সূর্য-আকাশের হাসি-কান্নার গল্প

অলংকরণ: হামিদ ভূঁইয়া

আজ ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২১ আর ২৪ মে ২০১৪। আকাশের খুব মন খারাপ। সকালে উঠে শুনি সে রাগে গর্জন করছে। হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়া। আমি তখন আকাশকে জিজ্ঞাসা করলাম, কী রে আকাশ, আজ তোর কী হয়েছে? তুই এ রকম করছিস কেন? তখনই শুরু হলো ঝমঝম কান্না। আমরা যখন মন খারাপ করে কান্নাকাটি করি, তখন আমাদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য অনেকে থাকলেও আকাশের সান্ত্বনা দেওয়ার কেউ নেই। তাই তো যখন আমি বললাম, কী রে আকাশ! তুই কাঁদছিস কেন? আমার কথা শুনে আকাশ তার চোখের জল ঠেকাতে পারল না। সারা দিন সে ঝমঝম করে কাঁদতে লাগল।

যেদিন আকাশের মন খারাপ থাকে, সেদিন সবারই মন খারাপ থাকে। আকাশ যখন হাসে, তখন চারদিক মুক্তার মতো ঝলমল করে। তখন সবার মনও ভালো থাকে। জ্যৈষ্ঠ মাসের গ্রীষ্মের ছুটিতে সবাই আম-কাঁঠাল খেতে মামাবাড়ি যায়। আর তখন গরমও পড়ে প্রচণ্ড। এই গরম মানুষকে অতিষ্ঠ করে ফেলে। মানুষ সূর্যের ওপর অভিমান করে। তারপর সূর্য ও আকাশের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি হয়। এ জন্য দুজন দুজনের ওপর অভিমান করে। তখন সূর্য আকাশের সঙ্গে কথা বলে না, গল্প করে না। সূর্যের এই ব্যবহারে আকাশের মুখ কালো মেঘের মতো হয়ে যেত। আকাশ এই কথা ভাবে, তখন তার মন খুব খারাপ হয়ে যায়। সে কান্না শুরু করে। এই কান্না চলে আষাঢ়-শ্রাবণ পর্যন্ত। আকাশের এখন এত মন খারাপ থাকে যে কিছুক্ষণ পর পর কাঁদতে কাঁদতে এই দুই মাস পার করে। আর সূর্য আকাশের কান্না সহ্য করতে না পেরে আকাশের সঙ্গে কথা বলে। আকাশ তাকে নানা প্রশ্ন করে। কেন সে আকাশের সঙ্গে এই দুই মাস কথা বলেনি। কিন্তু আকাশ তার প্রশ্নের উত্তর না পাওয়ায় আবার দুজনের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি হয়। সূর্য তখন অভিমান করে চলে যায় অনেক দূরে। তখন কষ্টে, দুঃখে আকাশের জ্বর আসে। আকাশের জ্বর মানে পুরো পরিবেশটা ঠান্ডায় কনকন করে। যারা গ্রামে থাকে, তারাই বোঝে আকাশের জ্বর মানে কী!

আকাশের তখন এত জ্বর থাকে, সে সূর্যকে ডাকে, ‘সূর্য, তুমি কোথায়? ফিরে এসো। তোমার সঙ্গে আর কখনো ঝগড়া করব না। তোমার জন্য আমি কষ্ট পাচ্ছি। আর আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে প্রাণিকুল।’ সূর্য যে বড় অভিমান করে আছে আকাশের ওপর। সূর্য আকাশের ওপর এত রেগে থাকা সত্ত্বেও আকাশের প্রতি ভালোবাসার কারণে সে আর তার থেকে দূরে থাকতে পারল না। তারপর পৌষ-মাঘ পার করে ফিরে আসে সূর্য তার ভাগনে আকাশের কাছে। আর আকাশ তার সুয্যিমামাকে দেখে খুব খুশি হয়।