শব্দ

অলংকরণ: আরাফাত করিম

লেকের ধারে ক্যাম্প করছিল একটি পরিবার। পাশেই ছোট্ট একটি বন। দুপুরবেলায় বনের মধ্যে ঘুরতে গিয়েছিল ওরা, হুট করেই আকাশে একগাদা মেঘ জমে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হলো ঝড়। তীব্র ঝড় থেকে বাঁচতে বেশ বড় একটি গাছের নিচে আশ্রয় নিতে হলো ওদের।

অনেকক্ষণ পর ঝড় থামল। ক্যাম্পে ফেরার জন্য হাঁটা দিল তারা। কিন্তু ততক্ষণে রাত হয়ে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও রাস্তা খুঁজে পাওয়া গেল না।

বনের মধ্যেই আগুন জ্বালিয়ে গোল হয়ে বসল ওরা। সকাল হওয়ার আগে ক্যাম্পে ফেরার কোনো উপায় নেই, ওদের খোঁজে যদি কেউ আসেও, তারা সকালের আগে বনে ঢুকবে না। কারণ, এই বনের কিছু বদনাম রয়েছে।

চুপচাপ বসে রইল ওরা। সবার চেহারায় উৎকণ্ঠা। ঠিক তখনই অদ্ভুত এক গুঞ্জন ভেসে এল গাছগুলোর আড়াল থেকে। যেন কোনো মানুষ ফিসফিস করে কথা বলছে।

ভয় পেয়ে গেল ছেলে–মেয়ে দুটো।

‘কে? কে করে এমন শব্দ?’ চেঁচিয়ে উঠলেন বাচ্চাদের বাবা।

উত্তর দিল না কেউ। কিছুক্ষণ পর আবার সেই অদ্ভুত ফিসফিসানি!

আবার চেঁচিয়ে উঠলেন বাবা, কিন্তু কোনো উত্তর নেই।

‘হয়তো এমন কেউ, যে কথা বলতে পারে না। দাঁড়াও, আমি দেখছি,’ উঠে দাঁড়ালেন বাচ্চাদের মা, ‘দেখো, তুমি কে? আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চাও না? আচ্ছা শোনো, আমরা কিছু প্রশ্ন করি? তোমার উত্তর যদি “হ্যাঁ” হয়, তবে একবার শব্দ করবে আর যদি না হয়, তবে “দুবার”। ঠিক আছে?’

কিছুক্ষণ সব চুপচাপ।

‘তুমি কি আমাদের কথা বোঝো?’ বলে উঠলেন বাবা।

ঠক!

অবাক হয়ে গেল ওরা সবাই।

অলংকরণ: আরাফাত করিম

‘তুমি কি আমাদের খুঁজতে এসেছ?’ বলে উঠল তাদের ছেলে।

ঠক ঠক!

‘তুমিও কি আমাদের মতো হারিয়ে গেছ?’ ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলেন মা।

ঠক ঠক!

‘তুমি কি এই বনেই থাকো?’

ঠক!

‘আচ্ছা, তুমি কি পুরুষ?’

ঠক ঠক!

‘তাহলে? তুমি নারী?’

ঠক ঠক!

‘আরে! এ কেমন কথা? তুমি মানুষ তো?’ রেগে উঠলেন বাবা।

ঠক ঠক!

চমকে উঠল সবাই। গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়াল সবাই।

‘তুমি কি জীবিত?’ হুট করেই বেফাঁস প্রশ্নটা করে বসল তাদের মেয়ে।

ঠক ঠক!

তীব্র আতঙ্ক ঘিরে ধরল সবাইকে।

‘তুমি কি একা?’ কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললেন মা।

ঠক ঠক!

‘কতজন আছ তোমরা? সবাই শব্দ করো…’ মাটিতে বসে পড়লেন বাবা, কেমন যেন পাগলামি পেয়ে বসেছে তাকে।

‘ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক…’

চলতেই থাকল সেই শব্দ!