পুনঃকথন: কাজী শাহনুর হোসেন
এক দেশে ছিলেন এক রাজা আর এক রানি। তাঁদের মাত্র একটাই ছেলে।
রাজপুরীর পাশে একটা তালগাছ ছিল। তাতে এক রাক্ষসী বাস করত। সে জানত যে রানির প্রাণ একজোড়া পাশার মধ্যে। আর কেউ এ কথা জানত না। রাক্ষসী কেবল তক্কেতক্কে থাকত।
একবার রাজা গেছেন মৃগয়ায়। রাজপুত্র তার সঙ্গী-সাথিদের নিয়ে পাশা খেলছে। এমন সময় সেই রাক্ষসী ভিখারিণী সেজে রাজপুত্রের কাছে পাশাজোড়া চাইল। রাজপুত্র কি আর এতসব জানে! সে পাশাটা ভিখারিণীকে দিয়ে দিল। আর যায় কোথায়? অমনি রাক্ষসী ফুঁ দিয়ে সেই পাশা পাঠিয়ে দিল বহুদূরের এক রাজ্যে। ফলে রানি তাঁর ঘরে ঢলে পড়ে গেলেন। রাক্ষসী তখন রানিকে খেয়ে রানির মূর্তি ধরে বসে রইল।
রোজকার মতো রাজা খেতে এলেন। রানি আজও অন্যান্য দিনের মতো সেবা-যত্ন করলেন। কেবল রাজপুত্র খেতে বসে দেখল আজ তাকে খাবার বেড়ে দেওয়ার সময় মায়ের জিব থেকে এক ফোঁটা পানি টস করে পড়ল। ভয়ে রাজপুত্রের গায়ে কাঁটা দিল। সে না খেয়ে উঠে পড়ল। কিন্তু এ কথা আর কেউ জানল না।
ইতিমধ্যে সাত বছর পেরিয়ে গেছে। রানির একে একে সাত ছেলে হয়েছে। রাজা তো মহাখুশি। কেবল রাজপুত্র দেখল তালগাছটা দিনকে দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। তাতে আর কোনো পাখি বসে না।
সাত রাজপুত্র ধীরে ধীরে বড় হলো। তারা একদিন রাজাকে বলল, ‘বাবা, আমরা দেশভ্রমণে যাব।’
রাজা তখন বড় রাজপুত্রকে ডেকে সে-কথা জানালেন। তারপর আট রাজপুত্রের জন্য দেশভ্রমণের ব্যবস্থা করলেন। রাক্ষসী রানি সব দেখল। সে হন্তদন্ত হয়ে ঘরে গিয়ে তার কৌটো খুলল। কৌটোর ভেতর আছে এক সুতাশঙ্খ সাপ। সুতার মতো সরু সেই সাপ। কিন্তু হলে হবে কী? গুরুগম্ভীর তার আওয়াজ। রানি বলল, ‘সুতাশঙ্খ, বল কুমারের প্রাণ আছে কিসে?’
