সায়েন্স ফিকশন ‘চড়’

অলংকরণ: রাজীব

বি ব্লকের শুরুতে নেমে গেলাম। এই ব্লকে মোট ১০টা রাস্তার দুই পাশে ৮০টা বাড়ি। আমি থাকি ৮০ নম্বরে। তারপরও নেমে গেলাম, অনেক দিন বিকেলটা দেখা হয়নি। আর গত সাত দিন তো সূর্যেরও দেখা মেলেনি। রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞান পরিষদের (রাবিপ) বার্ষিক বুটক্যাম্পটা ছিল নদীর ধারে একটা রিসোর্টে। কিন্তু প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রিসোর্টের হলরুমে আমাদের সময় কেটে গেছে। নিয়ম অনুযায়ী এই সাত দিন আমাদের সঙ্গে কোনো পারসোনাল ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিল না। আমরা যেন ইচ্ছেমতো যোগাযোগ করতে না পারি, সে জন্যই এ ব্যবস্থা। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগটা ব্যবস্থাপকেরাই করে দিতেন।

ভালো কথা। আমার পরিচয়টা দিয়ে নিই। আমি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতাম। রোবটিকস আর হিউম্যানিটিজ আমার সাবজেক্ট। দুই বছর আগে আমি দেশের বিজ্ঞানীদের সর্বোচ্চ সংস্থা রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞান পরিষদের সদস্য হয়েছি। গত বছর হয়েছি এই সংস্থার নির্বাহী কমিটির সদস্য। প্রতিবছর সাত দিনের একটা ক্যাম্প হয়। পরের দিনগুলোয় আমরা কী করব, সেটা ঠিক করা হয় ক্যাম্প থেকে। সেখান থেকেই ফিরছি দুপুরে খেয়ে। বাসে করে আমাদের নামিয়ে দিয়েছে কলোনির গেটে। সেখানে আগে থেকে ড্রাইভারলেস কমিউটার ঠিক করেছে রাবিপ। কিন্তু ওই রোবট গাড়ি আমাকে কিছুতেই বি ব্লকের সামনে নামাতে রাজি হচ্ছিল না। শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে রোবটকে বোকা বানানোর বুদ্ধি যা পড়াতাম, সেটা প্রয়োগ করেই নামতে পেরেছি।

হাঁটতে হাঁটতে খেয়াল করলাম, অনেক বাসার সামনের লনের পরিবর্তন হয়ে গেছে। মনে হয়, বাসিন্দারাও বদলে গেছে। সরকারি এই কলোনিতে বেশির ভাগই সরকারি কর্মকর্তা। রাবিপের সদস্য হওয়ার পর আমি এখনকার বাড়িতে এসেছি। আমি আর আমার মেয়ে থাকি। আমার স্ত্রী সরকারি রাজস্ব আহরণের বড় কর্তা। অন্য একটি শহরের দায়িত্বে আছে সে। শুধু সপ্তাহান্তে আমাদের সঙ্গে সময় কাটাতে আসে। আমি সাত দিন থাকব না বলে আমার মেয়ে বিদুষী চলে গেছে তার মায়ের কাছে।

হাঁটতে হাঁটতে ফাঁকা বাড়ির সামনে এসে পড়লাম। দোতলা বাংলো বাড়ি। দরজার সামনে হাজির হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টের পেলাম, একটা নীল আলো এসে পড়েছে ওপর থেকে। তখনই মনে হলো, আরে, বাড়ি তো ফাঁকা নয়। এই বাড়ির দায়িত্ব নাউম বেয়াইয়ের হাতে।

নাউম বেয়াই একটি ষষ্ঠ মাত্রার রোবট। তবে এটিকে দেখা যায় না। বাসার সব কম্পিউটার ও আইওটি সিস্টেম নাউম বেয়াই নিয়ন্ত্রণ করে। বাসায় তিনটি হিউম্যানয়েড রোবটও আছে। সেগুলোর নিয়ন্ত্রণও তার হাতে। আর নাউম বেয়াই কেন্দ্রীয় কম্পিউটার সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত। কেবল কিছু মানুষ ষষ্ঠ মাত্রার রোবট পায়, যার মধ্যে রাবিপের সদস্যরা আছে।

