একটি রহস্য

অলংকরণ: আপন জোয়ার্দার

সেবার গরমের ছুটিতে ঠিক করলাম, সবাই মিলে পাহাড়ে বেড়াতে যাব। আমরা যেখানে থাকি, সেখান থেকে বাসে করেই জায়গাটায় যাওয়া যায়। কিন্তু আরেকটু বেশি মজা পাওয়ার জন্য বাবা ঠিক করলেন, নিজেই গাড়ি চালিয়ে যাবেন। সে অনুযায়ী সব গোছগাছ হলো। আমরা যাওয়ার জন্য তৈরি হলাম। যাওয়ার আগে বাবা বললেন, ‘আমি এবার একটা বাইপাস রাস্তার খোঁজ পেয়েছি, ওখান দিয়ে যেতে সময় কম লাগে।’ মা বললেন, ‘কোনো সমস্যা হবে না তো?’ বাবা বললেন, ‘আমি যত দূর জেনেছি, রাস্তাটা একটু নির্জন। তা ছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই।’

এরপর গোছগাছ শেষে আমরা পরের দিন রওনা দিলাম পাহাড়ের উদ্দেশে। আমি দেখলাম, রাস্তার চারপাশে অনেক ঘন জঙ্গল। আর চারপাশ কেমন যেন একটু বেশি নির্জন! আবহাওয়াটা কেমন গুমোট হয়ে আছে। সকালবেলাও তাই একটা ভুতুড়ে ভাব। আমার একটু একটু ভয় লাগতে শুরু করল। ভয় কাটানোর জন্য জানালার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। অবশ্য বড় বড় গাছ ছাড়া আর কিছুই নজরে পড়ল না। এভাবে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই একটা সময় ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি, রাস্তা এখনো শেষ হয়নি। আমার কেমন জানি একটু অদ্ভুত লাগল। বারবার মনে হতে লাগল, আমরা ঘুরে ঘুরে একই জায়গায় বারবার আসছি। আমি তাই বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আর কতক্ষণ, বাবা?’ বাবা বললেন, ‘আমি যত দূর জানি, এতক্ষণ তো লাগার কথা নয়।’ বাবার কথা শুনে আমার ভয়টা আরও বেড়ে গেল। আমরা কি কোনো অদ্ভুত জায়গায় আটকে পড়লাম? আর কি বের হতে পারব না? ইত্যাদি প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খেতে লাগল মাথায়। মা বললেন, ‘এই এলাকার কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখো না, এত সময় লাগার কথা না যেতে।’ তখন আমরা দূর থেকে খেয়াল করলাম, একজন নারী দাঁড়িয়ে আছেন। আরেকটু এগিয়ে, তাঁর কাছাকাছি গিয়ে গাড়ি থামালাম। জানালা দিয়ে লক্ষ করলাম, তাঁর চেহারায় অনুভূতির কোনো চিহ্ন নেই। তিনি কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই বললেন, ‘এই রাস্তা বেশি ভালো না, পরেরবার থেকে না আসার চেষ্টা করবেন,’ বলে যে রাস্তা দিয়ে আমরা এসেছিলাম, সেই রাস্তার দিকেই হাত দিয়ে ইশারা করে ফিরে যেতে বললেন। তারপর ঠিক যেমন হঠাৎ এসেছিলেন, তেমনি হঠাৎ করেই চলে গেলেন।

বাবা কেন যেন আর কিছু না বলেই গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে যেতে লাগলেন। কিন্তু আমার মনে কিছু প্রশ্ন ঘুরতে লাগল। ওই নারী কে? এই রাস্তা খারাপ কেন? এই রাস্তার পেছনে রহস্যটা কী? ওনার ওই অদ্ভুত মুখভঙ্গি আর ব্যবহারের পেছনেই–বা কারণ কী?

সেদিন আমাদের কারোরই আর কিছু হয়নি। একসময় মা-বাবাও ব্যাপারটা ভুলে গেলেন। কিন্তু মাঝেমধ্যেই আমি ওই নারীকে স্বপ্নে দেখতে পাই। ইচ্ছা করে প্রশ্নগুলো করতে, ওই রাস্তায় কী ঘটেছিল। কিন্তু আমার মনে হয় না তিনি আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দেবেন।