স্কুল থেকে ফেরার সময় রুমু দেখে, ছোট্ট একটি বিড়ালছানা রাস্তার পাশে আস্তাকুঁড়ে পড়ে আছে। মিউমিউ করে ডাকছে। অশ্রু টলমল করছে ছানাটির চোখে। দেখে খুব মায়া হলো রুমুর।
একদিকে বিড়ালছানার মায়া, অন্যদিকে মায়ের ভয়। বাড়িতে নিয়ে গেলে নিশ্চয়ই মা খুব বকবেন। রুমু মনে মনে বলল, ‘বকুক না, বকা খাওয়ার অভ্যাস তো আমার আছেই। আজ সকালেই তো কত্ত বকাবকি করল আম্মু।’
সাতপাঁচ না ভেবে রুমু ছানাটিকে বাড়িতে নিয়ে আসে। রুমুর ছোট বোন রুহি। বিড়ালছানা দেখে তার যেন খুশির অন্ত নেই। গ্রামের বাড়িতে বিড়াল দেখেছিল, শহরে এর আগে কখনো বিড়াল দেখেনি সে।
রুহি বিড়ালছানার নাম রাখে মিতুন।
সুন্দর করে বিড়ালছানাকে গোসল করিয়ে ছাদে শুকাতে নিয়ে যায় রুমু। আম্মু দেখে ফেলেছেন এরই মধ্যে। কিন্তু কী যেন ব্যস্ততায় কিছু বলেননি তখন। দুপুরে খাওয়ার সময় আম্মু রুমুকে ভালোভাবে বলে দেন, ‘অনেক খেলাধুলা হয়েছে। সন্ধ্যার আগেই বিড়ালছানা যেখান থেকে নিয়ে এসেছ, সেখানে রেখে আসবা, বুঝেছ?’ রুমু আস্তে করে বলে, ‘আচ্ছা আম্মু, রেখে আসব।’
খাবার শেষ করে রুমু যেখান থেকে ছানাটি এনেছিল, সেখানে রেখে আসে। এদিকে রুহি কেঁদেকেটে শেষ। খাওয়াদাওয়া নেই। রাতেও খায়নি, সকালেও না। কোনো কথাই শুনবে না রুহি। তার একটাই কথা, ‘আমি মিতুনকে চাই, আমি মিতুনকে চাই।’ আম্মু অনেক বোঝালেন। কাজ হলো না। বিকেলবেলা আম্মু রুমুকে বললেন, ‘যাও, ছানাটিকে আবার নিয়ে আসো।’ রুমু দৌড়ে গিয়ে ছানাটিকে নিয়ে এসে আবার গোসল করিয়ে দেয়। রুহি তো খুশিতে আত্মহারা। রুহি বিড়ালছানাকে মিতুন মিতুন করে ডাকে আর ছানাটি মিউমিউ করে ডাকে। রুহি বলে, ‘এই, তুমি আমাকে মিউ বলে ডাকো কেন? আমার নাম তো মিউ না, আমার নাম রুহি, বুঝলে?’
রুহি মিতুনের সঙ্গে খেলছে। আম্মু দুটি প্লেটে খাবার নিয়ে আসেন। রুহি বলে, ‘আম্মু, আমি একা দুই প্লেট খেতে পারব?’ আম্মু মুচকি হেসে বললেন, ‘তুমি আস্ত একটা বোকা মেয়ে, তুমি এক প্লেট খাবে আর মিতুন এক প্লেট খাবে।’ রুহি বলল, ‘ও...বুঝেছি। ওরও তো অনেক খিদে পেয়েছে, তাই না? আম্মু, তোমাকে একটি কথা বলার ছিল কানে কানে।’ কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে রুহি ফিসফিস করে বলল, ‘থ্যাঙ্ক ইউ আম্মু, ম্যানি ম্যানি থ্যাঙ্কস।’
লেখক: শিক্ষার্থী, শেরউড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, শেরপুর, বগুড়া