ক্ষতিকারক প্লাস্টিক

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

স্কুল, অফিস বা অন্য অনেক জায়গায় আমরা সাধারণত প্লাস্টিকের বোতলে পানি বহন করি। পানি সঙ্গে না থাকলেও দোকান থেকে পানি কিনি আমরা। সেটাও থাকে প্লাস্টিকের বোতলে। কিন্তু এই প্লাস্টিকের বোতলে পানি পান করা কি নিরাপদ? আসলে কারখানাতে পানি যখন বোতলজাত করা হয়, সে সময় থেকে সেই পানি আমাদের কাছে পৌঁছাতে একটা দীর্ঘ সময় অতিক্রম করে। আমাদের ব্যবহারের আগে দুই থেকে তিন মাস বোতলের ভেতর রাখা থাকে পানি। যখন এত দীর্ঘ সময়ের জন্য পানি বোতলে আবদ্ধ থাকে, তখন খুব জটিল একটি সমস্যার সৃষ্টি হয়। গবেষণা থেকে জানা গেছে, দীর্ঘ সময়ের জন্য পানি বোতলে রাখা হলে সেই পানি অ্যাসিডিক হয়ে যায় (pH value দ্বারা নির্দেশিত)। সাধারণ খাওয়ার পানির পিএইচ মান ৬.৫ থেকে ৮.৫ যা নিরপেক্ষ বা কিছুটা ক্ষারীয়। কিন্তু যখন এই পানি দুই থেকে তিন মাস ধরে বোতলে বদ্ধ থাকে, তখন তার পিএইচ মান ৬.৫-এর নিচে নেমে যায়, যা অ্যাসিডিক এবং এই পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব বোতল থেকে একটি রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়, যার নাম BPA বা Bisphenol A। আমরা যখন ওই পানি পান করি, তখন আমাদের দেহে থাকা একধরনের হরমোন—Oestrogen–এর সঙ্গে পদার্থটি মিশে যায়। ফলে আমাদের দেহে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। যেমন ডায়াবেটিস, স্থূলতা, বন্ধ্যাত্ব। এখানেই শেষ নয়; প্রায় অনেক সময়ই আমরা এই পানির বোতল গাড়ি বা অন্যান্য জায়গায় রেখে দিই এবং এটি সম্পর্কে ভুলে যাই। যখন এসব বোতল সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসে এবং উত্তপ্ত হয়, তখন ডাই–অক্সিন নামের একধরনের টক্সিন নির্গত হয়। এই টক্সিনের কারণে স্তন ক্যানসারের মতো অনেক গুরুতর রোগ সৃষ্টি হয়। এই যে আমরা কোনো চিন্তা ছাড়াই এসব বোতল কিনছি, ব্যবহার করছি, এটা পরিবেশের ওপর ঠিক কতটা প্রভাব পড়ছে, তার ধারণা কি আছে আমাদের?

রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন

আমরা প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করি—
i) প্রতি মাসে ৪০ বিলিয়ন
ii) প্রতিদিন ১.৩ বিলিয়ন
iii) প্রতি ঘণ্টায় ৫৪.৯ মিলিয়ন
iv) প্রতি মিনিটে ১ মিলিয়ন করে

এখন ভেবে দেখো, কত দ্রুত এই রোগগুলো আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে। বাজারের প্রায় সব পানির বোতল প্লাস্টিকের তৈরি। এমন পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের নিজস্ব পানির বোতল বহন করতে পারি। এতে পরিবেশে প্লাস্টিকের বিস্তার কমবে এবং আমাদের শরীরের জন্যও এটি একটি সেরা বিকল্প। বাজারে অনেক পানির বোতল পাওয়া যায়, যেগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহারের উপযোগী। যেমন কাচের বোতল, স্টিলের বোতল, তামার বোতল কিংবা বাঁশের তৈরি বোতল। এসব বোতল পানিকে অ্যাসিডিক বানিয়ে ফেলে না। আর তামার বোতলে পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আমাদের সবার উচিত এ ধরনের বোতল ব্যবহার করা এবং আমাদের পরিবেশ ও শরীর উভয়ই রক্ষা করা।