শরৎ মাহমুদের মানিব্যাগ

অলংকরণ: আপন জোয়ার্দার

সূর্য প্রায় অস্ত যাবে যাবে ভাব। বাজার থেকে সোজা চলে এলাম হোটেলে। হোটেলের নাম আল-আরাফাহ হোটেল। হোটেল বলতে দোতলা একটা বাড়ি। এই রকম একটা গ্রামে এসে যে হোটেল পাব, ভাবতেই পারিনি। হোটেলটার ঠিক পেছন দিয়ে বয়ে গেছে নদী। আমার রুমে গিয়ে সোজা শুয়ে পড়লাম খাটে। ঘুমটা ভাঙল দরজার খটখটানি শুনে। দারোয়ান সালাম সাহেব খাবার নিয়ে এসেছে। খাবার খেয়ে বই পড়ার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম কিছুক্ষণ। তারপর ঘুমিয়ে পড়লাম আবার। ঘুম ভাঙতেই ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর বেরিয়ে গেলাম। আজকে অনেক কাজ। পরশুই আমার চলে যেতে হবে। প্রথমেই চলে গেলাম একটি চায়ের দোকানে। দোকানির কাছে জিজ্ঞেস করলাম মাঝির কথা। অনেক দিন ধরে নৌকায় চড়া হয় না। তাই এবার এই গ্রামে এসে সেই সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। যাওয়ার সময় তাই নৌপথে যাব বলেই ঠিক করলাম, কিন্তু সব মাঝির মুখে একই কথা। ওই নদীতে নৌকা ভাসাবে না তারা। নদীতে নাকি অভি খাঁ নামের এক জমিদারের আত্মা আছে। স্থানীয় ব্যক্তিদের মতে, অনেক বছর আগে এখানে বাস করতেন অত্যাচারী জমিদার অভি খাঁ। গ্রামের শেষ প্রান্তে ছিল তাঁর বাড়ি। তিনি নিজ উদ্যোগে শুরু করলেন একটি খালখননের কাজ। কাজ প্রায় শেষ, এমন সময় অভি খাঁ খননকৃত খালের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় কে বা কারা নদীর খাল কেটে দেয়, ফলে রাজা সেই পানিতে ডুবে মারা যান। স্থানীয় ব্যক্তিদের মতে, এখন সেই নদীতে অভি খাঁর আত্মা ঘোরাফেরা করে। তবে এসব কাহিনি আমার কাছে গালগল্প বলেই মনে হলো। চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে হাঁটা শুরু করলাম গ্রামের শেষ প্রান্তের দিকে। গ্রামের শেষ প্রান্তে পৌঁছাতেই দেখি, সেখানে একটি ভাঙাচোরা বাড়ি। কেউ না বললেও বুঝতে পারলাম, এটাই সেই অভি খাঁর বাড়ি। বাজারে আসতেই একজনের সঙ্গে দেখা। আমাকে সে ওই নদী পার করে দিতে পারবে।

অনেক সকালেই বের হলাম আজ। এই গ্রামে আজ আমার শেষ দিন। নাশতাটা সূর্য হোটেল থেকে সেরেই রওনা হলাম সেই ভাঙা বাড়িটার দিকে। মাঝি আমাকে সেখানেই যেতে বলেছিল। গিয়ে দেখি, লোকটা নৌকা নিয়ে হাজির। কোনো কথা না বলেই উঠে পড়লাম নৌকায়। নৌকা চালু করল মাঝি। মাঝনদীতে এসে নৌকার ভাড়া বের করতে গিয়ে দেখি আমার মানিব্যাগ নেই। মনে পড়ল আমি মানিব্যাগটা সূর্য হোটেলে ফেলে এসেছি। মাঝিকে নৌকা ঘোরাতে বলব, এমন সময় দেখি আমার পেছনে নৌকায় আমি ছাড়া আর কেউ নেই। ঠিক এমন সময় একটা কালো পর্দার মতো কিছু আমাকে ধাক্কা দিয়ে গেল। চোখ দুটি নিজের অজান্তেই বন্ধ হয়ে এল। চোখ খুলতেই দেখি আমি আমার হলের খাটে শুয়ে আছি। যাক বাবা, বাঁচা গেল এটা তাহলে একটা স্বপ্ন ছিল। তখনই আমার ফোনে একটা কল এল। কলটা ধরতেই ওই দিক থেকে একজন বলে উঠল।

-আপনি কি শরৎ মাহমুদ?

-জি, আমি শরৎ মাহমুদ।

-আমি সূর্য হোটেল থেকে বলছি, এখানে আপনার মানিব্যাগ পাওয়া গেছে।

আমার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল।

ওদিক থেকে সে ক্রমাগত বলে যাচ্ছে, ‘হ্যালো। হ্যালো। হ্যালো।’