ষষ্ঠ মাত্রার রোবটকে নিজেই একটা নাম দেওয়া যায়। আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন রুশ দেশের উপকথা নামে একটা বই পড়েছি। সেখানে একটা গল্প ছিল ‘অজানি দেশের না জানি কী’। সেই গল্পে এ রকম একটা কিছু ছিল যে সবকিছু করতে পারত, কথাও বলতে পারত, কিন্তু তাকে দেখা যেত না। তার নাম ছিল নাউম বেয়াই। ষষ্ঠ মাত্রার রোবট বরাদ্দ পাওয়ার পরপরই আমি রোবটটির নাম দিয়েছি নাউম বেয়াই।

বাসায় ঢোকার সময় একটা নীল লেজার আমার শরীর স্ক্যান করে দেখল, কোনো বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া সঙ্গে নিয়ে এসেছি কি না। নীল আলোটা নিভে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে গেল। ভেতরে ঢুকতেই নাউম বেয়াইয়ের কণ্ঠ শুনতে পেলাম, ‘বাড়িতে তোমাকে স্বাগত, মুনির। আশা করি, সপ্তাহটি ভালো কেটেছে।’

—ধন্যবাদ নাউম বেয়াই। আশা করি তোমাদের কোনো সমস্যা হয়নি।

বলতে বলতে খেয়াল করলাম, এইচআর৩ এম রোবটটি আমার জন্য শরবত নিয়ে এসেছে। চুমুক দিয়ে বুঝলাম মাল্টার শরবত। নাউম বেয়াই জানে আমার পছন্দ।

‘তুমি কি ওপরে যেত চাও, নাকি এক সপ্তাহের জমানো বার্তাগুলো দেখতে চাও?’ জানতে চাইল নাউম।

আগে ফ্রেশ হয়ে নিই। সাপ্তাহিক ক্যাম্পের পর এক সপ্তাহের ছুটি পাওয়া যায। ভেবেছি বিদুষীকে আনতে আমি ওর মায়ের শহরে যাব। তবে সেগুলো কিছু না বলে সিঁড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।

দুই

রাতে খাওয়ার পর স্টাডিতে ঢুকে নাউমকে জিজ্ঞেস করলাম, জরুরি কোনো মেসেজ আছে কি না, যা আমাকে সে গত কদিন জানায়নি।

—আপনার রুমমেট সেলিম সাহেব দুই দিন যোগাযোগ করেছেন। তিনি কিছু বলতে চান। একটা রেকর্ডেড মেসেজ পাঠিয়ে রেখেছেন। বাকিগুলো সাধারণ।

—দেখাও তাহলে।

টেবিলের ওপরের দেয়ালটা বদলে একটা স্ক্রিন হয়ে গেল। পর্দায় ফুটে উঠল আমার বন্ধু সেলিমের মুখ।

‘রুমমেট, আমরা একটা খুব বড় বিপদে পড়েছি। আমাদের বোঝা দরকার, আমাদের মেয়র কি রোবট না মানুষ।’ এটুকু শুনেই অবাক হয়ে গেলাম। তারপর সেলিমের কথা শুনে যা বোঝার বুঝলাম।

সেলিম একটি অক্সিজেন উৎপাদনকারী সংস্থার বড় কর্মকর্তা। পদ্মার পারে গড়ে ওঠা একটা নতুন শহরে তাদের কারখানা। ২০২২ সালে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই আধুনিক শহর গড়ে তোলা হয়। কয়েক বছরের মধ্যে রমরমা একটি শিল্পনগরীতে পরিণত হয় এটি। কিন্তু মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে শহরের লোকজন এবং শিল্পকারখানার বেপরোয়া আচরণে সব অর্জন ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়। শিল্পের বর্জ্য বিষাক্ত করে ফেলে পদ্মার শাখানদীকে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সালফারের কারণে সেখানে অ্যাসিড-বৃষ্টি হতে শুরু করে। বাতাসে সিসার মাত্রা সর্বকালের সব মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। শহরের মেয়রের দুর্নীতির কারণে দূষণের জন্য দায়ী শিল্পকারখানার বিরুদ্ধে কিছু করা যায়নি। শহরটা পরিত্যক্তমতো হয়ে যায়। জীবন বাঁচাতে শহর ছেড়ে চলে যায় লোকজন। আমি জানতাম, সেলিমও আর ওই শহরে থাকে না।

কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে, সে ফিরেছে এবং গত দুই বছরে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে শহরের। সেলিম কথা শেষ করেছে আমাকে তাদের শহর জাজিরায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে। শহরের কিছু লোক আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়, মেয়র সম্পর্কে কথা বলতে চায়, তবে সেটা সামনাসামনি।

নাউম বেয়াইয়ের কাছে জানতে চাইলাম, ঘটনাটা কী। যা জানলাম, সেটা কল্পনাকেও হার মানায়। কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নাউম আমাকে যা জানাল, তা হলো, পরিত্যক্ত হওয়ার আগে শহর ছেড়ে চলে যান শহরের মেয়র। তারপর সেটি পরিণত হয় সন্ত্রাসীদের আখড়ায়। দুই বছর আগে কেন্দ্রীয় সরকার জমির উদ্দিন নামে একজনকে আপৎকালীন মেয়র হিসেবে পাঠায় সেই শহরে। জমির উদ্দিন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে শহরের অবস্থা ঘুরতে শুরু করে। শিল্পকারখানাগুলোর বিষাক্ত বর্জ্যের মাত্রা নির্ধারণ করে দেন মেয়র। তারপর শুরু করেন পুলিশিং। শহরবাসী জানিয়েছে, রাতবিরেতে বিভিন্ন স্থানে দেখা যেতে শুরু করে মেয়রকে। নিজেই উদ্যোগী হয়ে সন্ত্রাসীদের পাকড়াও করতে পুলিশকে সাহায্য করা, দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যদের বিতাড়িত করা, শিল্প পরিদর্শকদের মধ্যে যারা সুবিধা পেয়ে সুযোগ দিত, তাদের চাকুরিচ্যুত করা ও শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে শুরু করেন মেয়র। তারপরই জাদুর মতো শহর ঠিক হতে শুরু করে। শেষ গত সপ্তাহে শহরের বায়ুদূষণের মাত্রা একেবারে নিম্ন মাত্রায় নেমে এসেছে।

—মেয়র জমিরউদ্দিন তো তাহলে সেখানে বিপ্লব করে ফেলেছেন। ওনার ব্যাপারে আলাপ করবে কেন?

‘সেটা আমিও জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেলিম সাহেব আমাকে বলেননি।’ উত্তর দিল নাউম বেয়াই।

জাজিরায় সকালে গিয়ে সন্ধ্যায় চলে আসতে পারব কি না, এটা ভাবতে গিয়ে মনে পড়ল, অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রাকিব উদ্দিন কয়েক দিন আগে তাকে একটা ফ্লাইং ড্রোন উপহার দিয়েছে। সেটা নিয়ে ৪০ মিনিটে জাজিরায় সেলিমের বাসার ছাদে চলে যাওয়া যাবে।

তিন

জাজিরা শহরে নেমে আমার মনে হলো, একটা বিশুদ্ধ বাতাসের শহরে এসে পড়েছি। একটা বহুতল ভবনে থাকে সেলিম। ছাদে একটা ড্রোনপ্যাড আছে। সেখানেই নাউম বেয়াই প্রোগ্রাম করে আমাকে নামিয়ে দিয়েছে। সেলিমের সঙ্গে শহর দেখতে বের হলাম।

ছোট্ট শাখানদীটির পানিও টলটলে। অথচ এর দুই পাশে বেশ কয়েকটি কারখানা। কোনো কারখানা এখন তাদের বর্জ্য নদীতে বা উন্মুক্ত স্থানে ফেলতে পারে না। সবাইকে রিসাইকেল করতে হয়। জানাল সেলিম।

আমরা হাঁটতে হাঁটতে কয়েকটা ব্লক পার হয়ে একটা বড় পার্কে এসে পড়লাম। সেখানে আমাদের সঙ্গে আরও কয়েকজন যুক্ত হলো। সেলিম পরিচয় করিয়ে দিল। সিটি করপোরেশনের মুখ্য রাজস্ব কর্মকর্তা, শহরের পুলিশপ্রধান (সাধারণ পোশাকে), দুই চিকিৎসক ও কলেজশিক্ষক। পার্ক পার হয়ে আমরা একটা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে ঢুকে পড়লাম। সেখানে একটি ঘরে গিয়ে দেখলাম অনেক লোক। নারীরাও আছে।

সেলিম আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল। আমার রোবটিকস আর আইওটির কথাটা মনে হয় জোর দিয়ে বলল। সঙ্গে বলল, আমি রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞান পরিষদের সদস্য। কয়েকজন আমাকে আগে থেকে চেনেন বললেন।

সেলিমই আলোচনা শুরু করল, ‘আমাদের মেয়র জমির উদ্দিন সাহেব শুরু থেকেই অনেক ভালো কাজ করেছেন। তাঁর কারণেই আসলে মৃত একটি শহরে প্রাণ এসেছে। সবই ভালো।’

পুলিশ সুপার বললেন, আসলে বেশি ভালো।

অবাক হলাম আমি।

একজন নারী দাঁড়ালেন, ‘আমি মেয়রের পিএস। স্যারকে আমি এক দিনও রাগ করতে দেখিনি। প্রথম প্রথম ভুল হলে ভয় পেতাম। কিন্তু এখন জানি, ভুল হলেও তিনি রেগে যান না কখনো। সব সময় দেখিয়ে দেন।’

‘সেটা তো ভালো। আমি শুনেছি, তিন মাস পরই আপনাদের মেয়র নির্বাচন। ওনাকেই আবার মেয়র বানান আপনারা,’ বললাম আমি।

‘সেটাই আমরা চাই। কিন্তু...’ এবার বললেন একজন বর্ষীয়ান লোক। শিক্ষক। পার্ক থেকে আমাদের সঙ্গে এসেছেন তিনি। ‘উনি প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা অফিসের কাজ করেন। এই দুই বছরে এক দিনও ছুটি নেননি। রাতবিরেতেও তাঁকে নানা জায়গায় দেখা যায়। কখনো ক্লান্ত হয়েছেন বলে শুনিনি।’

জমির উদ্দিনের ভিডিও দেখে এসেছি। কাজেই উনি যে স্মার্ট লোক, সেটা তো আমি জানি। তারপর বললাম, ‘আমি এমন সম্পাদকের সঙ্গে কাজ করেছি, যিনি দিনের পর দিন ২২ ঘণ্টা কাজ করেন। আপনাদের সমস্যা কী?’

সবাই সেলিমের দিকে তাকাল। ‘রুমমেট, আমাদের ধারণা, জমির উদ্দিন আসলে মানুষ নয়। ও আসলে একটা রোবট।’

মানে কী? এটা তো হতে পারে না। মেয়রের কাজ তো কোনো সাধারণ হিউম্যানয়েড রোবট করতে পারবে না। একমাত্র ষষ্ঠ মাত্রার কোনো রোবটের পক্ষেই এর কাছাকাছি কিছু করা সম্ভব।

‘ওনার পরিবার? ছেলেমেয়ে?’ জানতে চাইলাম।

‘না, কেউ নেই। স্থানীয় সরকারের নিয়োগ আদেশ আমরা যেদিন পাই, তার দুই দিন পর এসে তিনি জয়েন করেন,’ বললেন করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা। ‘তারপর আমরা জানি, উনি বিয়ে–থা করেননি। কাজেই ছেলেমেয়ে নেই। উনি কোনো কিছু ভুলে যান না। সব মনে রাখেন।’

