ওয়ার্মহোল

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

দেশের নামকরা গোয়েন্দা হিসেবে কেসটা জুতসই নয়। একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু সরকার আত্মহত্যা মানতে নারাজ। তাই শেষ সন্দেহটুকু মুছে ফেলার জন্য এই তদন্ত। সরকারি নির্দেশ, তাই বাধ্য হয়েই মুহতাসিম হোসেন তদন্তে নেমেছেন।

ড. জামিল কোলাহল ভালোবাসতেন না। তাই ল্যাব বানিয়েছেন শহরের একদম বাইরে। চারদিকে দেবদারুর ছায়াঘেরা ল্যাবটা তার রুচির পরিচয় দিচ্ছে। তিনজন সহকারীসহ তদন্তে নামলেন মুহতাসিম হোসেন। কিন্তু প্রথম দিনের তদন্তে খুনের কোনো প্রমাণ পাওয়া গেল না। সব মোটিভ আত্মহত্যাকেই নির্দেশ করে।

তদন্ত শেষে বাসায় এসে পত্রিকাটা হাতে নিতেই প্রথম পাতায় একটা খবরে চোখ আটকে গেল মুহতাসিম হোসেনের। এক দিনে শতাধিক লোক হাসপাতালে ভর্তি! সবাই রংপুর শহরের বাইরের। আরও আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, সবাই ড. জামিলের ল্যাবের আশপাশের মানুষ। একজন গোয়েন্দা হিসেবে পুরো ঘটনাটাকে অন্যভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করলেন মুহতাসিম। কিন্তু কোনো কূলকিনারা করতে পারলেন না।

পরদিন ল্যাবে গিয়ে দেখলেন তাঁর তিনজন সহকর্মীর দুজন নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল তারাও হাসপাতালে। মুহতাসিম হাসপাতালে গেলেন খোঁজ নিতে। শুনলেন অসুস্থ সবাই তেজস্ক্রিয়তার শিকার হয়েছে। কিন্তু রেডিয়েশনের উৎসটা কোথায়?

ড. জামিলের ল্যাব তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোনো রেডিয়েশনের উৎস পাওয়া গেল না।

পরদিন মুহতাসিম ল্যাবে এলেও তাঁর শরীর মোটেই ভালো ছিল না। কাজ করতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। দুই দিনে কয়েক হাজার মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মুহতাসিম নিশ্চিত যে রেডিয়েশনের উৎসটা ড. জামিলের বাসাতেই কোথাও। দেরি করলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তিনি সারা বাড়ি খোঁজার নির্দেশ দিলেন। নিজেও সঙ্গে যাচ্ছিলেন, কিন্তু দরজা পেরোতে না পেরোতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন।

রেডিয়েশনের উৎসটা পাওয়া গিয়েছিল ড. জামিলের পরিত্যক্ত গ্যারেজে। ওয়ার্মহোল নিয়ে গবেষণা করছিলেন ড. জামিল। সফলভাবে ওয়ার্মহোল তৈরির থিওরিও আবিষ্কার করেন। গোপনে পরীক্ষা করতে গিয়ে গন্ডগোল হয়ে যায় হিসাবে। ফলে ওয়ার্মহোল বন্ধ করতে ব্যর্থ হন তিনি। হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করেন ড. জামিল। কিন্তু তিনি আত্মহত্যা দিয়ে মুক্তি পেলেও সারা পৃথিবীর মানুষ তখন কঠিন বিপদে। কারণ, ওয়ার্মহোলটি এমন একটা ইউনিভার্সের মুখ খুলে দিয়েছে, যা ছিল রেডিয়েশনে ভরপুর ভয়ংকর এক জগৎ। ফলে পৃথিবীতে ওই ওয়ার্মহোল দিয়ে রেডিয়েশন প্রবেশ করতে থাকে। মাসখানেকের মধ্যেই কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। পৃথিবীতে নেমে আসে মৃত্যুর বিভীষিকা। পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষ অসহায়ের মতো মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকে।