার দেশে
আম কুড়াতে সুখ,
পাকা জামের মধুর রসে
রঙিন করি মুখ।

গ্রীষ্মের ছুটি। গরমের ছুটি। আম-কাঁঠালের ছুটি। বাংলাদেশে একটা বিশেষ ছুটি। এ নিয়ে কত গল্প-কবিতা। বইয়ের নাম আছে—‘আম-কাঁঠালের ছুটি’। এবার একটা সিনেমাও হচ্ছে এ নামে।

আমাদের ছোটবেলায় গ্রীষ্মের ছুটি একটা বিশেষ ব্যাপার ছিল। আমরা অনেকেই ছোটবেলায় গ্রামে দাদার বাড়ি, নানার বাড়ি যেতাম। আমগাছ থেকে আম পাড়া হতো। আম পাকলে ঝাঁকা ভরে আম সামনে নিয়ে খেতে বসতাম। কনুই বেয়ে ঝরত আমের রস। ঝড়ের দিনে আম কুড়ানো ছিল এক আনন্দের ঘটনা। কাঁঠালের গন্ধে পুরো আঙিনা ভরে থাকত। বড় বড় মাছি ভনভন করত। আম–আঁটির ভেঁপু বানাতাম। জামের দাগে গেঞ্জির দিকে তাকানো যেত না।

এবার স্কুলগুলোয় আম-কাঁঠালের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। আবার তা বাতিলও করা হয়েছে। এ নিয়ে কথার ঝড় উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরগরম।

গরমের ছুটি হঠাৎ বাতিল হলো। কিশোর আলোর পাঠকেরা কী বলে? তারা কি খুশি?

তা জানতে ফোন করলাম কুড়িগ্রামে। কুড়িগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শস্য সরকার সংঘ। তাঁর বাবা নাহিদ হাসান কুড়িগ্রামের লেখক এবং নাগরিকদের নানা আন্দোলনের সংগঠক। শস্য বলল, ‘গ্রীষ্মের ছুটি বাতিল হয়েছে। আমি খুশি।’

‘তুমি খুশি?’

‘হ্যাঁ। কারণ, পুষ্টি–প্রথম আলো বিতর্ক উৎসব হচ্ছে। আমাদের এলাকার দুই ভাই বলেছেন, ছুটি হলে তাঁরা বেড়াতে যাবেন। তখন বিতর্ক উৎসব ভালো হবে না। তাই আমি খুশি।’

‘তোমার বন্ধুরা খুশি না তাদের মন খারাপ?’

‘ওদের মন খারাপ। ওরা চায় স্কুল ছুটি থাকুক।’

কুড়িগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শস্য সরকার সংঘ

রংপুরে ফোন করলাম একজন শিক্ষিকার কাছে। তিনি বললেন, ‘খুবই মুশকিল হলো। বেড়াতে যাওয়ার জন্য টিকিট কিনে ফেলেছি। এই টিকিটগুলোর এখন কী হবে?’ কথা হলো ক্লাস নাইনে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারও ছুটি নিয়ে নানা পরিকল্পনা ছিল। সব ভেস্তে যাচ্ছে।

ঢাকার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বললেন, স্কুলের ছুটি ঘোষণা করে তা বাতিল করাটা বেশ ঝামেলার হয়েছে। নির্বাচন যে বছরের শেষে, সেটা তো সরকার আগে থেকেই জানত। হঠাৎ কি তারা জানল? তাহলে আগে থেকে বলে রাখলেই হতো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে!

আরও পড়ুন

ঢাকার এক সাংবাদিক অবশ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে রাখার পক্ষে। তিনি বলেন, নানা অজুহাতে প্রতিষ্ঠানগুলোয় ছুটি থাকে। এসএসসি পরীক্ষার জন্য অনেক স্কুলেই ছুটি ছিল। ঈদের সময়ও ছুটি কাটিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বারবার ছুটিতে তাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে মনে করেন অনেক অভিভাবক।

তবে মোটের ওপর শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা গ্রীষ্মের ছুটি বাতিল হওয়ায় মন খারাপ করেছেন, অনেকেই অসুবিধায় পড়েছেন। প্রথম আলোয় প্রকাশিত ছুটি বাতিলের খবরের নিচের কয়েকটা মন্তব্য—

১. যে হারে ডেঙ্গু বেড়েছে, ছুটিটা খুব প্রয়োজন ছিল।

২. সবাই ইতিমধ্যেই বাড়িত রওনা দিয়েছে আর এখন এই নিউজ! কেউ কখনো ছুটির আগের দিন ছুটি বন্ধ করে?

৩. বেড়াতে যাব। টিকিট কাটলাম। হঠাৎ ছুটি বাতিল কেন?

তোমার কী মনে হয়—ছুটি বাতিল ভালো, না খারাপ হলো? মন্তব্য করতে পারো।