টুনি যখন নেইমার

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

এক যে ছিল টুনি। সে বসে ছিল বেগুনগাছে। হঠাৎ এল বৃষ্টি। তার পালক গেল ভিজে।

তারপর রোদ উঠল।

টুনি তার মাথার পালক মুছল।

তার মাথার চুলের মাঝখানটা খাড়া হয়ে গেল।

তখন টুনির বন্ধু ঠুনি বলল, এই তোকে দেখতে লাগছে নেইমারের মতো।

টুনি বলল, নেইমার, সে আবার কে?

ও মা, নেইমারকে চিনিস না? নেইমার হলো একজন ফুটবল খেলোয়াড়। সে ব্রাজিলের ছেলে। আর সে খেলে ফ্রান্সের পিএসজি দলের হয়ে।

টুনি বলল, না তো, চিনি না তো।

ঠুনি বলল, চিনে রাখ। আচ্ছা তোকে ছবি দেখাব। আমার বাসার আমগাছের নিচে চায়ের দোকান। সেই দোকানের গায়ে একটা পেপার সাঁটা আছে। সেই পেপারে নেইমারের ছবি আছে।

টুনি আর ঠুনি উড়ে গেল আমগাছে। তারপর উড়ে উড়ে দেখতে লাগল নেইমারের ছবি। দোকানের টিনের চালে লাগানো। নেইমারের চুল মধ্যখানে খাড়া।

তারপর টুনি আর আর ঠুনি গেল একটা পাকা বাড়ির পাশে। সেখানে জানালায় কাচ আছে। সেই কাচে টুনি দেখল নিজের চেহারা। তার মাথার ওপরের পালক সত্যি নেইমারের মতো হয়ে আছে।

টুনি বলল, ঠুনি, আমাকে তো দেখতে নেইমারের মতোই লাগছে।

ঠুনি বলল, আজ বিকেলে আমরা ফুটবল খেলব। তুইও আমাদের সঙ্গে খেলবি।

টুনটুনি পাখিদের দল বিকেলে মাঠের মধ্যে ফুটবল খেলছে। তারা ফুটবল খেলছে একটা বরই দিয়ে। তাদের ছোট্ট পা দিয়ে তারা বরইটাকে লাথি দেয়। বরইটা ফুটবলের মতোই গড়াতে থাকে।

টুনি এর আগে ফুটবল খেলেনি কখনো। ফুটবল খেলার নিয়ম সে জানে না।

গোল কী? সে জানতে চায়।

তারা বলল, ওই যে দুটো খুুঁটি পোঁতা আছে, তার মধ্য দিয়ে এই বলটাকে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে গোল হবে। যে বেশি গোল দেবে, সেই দল জিতে যাবে। সে দল বেশি গোল খাবে, তারা যাবে হেরে।

টুনিও খেলতে নামল। সবাই তাকে উৎসাহ দিচ্ছে,

নেইমার। নেইমার।

তোর কপালে নেই মার।

আরও জোরে জোরে মার।

নেইমার নেইমার।

টুনি উৎসাহ পেয়ে নিজের গোলবারের ভেতরেই বল পাঠিয়ে দিল। গোল গোল।

কিন্তু তার দলের সব পাখি এসে তাকে ঘিরে ধরল, আরে বোকা, তুই তো নিজের গোলে বল পাঠিয়েছিস। এটাকে বলে সেমসাইড, আত্মঘাতী গোল।

এবার টুনি বুঝতে পারল, গোল করতে হবে উল্টো দিকের গোলপোস্টের মধ্য দিয়ে।

তখন সে তার ঠোঁট দিয়ে বরইটা ধরে উড়ে গিয়ে গোল দিয়ে দিল।

সবাই বলল, হ্যান্ডবল। হ্যান্ডবল।

টুনি বলল, আমাদের তো হাত নেই। হ্যান্ডবল হবে কোত্থেকে?

রেফারি হয়েছিল চড়ুইপাখি। সে বলল, ঠোঁট দিয়ে বল ধরাই পাখিদের হ্যান্ডবল।

ওদের খেলা ভালোই জমে উঠেছে। এই সময় ওখানে এল একটা মানুষের বাচ্চা। সে বরইটা তুলে নিয়ে জামায় মুছে পুট করে মুখে পুরে ফেলল।

টুনি চিৎকার করে উঠল, গোল খেয়ে ফেলেছে। গোল খেয়ে ফেলেছে।

তারপর মানুষের বাচ্চাটা বরইয়ের বিচিটা মুখ থেকে বের করে দিল। টুনি আরও জোরে চিৎকার করে উঠল, গোল খেয়ে বিচি ফেলে দিয়েছে।

ঠুনি খুব লজ্জা পেল তার এই বন্ধুটির কথায়। সে তাকে লেজ দিয়ে বাড়ি দিয়ে বলতে লাগল, এই চুপ চুপ।

তারপর শুরু হলো বিশ্বকাপ ফুটবল।

ঠুনির সঙ্গে টুনি চলল ডালিমগাছের ডালে। ওখানে বসে পাশের বাড়ির ভেতরে টেলিভিশনে ফুটবল খেলা দেখা যায়।

তারা খেলা দেখছে। গাছের ডালে আরও নানা ধরনের পাখি বসে আছে। তারাও খেলা দেখছে।

খেলা চলছে।

টুনি ফিসফিসিয়ে বলল ঠুনিকে, এই, ওরা তো শুধু ফুটবলটাকে লাথি মারছে। কিন্তু খাবে কখন?

খাবে মানে?

ওরা গোল খাবে কখন?

গোল হলেই গোল খাবে।

গোল গোল...

সবাই চিত্কার করছে।

টুনি বলল, গোল খেয়েছে?

হ্যাঁ খেয়েছে।

কে খেয়েছে?

ওই তো হন্ডুরাস দল গোল খেল।

হন্ডুরাস গোল খেয়েছে। আচ্ছা। ওই সাদা দলটাই তো হন্ডুরাস, তাই না? ওদের কে গোলটা খেয়েছে?

ওই যে গোলকিপারটা।

আচ্ছা আচ্ছা। আমি তাহলে ওকেই ফলো করছি। এখনই নিশ্চয় সে গোলের বিচিটা ফেলে দেবে।

বিচি ফেলবে মানে? ঠুনি বিস্মিত কণ্ঠে বলল।

আমাদের খেলার সময় তো একটা মানুষের বাচ্চা বরইটাকে খেয়েই ফেলেছিল। তারপর বিচিটা বের করে দিয়েছিল। এরা যদি গোল খাবেই, তবে বিচি বের করে দিল না কেন? বিচিসমেত খেলে কিন্তু পেটে গাছ হবে...