টি-রেক্স রহস্য (প্রথম পর্ব)

অলংকরণ: সাদাত

হাইস্কুলের উদ্দেশে হনহন করে এগোচ্ছে কিশোর, মুসা আর রবিন। জুলাইয়ের ৩ তারিখ। সবার পরনে টি-শার্ট আর শর্টস। ফিতেয় বাঁধা বাঘা চলেছে সবার আগে আগে। কান দুটো ঝুলে পড়েছে ওর। পথে যা পাচ্ছে, শুঁকছে।

‘ইশ্‌, টনির সঙ্গে কখন যে দেখা হবে,’ বলল কিশোর, ‘তর সইছে না আমার।’

টনি হার্পার রাশেদ পাশার বন্ধুর ছেলে। মন্টানায় থাকে।

‘পোস্টকার্ডে বলেছে, আমাদের জন্য কী নাকি বিশাল এক সারপ্রাইজ আছে। কী, সেটাই তো বুঝতে পারছি না,’ বলল রবিন।

‘চিঠিটা পড়ে শোনাও,’ মুসা বলল কিশোরকে।

পকেট থেকে পোস্টকার্ডটা বের করল কিশোর। ওরা প্লিজেন্ট স্ট্রিটে থমকে দাঁড়াতেই জোরে জোরে পড়ল ও।

‘হাই,

কিশোর, মুসা, রবিন,

আমি জুলাইয়ের ৩ তারিখে গ্রিনহিলসে বিশাল এক সারপ্রাইজ নিয়ে হাজির হব। দুপুরবেলা আমার সঙ্গে হাইস্কুলের মাঠে দেখা কোরো। এখন বিদায়।

তোমাদের বন্ধু

টনি’

‘সারপ্রাইজটা হয়তো বড়সড় কোনো পিৎজা,’ বলল মুসা।

‘তুমি তা–ই দোয়া করতে থাকো,’ বলল রবিন।

‘ওই যে মি. থিয়োডর প্যান্ট,’ বলল কিশোর। সেন্টার পার্কের দিকে ঘুরে তাকাল। ওদের বন্ধু থিয়োডর প্যান্ট দাঁড়িয়ে গোলাপবাগানে। হাতে ওয়ার্ক গ্লাভস আর বেলচা। তাঁর কুকুর রুড সোয়ান পন্ডের হাঁসগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।

কিশোর ফিতে ছেড়ে দিতেই বাঘা দৌড়ে গেল খুদে কুকুরটার কাছে।

‘হাই, মি. প্যান্ট,’ ডাকল রবিন।

‘কী খবর তোমাদের?’ সাদাচুলো ভদ্রলোক বললেন, ‘কাল রাতে ফায়ারওয়ার্ক দেখবে না? সুইমিং পুলের পাশে ওরা সেটআপ করছে দেখলাম।’

‘আমরা সবাই যাব,’ বলল মুসা, ‘আপনি আর রুড যাবেন তো?’

‘আমি যাব,’ বললেন মি. প্যান্ট, ‘কিন্তু বুড়ো রুড বাসায় থাকতেই ভালোবাসে। শব্দ পছন্দ করে না ও।’

‘বাঘাও বাড়িতে থাকছে,’ জানাল কিশোর, ‘ও তো জন্মদিনের মোমবাতিও সহ্য করতে পারে না!’

মি. প্যান্ট মৃতপ্রায় এক গোলাপের চারা খুঁড়তে লাগলেন। পাতা কিংবা কুঁড়ি কিছুই নেই ওটার। ঠেলাগাড়ির ওপর তরতাজা একটা গোলাপের চারা দেখা গেল। নতুন পাতা চকচক করছে তার গায়ে।