‘ওনার আত্মীয়স্বজনও কেউ এর মধ্যে আসেনি। উনি সব সময় হাসেন,’ সবাই বলতে শুরু করল।

সেলিম সবাইকে থামিয়ে আমাকে বলতে বলল।

‘জমির উদ্দিন সাহেব তো মনে হচ্ছে এ শহরের জন্য ভালোই। কিন্তু আপনারা যেহেতু উনি রোবট কি না, তা যাচাই করতে চান, তাহলে আমি আপনাদের একটা বুদ্ধি দিতে পারি।’

আমার কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল।

‘রোবটিকসের প্রথম সূত্র বলে, কোনো রোবট কখনো কোনো মানুষকে মারতে পারবে না। তাহলে তার সিস্টেম হ্যাং করবে,’ বললাম আমি।

‘কিন্তু উনি তো রাগই করেন না। মারবেন ক্যামনে?’ কে যেন বলল।

‘কাজটা কঠিন। মানলাম আমি। তবে অসম্ভব নয়। ওনাকে কয়েক দিন ধরে উত্তিজেত করার চেষ্টা করবেন নানা জায়গায়। তারপর নিজেরা কিছু সমস্যা তৈরি করে ওনার কাছে যাবেন। ওনার অফিসে গিয়ে হইচই করবেন, হট্টগোল করবেন। দরকার হলে কেউ একজন তাঁকে ধাক্কা দেবেন। তাতেও যদি উনি রেগেমেগে একটা কিছু না করেন, তাহলে আপনারা নিশ্চিত হতে পারবেন যে উনি রোবট,’ বলে থামলাম।

সঙ্গে সঙ্গে রুমে উত্তেজনা দেখা দিল। মাথা ঝাঁকাতে দেখা গেল কয়েকজনকে।

সেলিমকে বললাম, ‘চলো। আমার তো ফিরতে হবে।’

চার

দুই সপ্তাহ পর।

সেলিম বা জাজিরার কোনো খবর নেওয়া হয়নি। বিকেলে পিডিএ ছাড়াই হাঁটতে বের হয়ে গেলাম। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে মনে হলো, কিছু একটা ঝামেলা আছে।

—কী ব্যাপ্যার নাউম?

—সেলিম সাহেব একটা ভিডিও পাঠিয়েছেন। তোমার সেটা দেখা দরকার।

—ঠিক আছে দেখাও।

ড্রইংরুমের দেয়ালটা সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রিন হয়ে উঠল। আমি দেখলাম, একটা ঘরে অনেক লোকজন। হইচই হচ্ছে। কথাবার্তা বোঝা যাচ্ছে না। সেলিমকে দেখলাম লোকজনকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। মেয়র জমির উদ্দিনকে মনে হলো ক্রুদ্ধ। নিজের চেয়ার ছেড়ে সামনে এসে কিছু একটা বলার চেষ্টা করামাত্রই একটা লোক দৌড়ে গিয়ে তাঁকে দিল এক ধাক্কা। টাল সামলাতে না পেরে মেয়র প্রায় পড়েই যাচ্ছেন। কোনোরকমে উঠে দাঁড়িয়ে ধাক্কা দেওয়া লোকটাকে মারলেন এক চড়। তাঁর ভরাট কণ্ঠস্বর শোনা গেল, ‘আমার অফিসে এসে আমাকে মারার চেষ্টা! সব কটাকে জেলে ঢোকাব।’ ঘুরে নিজের পিএসের দিকে তাকিয়ে কী যেন বলে সিটের পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলেন মেয়র। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেল রুমের চেহারা। একটা হর্ষধ্বনি শোনা গেল। সবাই আনন্দিত। একজনকে বলতে শোনা গেল, জয়, মেয়র জমির উদ্দিনের জয়।

ভিডিওটা শেষ হয়ে গেল।

যাক, সেলিমদের সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।

‘এটা দেখে তুমি কেন উত্তেজিত নাউম বেয়াই?’

‘তুমি কেন তোমার বন্ধুদের রোবটিকসের বাকি নিয়মগুলো বলোনি?’ নাউম বেয়াই কী কারণে যেন একটু রেগে আছে।

—সেটা কী?

—মানুষের জায়গায় রোবট হলে রোবটিকসের এক নম্বর সূত্র প্রযোজ্য না–ও হতে পারে!

[বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে]