সিঙ্গাপুরের লোকগল্প

দুই বোনের দ্বীপ

অনেক দিন আগে এক বিধবার দুই কন্যা ছিল। তাদের নাম মিনা ও লিনা। দুই বোনে ছিল খুব মাখামাখি। একজনকে ছাড়া আরেকজন থাকতেই পারত না। তাদেরই মতো দুই সহোদর ভাইকে তারা বিয়ে করার কথা চিন্তা করল, যাতে করে দুই বোন বাকিটা জীবন একসঙ্গেই থেকে যেতে পারে। এ খবর শুনে দলে দলে ভাইরা এসে ভিড় করতে শুরু করল মিনা-লিনার বাড়িতে। কিন্তু কাউকেই তাদের পছন্দ হলো না! এরই মধ্যে একদিন তাদের মা মারা গেল। মায়ের মৃত্যুর পর দুই বোন তাদের দূরসম্পর্কের এক মামার কাছে আশ্রয় নিল।

একদিন জল আনতে গিয়ে লিনার একদল নাবিকের সঙ্গে দেখা হলো। তাদের নেতা লিনার রূপসৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল আর সঙ্গে সঙ্গেই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসল। ভয়ে লিনা একদৌড়ে বাড়িতে চলে এল। নাবিকদের সরদারও কম যায় না। সারা গ্রাম তন্ন তন্ন করে অবশেষে লিনাকে খুঁজে বের করল। লিনার মামার কাছেও দিল তার ভাগনিকে বিয়ে করার প্রস্তাব। কিন্তু লিনার মামাও অমন ডাকু প্রকৃতির নাবিকের সঙ্গে ভাগনিকে বিয়ে দিতে রাজি হলো না। নাবিক লিনাকে বিয়ে করেই ছাড়বে। তাই সে কোমর থেকে ধারালো ছুরি বের করে তাদের ভয় দেখিয়ে সেদিনের মতো চলে গেল। আর বলে গেল, পরদিন এসে তারা জোর করেই উঠিয়ে নিয়ে যাবে লিনাকে।

সেই রাতে দুই বোন পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ল। যখন সকাল হয়ে গেল, নাবিকের দল লিনাকে নিয়ে যেতে এল। কিন্তু দুই বোন একে অপরকে আঁকড়ে ধরে ছিল, কিছুতেই তাদের আলাদা করা যাচ্ছিল না। অবশেষে নাবিকের সরদার মিনাকে মাটিতে ছুড়ে ফেলে তার বোন লিনাকে কাঁধে তুলে নিয়ে চলল তাদের জাহাজের দিকে।

১ / ৮

জাহাজে তুলে লিনাকে নিয়ে যাচ্ছে। বোনকে উদ্ধারের জন্য মিনা জলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। কিন্তু মস্ত বড় এক ঢেউয়ে সে মুহূর্তের মধ্যেই ভেসে গেল অনেক দূরে। লিনাও জলদস্যুদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ঝাঁপ দিল জলে। এমন সময় প্রচণ্ড ঝড় শুরু হলো। সেই ঝড় পরদিন পর্যন্ত থাকল। যখন ঝড় থামল, গ্রামবাসী দেখল যে দুই বোন দুটো দ্বীপ হয়ে সাগরে ভেসে আছে। সেই দ্বীপ দুটো এখনো সাগরের বুকে মাথা তুলে আছে।

কচ্ছপ–দ্বীপ

অনেক দিন আগের কথা। অন্য সব দিনের মতো সেদিনও একদল জেলে সাগরে গেল মাছ ধরতে। ছোট ছোট ঢেউয়ের তালে তালে তাদের নৌকা চলল মাঝসাগরে। কী সুন্দর রোদ খেলে যাচ্ছে চারদিকে! আর মৃদু বাতাস! জেলেরা একটা জায়গায় এসে স্থির হলো। মাছ ধরার নৌকা থেকে একে একে জাল ফেলল। হঠাৎ আকাশ কালো হয়ে এল। দেখতে না দেখতেই শুরু হয়ে গেল প্রচণ্ড ঝড়। সাগরের জল ফুলেফেঁপে উঠল। শান্ত সাগর হয়ে উঠল ভীষণ উতলা। চারদিকে উথালপাতাল ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকল। ডুবে গেল জেলেদের নৌকা।

অসহায় জেলেরা দিশাহারার মতো এদিক–সেদিক সাঁতার কাটতে শুরু করল, কিন্তু কোনো কূলের দেখা পেল না। প্রচণ্ড শব্দে তাদের ওপর আছড়ে পড়ল ঢেউ। এত দিন ধরে তারা সাগরে মাছ ধরে, কিন্তু কোনো দিন এমন প্রলয়ংকর ঝড়ের মুখে পড়েনি। জেলেরা তাদের জীবনের আশা একেবারেই ছেড়ে দিল। এমন সময় হঠাৎ বিশাল আকারের একটা কচ্ছপ পানির ভেতর থেকে ভেসে উঠল এবং মুহূর্তের মধ্যেই একটা দ্বীপে পরিণত হলো। নৌকা ডুবে মরতে বসা মানুষেরা আশ্রয় নিল সেই কচ্ছপের পিঠে। তারপর ঝড় থেমে গেলে অন্য জেলের নৌকায় চড়ে তারা ঘরে ফিরে এল।

সেদিনের সেই ঘটনার পর থেকে নতুন জীবন পাওয়া জেলেরা ওই দ্বীপকে তাদের পবিত্র ভূমি মনে করে থাকে। তাই প্রতিবছর তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য কচ্ছপ–দ্বীপে এসে জড়ো হয়। এ যেন এক তীর্থস্থান। এখানে এলে জেলেদের মনে বয়ে যায় এক নিবিড় প্রশান্তি। এত এত বছর পর আজও সেই বন্ধু কচ্ছপ সাগরের জলে মাথা তুলে দ্বীপ হয়ে জেগে আছে।

আরও পড়ুন