সুতাশঙ্খ বলল, ‘ডালিম কুমারের আয়ু ডালিমের বীজে।’
তখন রানি করল কী, একটা কাগজে চিঠি লিখে সুতাশঙ্খকে দিল। তাতে লেখা আছে রাক্ষসী রানির সাত ছেলেকে পাশাবতীর রাজ্যে পাঠানো হলো। তাদের জন্য সাত কন্যা চাই। আর সতিনের ছেলে ডালিম কুমারকে যেন চিবিয়ে খাওয়া হয়। চিঠি নিয়ে সুতাশঙ্খ উড়ে চলল পাশাবতীর রাজ্যে। আর রানি মন্ত্র পড়ে একটা ডালিম হাতে নিল। তারপর রাজপুরীর হাজার সিঁড়ির ধাপে দাঁড়িয়ে বলল, ‘সিঁড়ি, তুমি দুই ফাঁক হও, এই ডালিমের বীজ তোমার ফাটলে থাক।’ ডালিমের বীজ হাজার সিঁড়ির ফাটলে সারা জীবনের মতো বন্ধ হলো। আট রাজপুত্র তখন ছুটে চলেছে। হঠাৎ ডালিম কুমারের চোখ অন্ধ হয়ে গেল। সে ছিটকে পড়ল ঘোড়া থেকে। সাত রাজপুত্র ভাবল দাদা সঙ্গেই আছেন। তারা ঘোড়া ছুটিয়ে চলল ঝড়ের গতিতে।
রাক্ষসী তখন আবার মন্ত্র পড়ে এক পঙ্খীরাজ ঘোড়া পাঠিয়ে দিল পাশাবতীর রাজ্যে। তারপর মনের সুখে নরম বিছানায় গিয়ে শুয়ে রইল। যেতে যেতে সুতাশঙ্খ ক্লান্ত হয়ে পড়ল, সে করল কি কুণ্ডলী পাকিয়ে এক বাগানের গাছে যে ফল ঝুলে আছে তার ভেতর ঢুকে ঘুমিয়ে রইল।
সেই বাগানটা আবার ছিল এক রাজার। সেই রাজার কন্যা রোজ সেই গাছের ফল খায়। তো প্রতিদিনকার মতো মালি আজও তাকে ফল পেড়ে এনে দিল। আর রাজকন্যা তো জানে না, সে সুতাশঙ্খসহ ফলটা খেয়ে ফেলল। ফলে সুতাশঙ্খের সঙ্গে সঙ্গে রাক্ষসীর চিঠিটাও রাজকন্যার পেটে গেল।
চিঠির কথা তো আর সাত রাজপুত্র জানে না। ফলে তারা পঙ্খীরাজ ছুটিয়েই চলল। সারা রাত পর ভোর হলে তারা দেখে দাদা নেই। সবাই পঙ্খীরাজ থামিয়ে ডালিম কুমারের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। সেদিন সে রাত অপেক্ষা করার পরও যখন ডালিম কুমার এল না তখন তারা ভাবল দাদা নিশ্চয় এগিয়ে গেছে। তারা আবার সামনের দিকে ঘোড়া ছোটাল। ওদিকে রাক্ষসীর মন্ত্র পড়া পঙ্খীরাজ ছিল না? সেটা পাশাবতীর রাজ্যে গিয়ে উপস্থিত হলো। পাশাবতী ঘর-দুয়ার সাজিয়ে-গুছিয়ে বসে আছে। যে তাকে পাশা খেলে হারাতে পারবে তাকে নিজের ছয় বোনসহ বরণ করে নেবে। রাজপুত্রদের দেখে সে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা কারা?’
রাজপুত্রেরা বলল, ‘আমরা রাজপুত্র। দেশভ্রমণে বেরিয়েছি।’
পাশাবতী বলল, ‘মিথ্যে কথা। দেখে মনে হয় তোমরা যম। তবে আমার রাজ্যে এসে পড়েছ যখন তখন আমার সঙ্গে পাশা খেলতে হবে।’
রাজপুত্রেরা পাশা খেলার কথা শুনে উৎসাহিত হলো। তারা জিজ্ঞেস করল, ‘খেলার নিয়ম কী?’
