লাশ–ভাসা নদী

অলংকরণ: আপন জোয়ার্দার

লেখালেখি করাটা আজকাল দারুণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে আমার। সেদিন রাতেও বৃষ্টির সময় একটু খেয়াল জাগল লেখার। পাশের ডায়েরিটা হাতে নিয়ে সবে কয়েকটা চরণ রচনা করতে যাব, আলো-আঁধারির এই স্তব্ধ ঘরে কিসের এক ছায়া চোখে পড়ল। মুহূর্তেই কেমন যেন মিলিয়ে গেল ছায়াটি। কৌতূহলবশত বিষয়টি জানার জন্য দৌড়ে বারান্দায় গেলাম। আমার ভবনের পেছনেই এক পরিত্যক্ত কবরস্থান। চেনা-অচেনা শতাধিক মানুষকে কবরস্থ করা হয়েছে এখানে। তবে এসব নিয়ে আমার তেমন ধারণা নেই বললেই চলে। কারণ, আমি গতকালমাত্র এই বাসায় এসেছি। অদূরে লক্ষ করে দেখলাম, এক বৃদ্ধা হাতে হারিকেন আর বাটিতে করে কী যেন নিয়ে কবরস্থানের দিকে যাচ্ছেন। আমি খুব আগ্রহসহকারে দেখতে থাকলাম। কবরস্থানে প্রবেশ করে ওই বৃদ্ধা একটা পুরোনো কবরের পাশের গাছটির ডাল কেটে বাটিতে রাখা জিনিসটুকু ঢেলে কী যেন মন্ত্র পড়তে লাগলেন। আর এদিকে এসব দেখে আমার হাত-পা এতটাই ঠান্ডা হতে লাগল যে মনে হলো, আমি নড়তে পারছি না ওই জায়গা থেকে। মুহূর্তেই গাছের ওই কাটা স্থান থেকে হাত বেরোতে লাগল। যদিও বৃদ্ধার কথা অস্পষ্টভাবে শুনতে পারছিলাম বারান্দা থেকে। তবে সেসব কথার অর্থ আমি বিন্দুমাত্র বুঝিনি। কী সব পুরোনো গ্রাম, নদীতে ভাসা লাশ, গ্রামের মানুষ হারিয়ে যাওয়ার কথা বলতে লাগলেন। এসব দেখে আমি এতটাই ভয় পেয়েছিলাম যে নিশ্চুপ হয়ে কেবল ওখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। বুঝতে পারছিলাম না কী করব। ঠিক তখনই সাদা একটা কী যেন আমার সামনে এসে হাজির হলো। ভয়ে চিৎকার করে জ্ঞান হারালাম। সকালে যখন জ্ঞান ফিরল, দেখলাম আমার পুরো শরীরে রক্তের ছিটা। সেদিনই আমি ওই বাসা ছেড়ে চলে এলাম। তবে স্মৃতির সঙ্গে ওই সাদা মূর্তি আজও আমায় তাড়া করে বেড়ায়।