‘ফাহাদ, এই ফাহাদ, কোথায় গেলি? দেখ, তোর সঙ্গে দেখা করার জন্য কে এসেছে। ফাহাদ?’ চিৎকারর করে বললেন ফাহাদের মা। অথচ ফাহাদের সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই। কম্বলের নিচে গুটিসুটি মেরে বসে আছে সে। আর মাঝেমধ্যে চোখ দুটো বের করে এদিক-সেদিক দেখছে। কারণ, ফাহাদ মনে করে, কম্বলের মতো নিরাপদ আশ্রয়স্থল আর কোথাও নেই। তাই অনিরাপদ বোধ করলেই ফাহাদ চলে যায় তার চিরচেনা কম্বলের তলায়। হঠাৎ ফাহাদ কম্বলের ওপর কারও স্পর্শ অনুভব করল। তারপর ও এত জোরে লাফ দিল যে আর একটু হলে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে যেত। ফাহাদের মামা তাঁর চশমাটা ঠিক করে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কিরে ফাহাদ, ভয় পেলি নাকি?’ এই বলে দাঁতগুলো বের করে একটা ভৌতিক হাসি দিলেন। ফাহাদের মামা হবু ইঞ্জিনিয়ার। বুয়েটে পড়াশোনা করছেন। দেখতে পড়ুয়া টাইপের হলেও মানুষটা বেশ মজার। ফাহাদ তার মামার সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করে। শুধু তার খেলনাগুলো ছাড়া। ওগুলো ফাহাদের একান্তই নিজের। ফাহাদ তার মামাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘মামা, তোমাকে কিছু বলতে চাই।’
মামা উত্তরে বললেন, ‘তার আগে তুই বল, কম্বলের নিচে লুকিয়ে ছিলি কেন? আবার উল্টাপাল্টা কিছু দেখেছিস নাকি?’
ফাহাদের আবার ভয় বেশি। মানে উল্টাপাল্টা কিছু দেখলেই ও ভূত মনে করে। একদিন প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। ফাহাদের বাবা বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে বাসায় ফিরলেন। ফাহাদের বয়স তখন পাঁচ বছর। আবছা আলোয় সে তার বাবাকে দেখে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। আর এখন ফাহাদ কেজি টুতে পড়ে। কিন্তু ভূতের ভয় তার মাথা থেকে যায়নি। তাই সব সময়ই ও আতঙ্কে থাকে। মনে করে, এই বুঝি কেউ তাকে ধরে ফেলবে। ফাহাদ কাঁপা কাঁপা গলায় তার মামাকে বলল, ‘মামা, আমি বারান্দায় ভূত দেখেছি। ভূতটার চোখগুলো বাল্বের মতো জ্বলছিল। সত্যি বলছি মামা। প্রমিজ।’
মামা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, ‘তাই নাকি? চল আমার সঙ্গে। দেখিস তোর ভূতকে কীভাবে শায়েস্তা করি।’
মামা একটা টর্চলাইট, একটা লাঠি আর এক বালতি পানি নিয়ে ছুটে গেলেন বারান্দার দিকে। তাঁর পিছু পিছু ছুটল ফাহাদ, আর বলল, ‘মামা, আস্তে যাও। বারান্দার গোলাপগাছের টবটার পাশেই কিন্তু ভূতটা আছে। আস্তে যাও।’
মামা বারান্দায় গিয়ে গোলাপ ফুলের টবটার দিকে এগিয়ে গেল আর হাতে থাকা বালতির পানিটা সেদিকে ছুড়ে মারল। তারপর লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে আরম্ভ করল। হঠাৎ মিয়াওঁওঁওঁওঁ করে একটা জোরে চিৎকার হলো। ফাহাদের মনে হলো, আরে! এটা তো বিড়ালের ডাক! হাতে থাকা টর্চটা জ্বালিয়ে ফাহাদ স্পষ্ট দেখতে পেল, একটা কালো বিড়াল বারান্দা থেকে ছুটে পালাচ্ছে। তখন মামা ফাহাদের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বুঝলি ফাহাদ, ওই কালো বিড়ালটাই হলো তোর বাল্বওয়ালা ভূত। আবছা অন্ধকারে ওটার চোখগুলো জ্বলজ্বল করছিল।’ ফাহাদ কিছুক্ষণ বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইল আর বিড়বিড় করে বলতে লাগল, ‘ইশ্! কত বোকা আমি! সামান্য একটা বিড়ালকে ভূত ভেবে বসলাম।’