তখন পাশাবতী বলল, ‘যদি তোমরা যম হও তবে তোমাদের সঙ্গে চিঠি থাকবে, আর যদি মানুষ হও তবে পাশা খেলতে হবে। যদি জেতো তবে আমরা সাত বোন তোমাদের সাত ভাইকে মালা পরাব। আর হারলে তোমরা আমাদের পেটে যাবে।’
রাজপুত্রদের কাছে তো আর চিঠি পৌঁছায়নি। কাজেই তারা খেলায় হেরে গেল। সাত বোন তখন তাদের কুচি কুচি করে কেটে খেয়ে ফেলল। তারপর আবার রূপসী নারীর মূর্তি ধরে বসে রইল।
ডালিম কুমার ঘোড়া থেকে যেখানে পড়ে গিয়েছিল সেটা এক রাজার রাজ্য। সেই রাজ্যের রাজপুরী সন্ধ্যার পর ঢোল-সানাইয়ের শব্দে জেগে ওঠে। কিন্তু ভোর হলেই সব চুপ। তখন কেবল কান্নাকাটি আর হাহাকার। আবার রাজার পাটহাতি সন্ধ্যায় যেই সেজেগুজে বেরোয় তখন রাজ্যের লোক খুশিমনে পথের দুপাশে সারি বেঁধে দাঁড়ায়।
পাটহাতি প্রতিদিন একজন করে লোককে ধরে সিংহাসনে তোলে। অমনি চারদিকে উৎসবের বন্যা বয়ে যায়। রাজ্যের রাজা করা হয় তাকে। রাজকন্যার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় তার। কিন্তু পরদিন ভোর হলেই দেখা যায় রাজকন্যার ঘরে কেবল হাড়গোড়। রাজার চিহ্নমাত্র নেই। রাজকন্যা বোঝে না, কেউই বোঝে না, রাজাকে কিসে খায়।
সেদিনও পাটহাতি বেরোল নতুন রাজার খোঁজে। পথের দুপাশে নিত্যকার মতো আজও লোকেরা সারি বেঁধে দাঁড়িয়েছে। পাটহাতি ছুটল। ওদিকে অন্ধ ডালিম কুমারের জ্ঞান ফিরেছে। বনের মধ্যে সে কেবল এপাশ-ওপাশ করে। পাটহাতি বনবাদাড় ভেঙে সোজা তার কাছে গিয়ে হাজির হলো। ডালিম কুমার তো কিছু দেখতে পেল না। কেবল হাতির পায়ের আওয়াজ পেল। সে কিছু বোঝার আগেই পাটহাতি তাকে শুঁড় দিয়ে সোজা পিঠের সিংহাসনে বসিয়ে রাজপুরীর দিকে ছুটল। রাজ্যের লোকও জয়জয়কার করে তাকে সিংহাসনে বসাল।
রাত নামতেই সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। এখন আর দরজায় পাহারার ব্যবস্থা করা হয় না। করে কী হবে? যা হওয়ার তা তো হবেই। সকালে উঠেই সবাই শুনবে এই রাজাও মারা গেছে।
রাজকন্যা গভীর চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেল। ডালিম কুমার কিছুই দেখতে পেল না কিন্তু রাজকন্যার নাকের ভেতর থেকে সুতার মতো এক সাপ বেরিয়ে এল। সেই সুতা বাড়তে বাড়তে দড়ি। তারপর আরও বেড়ে অজগরে পরিণত হলো। সেই অজগর শাঁখের মতো গর্জন করে উঠল।
তার গর্জনে পুরী উঠল থরথরিয়ে কেঁপে। ডালিম কুমার তলোয়ার বাগিয়ে ধরে বলল, ‘যেই হও না কেন তুমি, আমি যদি নিষ্পাপ হই তবে আমার এই তলোয়ার তোমাকে ছোঁবে।’ যেই বলা সেই কাজ। ডালিম কুমার তলোয়ার ঘোরাতেই সাপের ফণায় গিয়ে লাগল সেটা। সঙ্গে সঙ্গে সারা ঘর বিদ্যুতের ঝলকানিতে ভরে গেল। ডালিম কুমারও চোখের দৃষ্টি ফিরে পেল। তাকিয়ে দেখে বিরাট এক অজগর। তার তলোয়ারের ধারে অজগর সাত খণ্ডে কাটা পড়ল।