‘নতুন চারাটা রোপণ করতে হাত লাগাতে চাও?’ ওদের উদ্দেশে প্রশ্ন করলেন মি. প্যান্ট।

ঘড়ি দেখল কিশোর।

‘চাই, কিন্তু আমাদের এক বন্ধু আসবে হাইস্কুলে। ওর সঙ্গে দেখা করতে হবে। ওর নাম টনি হার্পার। ভবিষ্যতে শিক্ষক হওয়ার জন্য পড়াশোনা করছে।’

‘মন্টানা থেকে আমাদের জন্য সারপ্রাইজ নিয়ে এসেছে,’ বলল রবিন।

‘এখানে বেশি সময় লাগবে না,’ মি. প্যান্ট বললেন। ঝটপট কাজ ভাগ করে দিলেন তিনি।

গর্তের ভেতর একমুঠো সার ঢালল রবিন।

কিশোর বেলচা দিয়ে গর্তে খানিকটা আলগা মাটি ভরল।

মুসা গর্তটায় পানি দিল গার্ডেন হোস দিয়ে।

‘আজ রাতে হয়তো বৃষ্টি হবে,’ মেঘের দিকে চোখ তুলে বললেন মি. প্যান্ট। নতুন চারাটা ঠেলাগাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গর্তে বুনলেন তিনি। লক্ষ রাখলেন, চারা যাতে সিধে হয়ে থাকে।

‘দারুণ দেখাচ্ছে,’ বললেন মি. প্যান্ট, ‘তোমরা তিনজন দুর্দান্ত গার্ডেনার। কিশোর, তুমি হুইলবারোটা শেডে রেখে এসো, আমি মাটি ভরছি।’

কিশোর বেলচাটা মি. প্যান্টের হাতে দিয়ে ঠেলাগাড়িটা ঠেলে নিয়ে গেল গার্ডেন শেডের কাছে। পুরোনো একটা স্ক্রুড্রাইভার দরজাটাকে আটকে রেখেছে। কিশোর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকিয়ে দিল হুইলবারোটা।

ঠাসাঠাসি অবস্থা ছোট্ট শেডটার। তাকগুলোয় রাখা পট, জার, সারের থলে, পেইল, বাগান–সংক্রান্ত বই ও যন্ত্রপাতি। ইটের মেঝেতে আঁকশি, বেলচা, গোটানো হোস আর গার্ডেনিংয়ের সরঞ্জাম।

শেডের পেছন দিকে একগাদা খালি বারল্যাপ ব্যাগের গায়ে ঠেলাগাড়িটাকে ঠেস দিয়ে রাখল কিশোর। এবার স্ক্রুড্রাইভারটা যথাস্থানে বসিয়ে চলে এল।

কিশোর অন্যদের কাছে যেই পৌঁছেছে, অমনি লাল একটা গাড়ি বাঁক ঘুরে হাইস্কুলের দিকে শাঁ করে চলে গেল। গাড়িটার হুডের নিচ থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছিল।

‘তোমাদের বন্ধু নাকি?’ মি. প্যান্ট প্রশ্ন করলেন, ‘মন্টানা থেকে ওটায় চেপে এসেছে?’

‘আমরা এখন যাই,’ বলল কিশোর, ‘টনির সঙ্গে দেখা করবেন, মি. প্যান্ট?’

‘এখন নয়,’ বললেন মি. প্যান্ট, ‘রুড আর আমি খেয়েদেয়ে একটু ঘুমাব। সাহায্যের জন্য তোমাদের ধন্যবাদ।’

ছেলেরা বাঘাকে নিয়ে লাল গাড়িটার উদ্দেশ্যে দৌড় দিল। ইতিমধ্যে থেমে দাঁড়িয়েছে ওটা। ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে লম্বা এক তরুণ। মাথায় কোঁকড়া কালো চুল। চওড়া কাঁধ। পরনে টি-শার্ট, কাট অফ জিনস আর লাল হাই-টপ স্নিকার্স।

‘এটা তো টনি নয়,’ বলল কিশোর। তরুণের দিকে এগিয়ে গেল ওরা।

চলবে...

আরও পড়ুন