শীতের অতিথি

ঢাকার একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে মানহা। ছোট বোন তানহা পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে। বছরে দুবার গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যায় ওরা। গরমের ছুটিতে দাদাবাড়ি, শীতে নানাবড়ি। গ্রীষ্মের বিভিন্ন ফল নিয়ে আসেন দাদা। শীতের সময় নানু বানান মজার মজার পিঠা।

এবার শীতে নানু ঠিক করেছেন বিভিন্ন রকম পিঠা বানাবেন। তাই জিনিস কিনতে বাজারে যাবেন নানা। মানহা ও তানহা বায়না ধরেছে, নানার সঙ্গে বাজারে যাবে। এক শর্তে নানা তাদের নিয়ে যেতে রাজি, জিলাপির দোকানে বসে গরম-গরম গুড়ের জিলাপি খেতে হবে। জিলাপির কথা শুনে তানহা বলে, ‘খাব খাব। গরম-গরম জিলাপি আমার খুব পছন্দ।’ মানহার মুখ ভার। হবে না! ও তো জিলাপি খেতে পারে না একদম। রস দিয়ে একবারে মাখিয়ে ফেলে শরীর।

নানা বুঝিয়ে বলেন, ‘জিলাপির রস পড়লে কিছু হয় না।’ মানহা বলে, ‘নানা, রসের গন্ধ পেয়ে যদি দল বেঁধে পিঁপড়া এসে আমাকে কামড় দেয়?’ মানহার কথা শুনে নানা বলেন, ‘কামড় দিতে এলে পিঁপড়ার কান মলে দেব।’ নানার কথা শুনে খুব কৌতূহল হয় তানহার। জানতে চায়, ‘পিঁপড়ার বুঝি কান আছে নানাভাই?’ ‘নেই বুঝি? তাহলে ওরা শোনে কেমন করে?’ মানহা বলে, ‘পিঁপড়া হাঁটু ও পা দিয়ে সবকিছু বুঝতে পারে, বুঝেছ নানাভাই?’ ‘হ্যাঁ বুঝেছি, এখন বাজারে চলো।’ বাজারে এসে অনেক কিছু কিনল ওরা। জিলাপির দোকানে বসে জিলাপি খেল। বাড়ি ফিরে দেখে, নানু চুলার পাশে বসে চিতই পিঠা বানাচ্ছেন। চারপাশে রাখা গরুর মাংসের ভুনা, শুঁটকি ও শর্ষের ভর্তা।

হাত-মুখ ধুয়ে তানহা গরুর মাংসের ভুনা আর মানহা শর্ষের ভর্তা দিয়ে খেতে শুরু করল। চুলা থেকে চিতই নামাতে নামাতে নানু বলেন, ‘কাল সকালে আলসেমি করে ঘুমালে চলবে না। না হয় ভাপা পিঠা খাবে কেমন করে?’ নানা হঠাৎ বলে ওঠেন, ‘ভাপা পিঠা একটু তাড়াতাড়ি বানিয়ে গো। পিঠা খেয়ে আমরা অতিথি পাখি দেখতে যাব।’ অতিথি পাখির কথা শুনে লাফিয়ে ওঠে মানহা তানহা। শর্ষে মনে করে ভুলে একটুখানি শুঁটকির ভর্তা খেয়ে ফেলে মানহা।

খুব ঝাল লেগেছে, তাই হাত দিয়ে মুখের সামনে বাতাস করে। একটুকরা খেজুরের গুড় বাড়িয়ে ধরে তানহা বলে, ‘গুড় খেলে ঝাল একদম চলে যাবে।’ মানহা গুড় খেতে খেতে নানুকে বলে, ‘কাল বেশি করে পিঠা বানাবে নানু। অতিথি পাখিদের জন্য নিয়ে যাব। অতিথি হয়ে এসে পিঠা খাবে না, এটা হতে পারে!’ মানহার কথা শুনে ভারি চিন্তায় পড়েন নানা-নানু। হাজার হাজার অতিথি পাখির জন্য এত পিঠা এখন কোথায় পাবেন!

জোয়াইরিয়া মেহেনাজ

অঙ্কুর সোসাইটি গার্লস হাইস্কুল, চট্টগ্রাম