এদিকে এসব ঘটছে আর ওদিকে রাক্ষসী রানির প্রাসাদের সিঁড়ি হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল। রাজপুত্রের আয়ু ডালিমের বীজ, সোনার এক ডালিমগাছে পরিণত হলো। আর তাই দেখে রাক্ষসী রানি ভয়ে ইঁদুর হয়ে গেল। তারপর চিঁ চিঁ করে ছুটে পালাল। আর আসল রানির দেহ অজ্ঞান অবস্থায় মেঝেতে পড়ে রইল।
আর যে রাজ্যে রাজা বাঁচে না, সে রাজ্যের লোকজন পরদিন দেখে রাজা জীবন্ত!! তাদের আনন্দ আর ধরে না। তারা দেখে মেঝেতে সাপের কাটা শরীর পড়ে আছে। দেখে সবাই বুঝল যে এত দিন এই সাপই রাজাদের খেয়েছে। ওদিকে রাজকন্যা মেঝেতে এক চিঠি পড়ে পেয়ে সেটা দিল ডালিম কুমারকে। চিঠি পড়ে সে বলল, ‘রাজকন্যা, আমার সাত ভাইকে বোধ হয় রাক্ষসে খেয়েছে। আমি আর থাকতে পারছি না। চলি!’ রাজ্যের সবাই দুঃখে ভেঙে পড়ল। এত দিন পর একজন জ্যান্ত রাজা পাওয়া গেল, সেও কি না এখন চলে যাবে। কবে আবার ফিরবে কে জানে। তবু তারা আশায় বুক বেঁধে রইল।
যেতে যেতে ডালিম কুমার এক পাহাড়ের মাথায় গিয়ে উঠল। দেখে কি একটা পঙ্খীরাজ। তাকে দেখেই সেই পঙ্খীরাজ চিঁ হিঁ করে ডেকে উঠল। ডালিম কুমার তার পিঠে চেপে চলল ভাইদের উদ্ধার করতে। খানিক দূর গিয়ে দেখে সামনে এক কড়ির পাহাড়। সেই পাহাড়ের কাছে গিয়ে পঙ্খীরাজের পা তো আর চলে না। কড়ির সঙ্গে পায়ের খুরের খটাখট শব্দ। ডালিম কুমার তখন বলল; পঙ্খীরাজ, থেমো না, ছোটো।’
পঙ্খীরাজ ছুটল বিদ্যুতের গতিতে। তার পায়ের নিচে কড়ির পাহাড় চূর্ণ হলো সারা রাত ধরে। কড়ির পাহাড় পেরোতে না-পেরোতেই সামনে হাড়ের পাহাড়। হাড়ের পাহাড়ের নিচ দিয়ে রক্তের ঢেউ ছুটেছে কলকল শব্দ করে। আর মানুষের মাথার খুলি মুখ ভেংচে হি হি করে হাসছে। চারদিকে মরা মানুষের হাড়ের খটাখট শব্দে কান পাতা দায়। পঙ্খীরাজ এবারও ভয়ে থেমে পড়ল। কিন্তু ডালিম কুমার এবারও বলল, ‘পঙ্খীরাজ, থেমো না। ছোটো।’ কোথায় রইল হাড়ের পাহাড়! পঙ্খীরাজের খুরের তলায় সারা রাত চূর্ণ হলো সব হাড়গোড়। পরদিন সকাল হলে ডালিম কুমার পঙ্খীরাজের পিঠে চেপে পাশাবতীর রাজ্যে গিয়ে পৌঁছাল। দেখে পাশাবতীর ফটকে লেখা, ‘পাশা খেলে হারাতে পারলে সাত বোনে মিলে বিয়ে বসব।’
ডালিম কুমার বলল, ‘কে আছো? আমি পাশা খেলব।’
অমনি ফটক খুলে গেল। বেরিয়ে এল অপরূপ সুন্দরী এক কন্যা। সে ডালিম কুমারকে ভেতরে নিয়ে গেল। তারপর খাতির-যত্ন করে পাশা খেলতে বসাল। তার আগে বলে দিল পাশা খেলার নিয়ম। জিতলে গলায় মালা আর হারলে মরণ। খেলতে বসে ডালিম কুমার দেখল আরে! এ তো তারই পাশা। যেটা সে ভিখারিণীকে দিয়েছিল। কোত্থেকে যেন এক ইঁদুর এসে পাশা উল্টে দিল। ফলে ডালিম কুমার হেরে গেল। সে বলল, ‘আজ আমার পঙ্খীরাজটা নাও, কাল আবার খেলব।’ সে উঠে পড়ল। আর পাশাবতীরা সাত বোনে মিলে আড়ালে গিয়ে পঙ্খীরাজটা খেয়ে ফেলল।
