মুনতাহা আপুর বাসা

অলংকরণ: মুগ্ধ

৬ জুলাই

রাহি আজ স্কুল থেকে আসার সময় ভাবল, একবার মুনতাহা আপুর বাসা থেকে ঘুরে আসা যায়। মুনতাহা আপু আগে তার প্রতিবেশী ছিল। এক মাস হলো বাসা বদলে “হাসান’স বিল্ডিং” নামের একটি বাড়িতে এসেছে। প্রতিদিনই স্কুল থেকে আসা–যাওয়ার পথে বাড়িটা দেখে মাহি। বেশ হাইফাই বাড়ি, ১২ তলা বিল্ডিং। লিফট আছে, বড় গ্যারেজ। রাহি আগেও একবার মুনতাহা আপুর বাসা পর্যন্ত গিয়েছে, কিন্তু দরজায় ইয়া বড় একটা তালা দেখে ফিরে এসেছে। পরে অবশ্য মুনতাহা আপুর আম্মুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল রাহির। বাসায় গিয়ে তালা দেখার কথা বলতেই আন্টি জানালেন, সবাই মিলে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তাঁরা।

আজ রাহি গ্যারেজে এসে দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করল মুনতাহা আপুরা বাসায় আছে কি না। লোকটা ইউনিফর্ম পরা। নেমপ্লেটে তাঁর নাম লেখা ‘ইউসুফ’। তিনি জানালেন বাসায় আছে মুনতাহা আপুরা। লিফটে উঠে বোতাম টিপল রাহি। লিফটে রাহি একাই যাচ্ছে সাততলায়। এই ফ্লোরে মুনতাহা আপুরা ছাড়া আর কেউ থাকে না। রাহি 7D দরজার সামনে গিয়ে বেল চাপতেই দরজা খুলে দিল মুনতাহা আপু। রাহিকে দেখে এতই খুশি হলো আপু যে ওকে জড়িয়ে ধরে খানিকটা ওপরে তুলে ফেলল। আন্টি-আঙ্কেলও বেশ খুশি রাহিকে দেখে। রাহি আর মুনতাহা আপু মিলে প্রায় এক ঘণ্টা গল্প করল। তারপর আন্টি ওদের খেতে ডাকলেন। এরই মধ্যে রাহির প্রিয় কোরমা–পোলাও রান্না করে ফেলেছেন! খাওয়া শেষ করে চলে যাওয়ার আগে মুনতাহা আপুর কাছ থেকে কিছু বই নিয়ে গেল রাহি। প্রায়ই মুনতাহা আপুর কাছ থেকে বই নিয়ে পড়ে সে। যাওয়ার সময় মুনতাহা আপু তাকে লিফট পর্যন্ত এগিয়ে দিল। রাহি বলল, পরের সপ্তাহে এসে বইগুলো ফেরত দিয়ে যাবে। আপু কিছু না বলে শুধু হাসল।

এক সপ্তাহ পর...

কোচিং শেষ করে মুনতাহা আপুদের বাসায় যাচ্ছে রাহি। সঙ্গে তার বন্ধু আহনাফ। আহনাফরা নতুন বাসায় উঠেছে। আহনাফদের নতুন বাসাটা মুনতাহা আপুদের বিল্ডিংয়েই। লিফটে উঠে আহনাফ ছয় নম্বর বোতাম চেপে রাহিকে জিজ্ঞাসা করল, ‘কত তলায় যাবে?’ সাত নম্বর বোতাম চাপল রাহি। সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাকাশে হয়ে গেল আহনাফের মুখ। ‘সাততলায় কোন বাসায় যাবে?’ ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করল আহনাফ। ‘7D’ বলল রাহি। আরও ভয় পেয়ে গেল আহনাফ। সে-ও রাহির সঙ্গে সাততলায় উঠল। মুনতাহা আপুদের বাসার দরজার সামনে আসামাত্র ফ্যাকাশে হয়ে গেল রাহির মুখ। দরজার সামনে পুলিশের কালো-হলুদ ‘DO NOT ENTER’ লেখা ফিতা লাগানো। আহনাফের দিকে তাকাল রাহি। আহনাফ বলল, এই মাসের ৪ তারিখ মুনতাহা আপুরা একটা বিয়ে থেকে বাসায় আসেন। সেই দিন রাতেই বাসার সবাই খুন হন। রাহি আবার জিজ্ঞাসা করল, ‘কত তারিখ বললি?’

‘৪ তারিখ।’ রাহির হাত কাঁপা শুরু হয়ে গেছে। দৌড়ে নিচে গেল সে। আহনাফও অনুসরণ করল তাকে। রাহি গ্যারেজে গিয়ে বিল্ডিংয়ের একজনকে জিজ্ঞাসা করল, ‘গত সপ্তাহে এখানে একজন দারোয়ান ছিলেন, তাঁকে দেখেছেন?’ লোকটি বলে, ‘দারোয়ানদের তো শিফটিং ডিউটি হয়, দারোয়ানের নাম বললে খোঁজ করতাম।’ রাহি একমুহূর্ত ভেবে বলল, ‘‘ইউসুফ।’ নাম শুনে বিস্মিত হয়ে লোকটি বলল, ‘উনি তো এক মাস আগেই মারা গেছেন। বয়স হয়েছিল, বার্ধক্যজনিত রোগে মারা গেছেন।’ চোখ ঝাপসা হয়ে আসে রাহির। ঝট করে তার ব্যাগ খুলে সে দেখে, ব্যাগে এখনো মুনতাহা আপুর বইগুলো আছে।