পরদিন ডালিম কুমার পাশের এক গ্রামে গিয়ে একটা বিড়াল নিয়ে এল। তারপর আবার বসল পাশা খেলতে। আজ আর ইঁদুর আসে না। আসবে কী করে? ডালিম কুমারের চাদরের আড়ালে বিড়াল বসে আছে যে! ফলে পাশাবতী হেরে গেল। ডালিম কুমার তখন বলল, ‘আমার পঙ্খীরাজ দাও।’ পাশাবতী রাক্ষসী আর তার সাত বোন আড়ালে গিয়ে পঙ্খীরাজটা উগরে দিল। ডালিম কুমার পঙ্খীরাজটা বেঁধে রেখে এসে আবার খেলতে বসল। এবারও রাক্ষসী হারল। ডালিম কুমার বলল, ‘আমার মতো রাজপুত্র আর আমার পঙ্খীরাজের মতো পঙ্খীরাজ এনে দাও।’ পাশাবতী এক রাজপুত্র আর এক পঙ্খীরাজ এনে দিল। ডালিম কুমার দেখে তার এক ভাই আর ভাইয়ের ঘোড়া। ডালিম কুমার আবার খেলতে বসল। এভাবে বারবার রাক্ষসীকে হারিয়ে একে একে সে তার সাত ভাই আর তাদের ঘোড়াগুলো জিতে নিল। তারপর যতবারই খেলা হলো ডালিম কুমার ততবারই জিতল। ফলে পাশাবতীর রাজ্যও গেল। তার আর কিছুই দেওয়ার নেই। তখন ডালিম কুমার বলল, ‘তোমার পাশা আর ইঁদুরটা দাও’, পাশাবতী কি অত সহজে পাশা দেয়? ডালিম কুমার তখন তার চাদরের আড়াল থেকে বিড়াল বের করে ছেড়ে দিল। আর যায় কোথায়? ইঁদুরটার দফারফা হয়ে গেল। আর পাশাবতী? সে তার সাত বোনসহ কেঁচো হয়ে মেঝেতে মরে পড়ে রইল। আর তার রাজ্য আর প্রাসাদ গেল ধুলোয় মিশে।
ডালিম কুমার তখন পাশাটা হাতে তুলে নিতেই পাশা বলল, ‘রাজপুত্র, ঘরে চলো।’
ডালিম কুমার তার সাত ভাইকে নিয়ে আট পঙ্খীরাজে চেপে নিজ রাজ্যে ফিরে চলল।
ওদিকে রাজপুরীতে রানির জ্ঞান ফিরেছে। তিনি উঠে বসে বললেন, ‘ইশ্! কতকাল ঘুমিয়েছি। আমার ডালিম কুমার কই?’
ডালিম কুমার তার সাত ভাইকে নিয়ে তখন প্রাসাদে পৌঁছে গেছে। তারা ‘মা! মা!’ করে ডাকতে লাগল। তার ডাক শুনে রানি বেরিয়ে এসে দেখেন তাঁর কুমার ফিরে এসেছে। কত দিন পর তিনি কুমারকে দেখলেন! আট ভাই ছুটে এসে একে একে মাকে প্রণাম করল। রাজাও ছুটে এলেন সেখানে, সারা রাজ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল।
ওদিকে সেই যে রাজকন্যার দেশ, যে দেশে রাজা বাঁচত না, সে দেশের লোকেরাও সারা দুনিয়া খুঁজে সেখানে এসে উপস্থিত। তারপর ডালিম কুমারকে দেখে তারা খুশিতে চিৎকার করে বলল, ‘ওই তো আমাদের রাজামশাই। আপনি ছাড়া রাজ্য যে চলে না!’
তখন দুই রাজ্য এক হলো। রাজকন্যাকে ডালিম কুমারের সাত ভাই গিয়ে বরণ করে আনল। তারপর সবাই মিলে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।
আর ওই যে তালগাছ ছিল না? সেটা একদিন দুপুরে কথা নেই বার্তা নেই দুম করে পড়ে ফেটে ছত্রখান হয়ে গেল। আর তার জায়গায় একটা ডালিমগাছ গজিয়ে উঠল, যার ডালে ডালে ধরে সোনার ডালিম।